মুসলমানদের আরবি নাম প্রসঙ্গে - শায়লা খান বান্না

মুসলমানদের আরবি নাম প্রসঙ্গে - শায়লা খান বান্না

তৃতীয় বিশ্বের তিনটি মুসলিম দেশ বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। এদের কাজকর্ম, ধর্ম,পোষাকআশাক, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রায় সমপর্যায়ে। 

যদিও এইসব কর্মকাণ্ডে আফগানিস্তান বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের চাইতে একটু এগিয়ে আছে কিন্তু বাংলাদেশীদের নিরলস চেষ্টায় অচিরেই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্য পূরণ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। 

আরবী বাংলাদেশের মাতৃভাষা ভাষা না, আমরা আরবী বুঝিও না বলতেও পারি না। সৌদী আরবসহ বেশ কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের (ওরা মাতৃ নাকি পিতৃভাষা বলে জানি না) ভাষা। যেহেতু সৌদী আরবে মুসলিম ধর্মের গোড়াপত্তন ঘটেছে এবং মুসলিম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আরবী ভাষায় রচিত সেহেতু আরবী ভাষার প্রতি মুসলিম দেশগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশীদের( সব মুসলিম দেশ কিনা জানি না)  ভালোবাসা আকাশসম। 

 তারা নিজের মাতৃভাষায় দুটো শব্দ শুদ্ধ করে বলতে না পারলেও আরবী ভাষাটা শুদ্ধ করে বলবার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা  চালিয়ে যায়। 

সন্তানদের নাম রাখে আরবী শব্দে, কিন্তু তারা শব্দটার মানেই জানে না!

বেশকিছুদিন আগের কথা আমার এক আত্মীয় তার ছেলের খুব কঠিন এক আরবী নাম রেখেছে- 

বললাম শব্দটার মানে কি?

একটু থতমত খেয়ে বললো জানি না, নামটা সুন্দর লাগছে তাছাড়া এইটা  আল্লার প্রিয় আরবী শব্দ, সবাই খুব পছন্দ করছে। 

আমি সারাজীবনই ঠ্যাটা টাইপের মানুষ- বললাম ঠিক আছে সমস্যা নাই আমি এর মানে বার করতে পারবো। 

গুগল মুগল ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম শব্দটি আরবী ভাষার একটি অশ্লীল গালি। 

হাসতে হাসতে আমার জান শেষ, আর আমার সেই আত্মীয়ের মুখটাও হয়েছিল দেখবার মতো। 

পরে নামটা বদলে কি রেখেছিল জানি না। 

আমার ডাক্তার খালু সোদী আরবে চাকরি করতেন! 

খালা খালু দু’জনেই চাকুরিসুত্রে সৌদী আরব থাকতেন, এবং দেশে আসলে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় উঠতেন!

খালাম্মা সবসময়  সৌদির দৈনিক পত্রিকা দিয়ে  তাঁদের স্যান্ডেল জুতা নোংরা কাপড়ে  মুড়িয়ে নিয়ে আসতো। 

সেবার আমার এক কাজিন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল, আরবি লেখা কাগজে স্যান্ডেল মোড়ানে দেখে তার হার্টফেল করার অবস্থা- সে বার বার কাগজটা একবার মাথায় লাগাচ্ছিল, একবার চুমু দিচ্ছিল, তারপর বুকে লাগিয়ে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করেছিল। 

মনে আছে খালাম্মা বিরাট একটা ধমক দিয়েছিল ওকে বলেছিল- থাম,এটা একটা নিউজ পেপার, কোরান শরিফ না, আরবি হচ্ছে ওদের ভাষা এই ভাষায় ওরা গল্প লেখে কবিতা লেখে গালিগালাজ করে অশ্লীল কথাও বলে। 

বাংলাদেশের রাস্তাঘাটের আশেপাশে কোন বাড়ি বা অফিস আদালতের দেয়াল দেখলেই পথিকরা একে বাথরুম মনে করে প্রাকৃতিক কাজটা সেরে নেয়। 

প্রায়ই পথে যেতে খেয়াল করবে লেখা থাকে-


“এখানে প্রস্রাব করিবেন না, করিলে দণ্ডনীয় অপরাধ”। 


কিন্তু কখনই এই লেখাটা কোন সুফল বয়ে আনে নি। 

মানুষজনেরা লেখাটার উপরে নির্ভিগ্নে  জলবিয়োগের কাজটি করে গেছে। 

কিন্তু সেদিন অভুতপূর্ব একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিল মিউনিসিটি, মানুষের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে। 

 ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না’ এই লাইনটি বাংলায় না লিখে আরবিতে লিখে দিল। 

ব্যস ডান!!

আর কারো সাহস হয়নি সেই দেয়ালে জলবিয়োগ করার।  

আসলে বাংলদেশীদের নিজস্বতা বলে কিছু নেই ধার করা জিনিসে চলতে চলতে কেমন কিম্ভূতকিমার এক

জাতিতে পরিণত হয়ে গেছে। 

বিজাতীয় ভাষায় বিজাতীয় পোষাকে  আচ্ছাদিত হয়ে নিজেদের অস্তিত্বই ওরা ভুলে যেতে বলেছে। 


 “নিজেরে করিতে গৌরব দান

নিজেরে কেবলই করি অপমান”।


সূত্র: লেখিকার ফেসবুক পেজ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ