ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবসরপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লালের রাজকীয় বিদায়

 

ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবসরপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লালের রাজকীয় বিদায়


আমরা এমন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবিই দেখতে চেয়েছি, যেখানে ধর্ম বা পেশাগত পরিচয় মুখ্য নয়, ‘মানুষ’, ‘নিবেদিত কর্মী’ পরিচয়ই যথেষ্ট। শুধু এইটুকুর জন্যই তাঁকে সম্মান করা যায়।


তেমনি মানবিক বাংলাদেশের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। এই স্কুলের একজন ক্লিনার, বাবু শ্রী সন্তোষ লাল প্রায় ৩৫ বছর ধরে সেখানে কাজ করেন। ১৯৭৩ সালে সন্তোষ লালের মা সুন্দরী রাণী স্কুলের পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিয়ের পর তার স্বামী, মানে সন্তোষ লালের বাবা কানু লালও এই স্কুলের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব নেন। এরপর স্কুলের পরিচ্ছন্নকর্মীর দায়িত্ব নেন বাবু সন্তোষ লাল। বিয়ের পর তার স্ত্রী সনজু রাণীও এখানে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। 


প্রায় ৩৫ বছর কাজ করে অবসরে যাওয়ার সময় হয় বাবু সন্তোষ লালের। শরীরও আর সায় দিচ্ছিলো না। ভেবেছিলেন নিরবে নিভৃতেই চলে যাবেন। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার! এক সকালে শুনতে পেলেন তার অবসর উপলক্ষে স্কুল তাকে একটা বিদায় সংবর্ধনা দেবে। গিয়ে দেখেন, রীতিমতো হল সাজিয়ে, চেয়ার পেতে, ব্যানার টাঙিয়ে ঘটা করে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে! পুরো স্কুলে সাজ সাজ রব। ছেলে-মেয়েরা তার জন্য ছোটাছুটি করছে। শিক্ষকরাও ভীষণ ব্যস্ত অনুষ্ঠান নিয়ে।


বাবু শ্রী সন্তোষ লাল জানতে পারেন স্কুলের বর্তমান আর সাবেক ছাত্র-ছাত্রীরা চাঁদা তুলে এই আয়োজন করেছে। সেকি আয়োজন! বক্তৃতা, ব্যান্ড বাদ্য, স্কাউটদের গার্ড অব অনারের মধ্যদিয়ে সন্তোষ লালের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হলো। অনুষ্ঠানে প্রাক্তন শিক্ষক, পুরানো ছাত্র-ছাত্রীরা হাজির হয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন বাবু শ্রী সন্তোষ লালকে। আরও কত কত উপহার! আসবাবপত্র, দৈনন্দিন কাজে লাগে এমন সব জিনিস। সেই সাথে ৪ লাখ টাকা, যাতে তাঁর অবসর জীবনটা একটু হলেও নির্ভার কাটে। বিদায় সংবর্ধনা শেষে ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বাবু শ্রী সন্তোষ লালকে।


আমরা তো এই বাংলাদেশই চেয়েছিলাম। কোথাও কোনো বৈষম্য থাকবে না, যে যার কাজের কারণেই যথাযোগ্য মর্যাদায় সম্মানিত হবেন...



সূত্র: ফেসবুক

Post a Comment

0 Comments