সাক্ষাৎকারে রানা দাশগুপ্ত: রাষ্ট্রপতি ও সামরিক বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে

সাক্ষাৎকারে রানা দাশগুপ্ত: রাষ্ট্রপতি ও সামরিক বাহিনীর প্রতি আমাদের আস্থা, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে
রানা দাশগুপ্ত

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশের সংখ্যালঘুদের বৃহত্তম সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পার্থ শঙ্কর সাহা।


প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৫২


প্রথম আলো: গতকাল ৫ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। আপনারাও বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করছেন বা তথ্য সংগ্রহ করছেন। সার্বিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।


রানা দাশগুপ্ত: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা শুধু ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেই হয়নি, এর আগের দিনও বেশ কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৪ আগস্ট দেশের অন্তত পাঁচটি জেলার সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর গতকাল শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ৩৯টি জেলায় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও কোথাও খুনের ঘটনা ঘটেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু মঠে-মন্দিরে হামলা বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর এবং দোকানপাট হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। অনেক জায়গায় সংখ্যালঘুরা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। কোথাও কোথাও আশপাশের লোকজন হুমকি দিচ্ছে তাঁদের। এর সঙ্গে চলছে অব্যাহতভাবে দখল। জমিজমা দখলের ঘটনাও ঘটেছে এরই মধ্যে।


প্রথম আলো: নানা পর্যায় থেকে তো এসব ঘটনা না ঘটনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।


রানা দাশগুপ্ত: হ্যাঁ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর—   তাঁরাও মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন কোনোরূপ হাঙ্গামা না করার জন্য। এমনকি পটপরিবর্তনের আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন সমন্বয়কও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি, এসব কোনো আহ্বানেই কোনো কাজ হচ্ছে না।


প্রথম আলো: এসব হামলার নেপথ্যে কারা আছে বলে আপনাদের ধারণা?


রানা দাশগুপ্ত: সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে একটি সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। আমি তাদের রাজনৈতিক পরিচয়টা পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছি না। কিন্তু এরা সেই গোষ্ঠী যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সহাবস্থানকে সব সময় বিরোধিতা করে এসেছে, তারাই। তাদের অত্যাচার বরাবরই চলেছে, এখনো চলছে। বর্তমান সময়ে তারা বিশেষভাবে আশকারা পেয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের জনমনে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে।


প্রথম আলো: এমন পরিস্থিতির ফলাফল কী হতে পারে?


রানা দাশগুপ্ত: আমার আশঙ্কা সংখ্যালঘুদের মধ্যে দেশত্যাগের একটা হিড়িক সৃষ্টি হতে পারে। আর এই অবস্থা চলতে থাকলে সেটা শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের কোনো দেশের জন্যই ভালো হবে না।


প্রথম আলো: এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা কীভাবে দেখছেন?


রানা দাশগুপ্ত: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো হয়নি। আর এ সময়ে যাদের কাছে সহায়তা চাইব, সেই থানা বা পুলিশ—তারাও তো শঙ্কিত। অনেক থানা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখন কার কাছে নিরাপত্তা চাইব? কোথাও কোনো সমস্যা হলে প্রথমে তো থানার কাছেই সাহায্য চাইতে হয়। হয়তো ওরা সময়মতো আসে বা পরে আসে। কিন্তু অন্তত তো আসে। এখন সেই অবস্থা নেই।


প্রথম আলো: এমন আন্দোলনের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটল বলে আপনার মনে হয়?


রানা দাশগুপ্ত: আমার মনে হয় এই আন্দোলনকারীদের মধ্যে শুরু থেকেই এ ধরনের ধ্বংসাত্মক একটা গোষ্ঠী ছিল। এরা আন্দোলনের মধ্যে ঘাপটি মেরেছিল। তারপর সুযোগ বুঝে এখন তাদের স্বরূপ প্রকাশ করছে। এই অপগোষ্ঠী চায়, সংখ্যালঘুরা এ দেশে না থাকুক। এদের টার্গেট সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শুধু নয়, সরকারি স্থাপনা এবং সর্বোপরি এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের যা কিছু অর্জন, সে সমস্ত বিষয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলো থেকে আমার এটাই মনে হচ্ছে।


প্রথম আলো: সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আপনার এখন সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা থাকবে?


রানা দাশগুপ্ত: প্রথম কথা হলো আমাদের আস্থা রাষ্ট্রপতির প্রতি এবং দেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি। সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের আস্থা ফেরানোর জন্য সামরিক বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা যেকোনো সভ্য দেশের দায়িত্ব। সংখ্যালঘুরা কোনো সংঘাতে জড়ায়নি, তবে তারা কেন এভাবে ভুক্তভোগী হবে দিনের পর দিন? এর অবসান হওয়া চাই।


সূত্র: প্রথম আলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ