২০০৪ সালের কথা। মাত্রই বুয়েট থেকে পাশ করে চাকরি খুঁজছি। এদিকে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি, আর রশীদ স্যারের (যিনি কোভিডে মারা গেছেন) রুমে এক বড় ভাই তার মাস্টার্স এর থিসিস ডিফেন্স করার পরিকল্পনা করতে এসেছেন। তিনি একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ভার্সিটির লেকচারার। ডিফেন্স এর কথার এক ফাঁকে স্যারকে বললেন, তিনি ভার্সিটির চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। জয়েন করবেন সরকারি চাকরিতে (বিসিএস বিহীন)। আমি নাক গলায়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেনো ভাইয়া? দুইটাই তো সরকারী! বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিবেশ ভালো, ভবিষ্যতে সন্তান-সন্ততিদের গড়ে তোলাও সহজ। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই জনপদে তো সেসব সুবিধা নাই। আর বেতনও নিশ্চয়ই দুই দিকে সমান অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি।
তিনি আমাকে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরির থেকে ওই চাকরি কেনো ভালো সেই উত্তর আরো কিছুদিন পরে বুঝবে। তুমি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করছো। একদিন উত্তর পাবে।
আমি আসলেই উত্তর পেয়ে গেছি এর কিছুদিনের মধ্যে। আমি নিজে ১.৫ বছর চাকরি পাই নি ধর্মীয় কারণে। যেনো আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ম পড়াতে হবে, ম্যাচ করতেছিল না আমার সাথে, এরকম একটা ব্যাপার। তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করেছিলাম, প্রায় একই ঘটনা।
দুর্নীতি কতটুকু পৌঁছেছিল তখনই বুঝে গিয়েছিলাম। ডুয়েটের ঘটনাটা এরকম। মেকানিক্যালে ৩ জন লেকচারার নিয়েছিল আমাদের সময়। বাদ গেলো তাদের নিজেদের ফার্স্ট বয় কৃষ্ণ নাথ (সিজিপিএ ৩.৮০+), আর আমি (সিজিপিএ ৩.৭৩, ডুয়েট বাদে বাকী সব প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ)। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগেও আমার জানামতে সব সংখ্যালঘুরাই অচ্ছুত। আমরা পাপী মানুষ, বাংলাদেশ আমাদের জন্য না, এরকম একটা ব্যাপার।
আজ এখন ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সকল অপকর্ম, কুকর্ম হচ্ছে। যা যা ঘটনা চোখের সামনে আসছে খৈ ফোটার মতো, তা অবিশ্বাস্য! চারিদিকে শুধু অবিশ্বাস!
লেখা: Chandra Nath
0 মন্তব্যসমূহ