হিন্দু ধর্ম প্রসঙ্গ রাজিক হাসানের ফেসবুক পোস্টের ছবি |
ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে হিন্দু ধর্ম অন্যান্য ধর্ম থেকে অনেকটা আলাদা। হিন্দু বহু দেবতা মানতে পারে, নাও মানতে পারে, উপনিষদের আত্মন ব্রহ্ম একাত্মানুভূমিতে তাহার মোক্ষের সাধন করতে পারে, নাও পারে, গীতার পরমপুরুষকে উপেক্ষা করে বৃন্দাবনের রসরাজকে হৃদয় আসনে বসাতে পারে, নাও পারে, সর্বভূতে দেবীকে শান্তিরূপে দেখতে পারে, নাও পারে, পূর্বজন্ম পরজন্ম মানতে পারে নতুবা স্বর্গ নরকে বিশাস করতে পারে অথবা উভয়ের সম্মিলনও করতে পারে। এক কথায় হিন্দুর ধর্ম বিশ্বাস কয়েকটি বিশেষ সঙ্ঘবদ্ধ সংকীর্ণ তত্ত্ব বা তথ্যে গন্ডীবদ্ধ নয়।
বহুত্ববাদ, তর্ক, বিশ্লেষণ, অপরের মত কে গুরুত্ব দেওয়া এই সবই তো আসলে হিন্দু দর্শনের মূলকথা, সোজা কথায় যত মত তত পথ। একটা সময় পরে সমস্ত হিন্দুই বুঝতে পারে জীবন যে ভাবেই কাটুক না কেন নিজের মধ্যে হিন্দু দর্শনের একটা মিথস্ক্রিয়া তার অজান্তেই চলছিল এবং এখন তা নানা চিন্তার জন্ম দিচ্ছে।
ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী শশী থারুর বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম সম্পর্কে আমাদের একটি গভীর বই দিয়েছেন। বইটির নাম "আমি কেন হিন্দু"। হিন্দু ধর্মে তাঁর নিজের বিশ্বাস দিয়ে শুরু করেছেন তিনি, তবে প্রচলিত নানা হিন্দু বিশ্বাস সম্পর্কে তাঁর অধ্যয়ন যে বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তাও এই বইটি পড়ে সহজেই বোঝা যায়।
তিনি আদি শঙ্কর, পতঞ্জলি, রামানুজ, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং আরও অনেক মানুষ, যারা হিন্দু ধর্মের দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তাদের নিয়ে কথা বলেছেন।
তিনি হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক মতগুলি যেমন অদ্বৈত বেদান্ত ইত্যাদি গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন নিজের মত করে, সহজ ভাষায়। পুরুষার্থ ও ভক্তির মতো হিন্দু দর্শনের গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং ধারণাগুলি গীতা ও বিবেকানন্দের একত্ববাদের মতের সঙ্গে তুলনা ও ব্যাখা করেছেন।
তবে সব থেকে বড় কথা হল, তিনি হিন্দুধর্মের সাধারণ বিশ্বাসী, সাধারণ মানুষেরা, যারা বাহ্যত দার্শনিক তত্ব নিয়ে মাথা ঘামান না কিন্তু অন্তরে একটা সার্বজনীন মানবতাবাদী ধারণা বহন করে চলেন, তাদের অনুশীলিত ‘অভ্যাসের হিন্দুধর্মের " অনুসন্ধান করেছেন, এটা কিন্তু পুঁথি নির্ভর ধর্ম দর্শন থেকে অনেক আলাদা।
রাজনীতি থেকে তিনি দূরে থাকতে পারেননি ! তিনি আধুনিক যুগে রাজনৈতিক হিন্দু ধর্মের অগণিত প্রকাশের দিকে নজর দিয়েছে, ডানপন্থী সংগঠন এবং তাদের অনুসারীদের বিশ্বাস করা হিন্দুত্বকে বিশ্লেষণ করেছেন, এর উত্থানের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য দীনদয়াল উপাধ্যায়ের দর্শনের বিশ্লেষণ করেছেন।
তিনি নির্দ্বিধায় উগ্র মতবাদী ‘ভক্তদের’ সমালোচনা করেছেন তবে তিনি এই বিশ্লেষণও করেছেন যে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারত বরাবরই বহুস্বরীয়, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ এবং বর্তমানে গণতন্ত্র হিসাবে টিকে আছে।
ফরাসি মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং দার্শনিক জাঁক লাকাঁ মানব মনোজগত গঠনের সঙ্গে ভাষার যে স্বরূপ দেখিয়েছেন সেখানে নানা উপকথার সঙ্গে মানুষের মনোজগতের গঠনের বিশেষ করে আনকনসাস মাইন্ড বা অচেতন-মনের সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে দেখলে তাই উপকথা বা পুরাণেও নতুন আবিস্কার আমরা দেখতে পাই।
বিজ্ঞানের জগতের শিশুরাও নতুন উপকথা শিখছে, পড়ছে। বিজ্ঞান আজ শুধুই ইন্দ্রিয় উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ খুঁজে বেড়ায় না। দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘প্রব্লেম অব ফিলোসফি’ গ্রন্থে এই ইন্দ্রিয় উপাত্তের সঙ্গে কোন কিছুর অস্ত্বিত্বের সম্পর্ক নেই তা দেখিয়েছেন, আবার বাইবেলের ঈশ্বর কে মেনে না নিয়ে লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “হোয়াই আই আম নট এ খ্রিশ্চিয়ান’।"
রাসেল সেখানে বলেছেন,
"দার্শনিক হিসাবে যদি আমাকে শুধু দার্শনিক শ্রোতাদের উদ্দেশে কথা বলতে হয়, তাহলে নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী বলা উচিত, কারণ আমি মনে করি না এমন কোন তর্কাতীত যুক্তি আছে যা দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, ঈশ্বর বা দেবতা নেই। অপর দিকে সাধারণ মানুষের ওপর যদি ঠিকঠাক রেখাপাত করতে চাই, তাহলে আমার বলা উচিত যে আমি নিরীশ্বরবাদী; কেন না যদি বলি দেবতা বা ঈশ্বর নেই প্রমাণ করতে পারি না, সঙ্গে আমাকে জুড়তে হবে-যে, খ্রিশ্চিয়ানদের ঈশ্বর বা হোমারের দেবতারা নেই - যা আমি প্রমাণ করতে পারি না।"
বার্ট্রান্ড রাসেলের "হোয়াই আই আম নট এ ক্রিশ্চিয়ান" এবং শশী থারুর "হোয়াই আই আম এ হিন্দু" বই দু'টির দার্শনিক ভিত্তি যথেষ্ট মজবুত এবং শক্তিশালী। বই দুইটি মানুষের চিন্তার জগৎ নাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। সেই সাথে আরও একটি বইয়ের কথা উল্লেখ করতে চাই, যে বইটির প্রচার তেমন না পেলেও বইটি মানুষের চিন্তার জগৎ আলোড়িত করার ক্ষমতা রাখে। বইটির নাম "হোয়াই আই এম নট আ মুসলিম",
লেখক ইব্ন ওয়াকার (Ibn Warraq) -
বইটির শুরুতে লেখা আছে,
Muslims are the first victims of Islam. Many times I have observed in my travels in the Orient, that fanaticism comes from a small number of dangerous men who maintain the others in the practice of religion by terror. To liberate the Muslim from his religion is the best service that one can render him.
এই বইটির আলাপ আরেকদিন হবে।
©রাজিক হাসান
--------
উক্ত পোস্টের কমেন্টে সজীব বিদ্যার্থী নামক একজন কয়েকটি পিডিএফ বইয়ের নাম দিয়েছে। সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে বইগুলি সাহায্য করবে। উল্লেখ্য যে, ১ নং লিংকটি কাজ করছে না। তবে, ২ ও ৩ নং লিংকে থাকা বই দুটি পড়া ও ডাউনলোড করা যাচ্ছে।
তাঁর মন্তব্যটি নিম্নরূপ:-
এই বইটিও চিন্তার জগৎ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে স্যার, আরো দুটো বই-
শ্রী সঞ্জীব নেওয়ার
Size : ৯০৯.৬ KB
পণ্ডিত সিদ্ধগোপাল কবিরত্ন
Size : 4 MB
0 মন্তব্যসমূহ