ক্রিকেটার লিটন কুমার দাশের জামাই ষষ্ঠীর ছবি ফেইসবুকে শেয়ার করার পর সেখানে তাকে গরুর মাংস খেতে দেয়নি কেন- এরকম সাম্প্রদায়িক মন্তব্য, অযাচিতভাবে সেই পোস্টে ‘ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম’ জাতীয় কমেন্টের সংখ্যা থেকে ভালো কমেন্টের সংখ্যা অনেক। পার্সেন্ট ধরলে খারাপ সাম্প্রদায়িক কমেন্টের সংখ্যা এক পার্সেন্টও না। বরং প্রচুর মুসলিম নামের আইডি থেকে লিটনের সঙ্গে মজা করে কমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যত এই সংখ্যাতত্ত্ব কিন্তু শুভংকরের ফাঁকি তৈরি করতে পারে। খুব সহজেই এর ভিত্তিতে কেউ দাবী করতে পারেন, গুটি কয়েক সাম্প্রদায়িক মানুষজনের জন্য পুরো দেশকে সাম্প্রদায়িক বলা ঠিক নয়। আমাদের আসলে তাই কোন সংখ্যাতত্ত্বে না গিয়ে কিছু প্রশ্ন সরাসরি তোলা উচিত। যে প্রশ্নের মধ্যেই আসলে আছে উত্তর!
প্রশ্ন হচ্ছে সাকিব, মাশরাফি, মুশফিকদের ঈদের শুভেচ্ছা জানানো পোস্টে কি একটিও খারাপ সাম্প্রদায়িক কমেন্ট থাকে? কেউ বলে ভাই শূকরের মাংস দিয়ে আজকে ঈদের খিচুরি খান? কেউ বলে একমাত্র সত্য ধর্ম অমুক তমুক? যদি ধরেন বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু তাই ভয়ে এরকম কমেন্ট করতে পারে না, তাহলে ভারতের মুসলিম ক্রিকেটারদের ঈদের পোস্টে কেন সাম্প্রদায়িক কমেন্ট পড়ে না? উল্টো জাহির খান, মোহাম্মদ কাঈফের ক্রিসমাসের পোস্টের নিচে শত শত মুসলমান তাদেরকে আক্রমন করেছে এই লিখে, কেন তারা মুসলিম হয়ে সান্তাক্রুজের টুপি পরে ক্রিসমাস ট্রির সামনে ছবি তুলেছে? দিয়ালীর পোস্টে অনুরূপভাবে তাদেরকে তারা যে ‘মুসলিম’ সেই কথাটি স্মরণ করে দেয়া কমেন্টের সংখ্যা অনেক। এরকম কমেন্ট বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকেই আসে না- ভারতের মুসলিমরাও অবাধে করছে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে লিটন ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিয়মিত পোস্ট দিলেও তার সহখেলোয়াড় সাকিব মাশরাফি মুশফিক কোনদিন পুজার শুভেচ্ছা জানিয়ে, পুজার ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছে? আমি গুগলে ‘সাকিব তামিমদের দুর্গা পুজায় শুভেচ্ছা’ লিখে সার্চ করে একটি নিউজ বা ফেইসুব পোস্টের লিংক পাইনি। আমি বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটারকে সোশাল মিডিয়াতে ফলো করি না। এদের পোস্ট দেখলেই একটা গা ঘিনঘিন অনুভূতি হয়। সাপ্তাহান্তে এদের জুম্মা মোবারকের ছবি দেখতে হবে, হজের ছবি, নিনজা স্টাইলের বোরখা পরা বউয়ের সঙ্গে সেলফি দেখার চাইতে গা ঘিনঘিন আর কি আছে? ফলে তাদের পুজা, বড়দিনের উদযাপন বা শুভেচ্ছা বার্তার কোন খবর আমি সোশাল মিডিয়াতে পাইনি। এমন কি কুমিল্লাতে দুর্গাপুজায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার পর সাকিব-মুশফিকদের কি কোন প্রতিবাদী পোস্ট ছিলো? ভক্তরা কি জানেন এরকম কোন এক্টিভিটি তাদের কোনকালে ছিলো কিনা? তাদের কোটি ভক্ত আছে যারা ধর্মে হিন্দু। সেই ভক্তদের তারা শুভেচ্ছা জানায়নি প্রধানত দুটি কারণে হতে পারে- তারা বিশ্বাস করে বিধর্মীদের উত্সবে শুভেচ্ছা জানানো ইসলামে নিষেধ, কারণ ক্রিকেটারদের ইজতেমার ছবিতে দেখা গেছে তারা কয়েকজন তারকা মৌলবাদী জঙ্গিবাদী আলেমের ফ্যান! ফলে এই বিশ্বাস তাদের পক্ষে করা খুবই স্বাভাবিক। আরেকটি কারণ হতে পারে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে তারা এরকম পোস্ট দেয় না। এবার লিটনের পোস্টে করা সাম্প্রদায়িক কমেন্টের পরিমাণ দিয়ে এগুলোকে ভাগ করে দেখুন কি পান!
মনে রাখবেন সাম্প্রদায়িকতার অনেকগুলি প্রজাতি রয়েছে। একটা হচ্ছে ডাইরেক্ট সাম্প্রদায়িকতা করে দেথাবে। অন্যের ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করবে। আরেকটা প্রজাতি বলবে, ওদের মিথ্যা ঈশ্বর প্রতিমা নিয়ে খারাপ কথা বললে ওরা পাল্টা আমাদের সত্যি ধর্ম নিয়ে খারাপ কথা বলবে তাই কটুক্তি করা উচিত নয়। এটা প্রখমটির থেকে মন্দের ভালো কিন্তু অবস্থান কিন্তু ঘোর সাম্প্রদায়িক। খুব কম লোকই জিহাদ করতে ঘরছাড়ে। কিন্তু কেরেলা স্টোরী সিনেমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিশ্বাসী মুসলমানই! আফগানিস্থানে জিহাদ করতে বাংলাদেশ থেকে শ’খানেক লোকও যোগ দেয়নি। কিন্তু আফগানিস্থানে দ্বিতীয়বার কওমী হুজুররা ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যাগরিষ্ঠরাই উল্লাসে ফেটে পড়েছিলো। সাকিব-তামিম হতে খুব কম বাবা-মাই তাদের সন্তানদের পাঠায় কারণ সেখানে অনিশ্চিয়তা আছে। কিন্তু সকলেই সাকিব-তামিমদের হিরো মানে! এটাই হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্বের ভেতরের খবর!
সুত্র: সুষুপ্ত পাঠক
====
আরও পড়ুন
0 মন্তব্যসমূহ