ঐক্য পরিষদের তথ্য - দুদিনে শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা

ঐক্য পরিষদের তথ্য - দুদিনে শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা
ধ্বংসপ্রাপ্ত হিন্দু বাড়ি

সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেই কেন, প্রশ্ন শিক্ষক নেটওয়ার্কের


প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম



দুদিনে শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা


কাগজ প্রতিবেদক : বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।


এদিকে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর চলমান পরিস্থিতিতে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ কেন নেয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছে তারা। সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতা রুখে দেয়ার আহ্বানে রাজধানীর শাহবাগ থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষকরা।


গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই অভিযোগ তুলে ধরেন। এর আগে সাম্প্রদায়িক হামলাসহ সব ধরনের সহিংসতা রুখে দেয়ার আহ্বানে শাহবাগ থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষকরা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে দিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের সামনে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, কাজী মারুফুল ইসলাম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মি হোসেন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।


যেসব জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে :

ঐক্য পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতির বাসায়, খুলনা জেলার রূপসা থানার হাইসগাতী গ্রামের শ্যামল কুমার দাস ও স্বজন কুমার দাসের বাড়ি, জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিমান বিহারী অমিত ও যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি অনিমেষ সরকারের বাড়ি, জেলার দাকোপের বানিসান্তার আমতলীতে ইউপি সদস্য জয়ন্ত গাইনের বাড়িসহ জেলার কয়রার দাসপাড়ায় সংখ্যালঘু বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। দিনাজপুরের ফুলতলা শ্মশান ঘাট জোরপূর্বক দখল, পার্বতীপুর কালিমন্দিরসহ ৫টি মন্দিরে ভাঙচুর; জেলার সেতাবগঞ্জ বোচাগঞ্জে সংখ্যালঘুদের চিরিরবন্দর থানার ৯ নম্বর ইউনিয়নের ধল্লা গ্রামের সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। নরসিংদী জেলার পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা দীপক সাহা, লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জে গৌতম মজুমদার, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের আগরপুর গ্রামে নকুল কুমার ও সুশান্ত, চট্টগ্রামের রাউজানে উজ্জল চক্রবর্তী, যশোর জেলার অভয়নগরে ধোপাদি পালপাড়া গ্রামে ৩টি বাড়ি এবং কেশবপুরে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা এবং বাঘারপাড়া নারিকেল বাড়ীয়ায় চেয়ারম্যান বাবলু সাহার গোডাউনসহ ২২টি দোকান, যশোর সদরের বেচপাড়ায় ও বর্মণপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট; জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা ঐক্য পরিষদের তথ্য ও যোগাযোগ সম্পাদক কুমার চন্দ্র দাসের পদ্মপুকুরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট; সাতক্ষীরার কলারোয়ায় সংখ্যালঘুদের দোকানপাটে, জেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাধু, ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ এবং হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ বাজারে উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি অসিত বরণ দাসের দোকানে, নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে, বগুড়ার বড়গোলা তিলপট্টিতে সংখ্যালঘুদের ৫ থেকে ৭টি দোকানে, দুপচাচিয়া উপজেলার সাহাপুকুর গ্রামের ডা. গৌতম কুমার মন্ডলের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুবৃত্তরা। পটুয়াখালী-পীরগঞ্জের ২ নম্বর ইউনিয়নের শ্মশান মন্দিরে, কুয়াকাটায় রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং অনন্ত মূখার্জীর বাড়ি, পঞ্চগড় সদরে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, ঠাকুরগাঁও সদরে, ঝিনাইদহের চাকলাপাড়া পৌরসভায় জেলার কোটচাঁদপুর ও পাবনার বেড়া থানার হাতুড়িয়া, নীলফামারীর ডুমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়ন, টাঙ্গাইলের বড়কালীবাড়ী এলাকায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ঝালকাঠির সদরে সাংবাদিক দুলাল সাহার বাড়িতে, লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের অমিয় প্রসাদের বাড়ি, শরীয়তপুর সদরের ধানুকা মন্দির এবং আশপাশের সংখ্যালঘু বাড়ি-ঘরে, নোয়াখালীর হাতিয়ার সোনাদিয়ায় সহদেব রায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামল পালের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নেত্রকোনা সদরে রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকন মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর এবং সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, মুন্সিগঞ্জ সদরে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় হরিপদ দাসের বাড়িতে, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে রাম ডাক্তারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা।


এদিকে, ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাজালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্তের বাড়ি, সাতকানিয়া উপজেলা ঐক্য পরিষদের নেতা ইঞ্জিনিয়ার লিখন কান্তি দাশের পারিবারিক ফার্মেসি, বাঁশখালীর চাম্বলস্থ ইউনিয়নের সৌরভ নাথের বাড়ি, পতেঙ্গা থানার কাজল কান্তি লোদের বাড়ি, সদরের চকবাজারে ও রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রাম, দিনাজপুরের পার্বতীপুর সেনপাড়া, সদরের বড় বন্দর ও বীরগঞ্জ এলাকার সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ও দোকানপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।


দিনাজপুর সদরের ইসলাম পাড়ায় লাটু মোহন্তের বাড়ি, শেরপুর জেলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্যের বাড়ি ও জেলায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা গোপাল চন্দ্র সরকারের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নোয়াখালীর বসুরহাট উপজেলার চরহাজারী হারান মাস্টারের বাড়ি, মাগুরা সদর উপজেলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সঞ্জিব বিশ্বাসের বাড়ি, খুলনার কয়রা উপজেলার মালিখালী গ্রামে হিন্দু পাড়া, কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সাহা পাড়া, ময়মনসিংহের ফুলপুরের বালিয়া ইউনিয়নের ডুমকুল গ্রামের সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কাঠিপাড়া বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকানপাটে হামলা, মারধর, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসায়ী প্রদীপ দেবনাথের ২টি গাড়ি লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। জেলার তারাকান্দা উপজেলায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, বগুড়ার ভবানীপুরে শক্তিপিঠ মন্দির, পীরগাছায় পুষ্প কীর্তনিয়ার বাড়ি, বগুড়ার মধুপুর ইউনিয়নের হরিখালী বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকানপাট ও পার্শ্ববর্তী বাড়ি-ঘরে, বগুড়ার শিবগঞ্জের নারায়ণপুরে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। ফরিদপুর সদরে ডেঙ্গামারী ও কৃষ্ণপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ার লোকজনদের মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। জেলার মধুখালীর পুরবদি বাজারে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল থানার আরামপুর ও পুরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের দোকনাপাটে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট; বাগেরহাট সদরের ৪ নম্বর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পল্লব দত্তের বাড়ি, পিরোজপুর সদরের গোপালপুরের রায়েরকাঠিতে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট; পিরোজপুর সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গৌর নারায়ণ রায়চৌধুরী ও গোপাল চন্দ্র বসুর এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপ কুমার মৃধার বাড়িতে হামলা, জেলার নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠি বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকানপাটে, মানিকগঞ্জের ভালুকার গফরগাঁও রোডের মানিক নন্দীর বাড়িতে, খুলনা মহানগর ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহার গোডাউনে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ঢাকার সূত্রাপুরে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের পাশে সঞ্জয় ঘোষের ৩টি দোকান দখল করে নেয় দুর্বৃত্তরা। হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানায় কর্মরত পুলিশ সন্তোষ কুমারকে নির্মমভাবে হত্যা করে তার লাশের উপরে উঠে উল্লাস, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, বাঘারপাড়া ও ঝিকরগাছায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, যশোর সদরে কার্তিক পোদ্দারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, নীলফামারীর সদর উপজেলার ১১ নম্বর সোনারায় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অমূল্য চন্দ্র বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মেডিকেল মোড়ে কমল রায়ে দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, সিলেট সদরে ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক রকি দেবের বাসা, সদরের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদিশ চন্দ্র দাসের অফিস, ঝিনাইদহ সদরের চাকলাপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে, সদরে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা রাম চন্দ্র সরকারের বাড়িতে, পঞ্চগড় সদরের ১ নম্বর জোলই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্বপন দেবনাথের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুবৃত্তরা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদরের পূর্ব পাইকপাড়া কৌবৈল্লভোম আশ্রমে হামলা, পুকুরের ঘাট ভেঙে দখল করে নেয়া হয়েছে। বাগেরহাট সদর থানার রাখালগাছী ইউনিয়নের মৃণাল চক্রবর্তীতে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা, তার স্ত্রী ও মেয়ে মারাত্মকভাবে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। ঢাকার লালবাগের ঋৃষিপাড়ায়, পঞ্চগড়ের বোদা থানার পাঁচরির ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদিতে সুজন সাহার বাড়িতে, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গুপ্তি ইয়নিয়নে হিন্দু পাড়া, কুমিল্লার মুরাদনগরের রোহিতপুরের বণিক পাড়ায়, নড়াইল সদরের রোমদিয়া গ্রামে সুজয় বসুর বাড়িতে, লালমনিরহাটের হাতিভাঙ্গার গোদামারিতে কেষ্ট কুমার বর্মণের বাড়িতে, জেলার আদিতমারী উপজেলার শবদল গ্রামে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের তারাকান্দিতে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।


সূত্র: ভোরের কাগজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ