রাম মন্দির উদ্বোধনপূর্ব অনুভূতি - স্বাগতা মন্ডল
দেবতাদের রাজা ইন্দ্র। বহু যুদ্ধে অসুর বিনাশ করে, সুরলোক উদ্ধার করে তবেই সিংহাসনে বসার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন অদিতি ও কাশ্যপের পুত্র বারোজন আদিত্যর একজন এই দেবতা।
তবে অসুর বিনাশ করতে ইন্দ্রের প্রয়োজন হয়েছিল বজ্র। ইন্দ্র দেবতাদের রাজা। ইন্দ্র পান যজ্ঞের আহুতির ভাগ। সবাই জানে ইন্দ্র অপরাজেয় কারণ ইন্দ্রের হাতে আছে বজ্র। কিন্তু কজন জানে ইন্দ্রের আয়ুধ বজ্র তৈরি হয়েছে দধীচির হাড় দিয়ে?
বৃত্রাসুর বধ করতে কেবল ইন্দ্রের প্রয়োজন হয় নি। প্রয়োজন ছিল দধীচির মতো ব্রহ্মজ্ঞ ঋষির আত্মত্যাগের। প্রতি যুগে অসুর বিনাশ হয়ে ধর্ম স্থাপন হয়। কিন্তু তার আগে প্রয়োজন হয় যুদ্ধের। প্রয়োজন হয় যুদ্ধের অস্ত্র নির্মাণের। যেমন তেমন অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না। অস্ত্র তৈরি করতে দধীচির হাড় লাগে।
জগতের ভালোর জন্য দধীচি হাসতে হাসতে স্বহস্তে রচিত অগ্নিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। স্বামী দধীচির স্ত্রী হয়েছিলেন তাঁরই অনুগামী। পিতা দধীচির সন্তান পিপ্পলাদ অনাথ অবস্থায় পিপুল গাছের নীচে কেবল ভাগ্যের সহায়তায় প্রাণ পেয়েছেন।
এই মাসেই রাম মন্দির উদ্বোধন হবে। সারা পৃথিবী জুড়েই উৎসবের আয়োজন। এই অকাল দিওয়ালির প্রাক্কালে বহু যুদ্ধের পরে উদ্ধার হওয়া ভূমির প্রতিটি ধূলিকণায় লেখা আছে বহু দধীচির আত্মত্যাগ। যে সব করসেবকরা তাদের পরিবারকে একা করে, স্ত্রীকে স্বামীহীন করে, সন্তানকে অনাথ করে রামের কাজ করতে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন তাদের কথা চিরকাল বিশ্বের সমস্ত হিন্দুর মনে রাখার দায়িত্ব।
ইন্দ্রের সিংহাসন বদলায়, যুগান্তরে ইন্দ্র বদলায়, অসুর নতুন রূপে ফিরে ফিরে আসে, প্রতি যুগ সন্ধিক্ষণে যুদ্ধ হয়, অসুর বিনাশ হয়, ধর্ম সংস্থাপিত হয়। দধীচির আত্মত্যাগের মহিমা ভারতের হৃদয়ে অক্ষয় হয়ে থেকে যায়।
ইন্দ্র যে কেউ নিজগুণে হতে পারে। ধর্ম স্থাপনের জন্য অখ্যাত থেকে প্রাণ বিসর্জন করার দম সবার হয় না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ভারতের মাটির ঋণ শোধ করতে দধীচি হয়ে জন্মাতে পারি। প্রতিবার যেন জন্মাতে পারি।
🖋️ স্বাগতা মন্ডল
0 মন্তব্যসমূহ