প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:০৫
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন। এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছিলেন। আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু করা হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই মসজিদগুলোতে ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এছাড়া হাজিদের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, লাশ দাফনের আগের প্রস্তুতি, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ রয়েছে। ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামি বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে।
শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ খ্রি. তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে উক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করার জন্য ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা ব্যয়ে এপ্রিল, ২০১৭ হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদে ১ম প্রকল্প অনুমোদিত হয়। সংশোধিত অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী মডেল মসজিদের জন্য ৪০ শতাংশ যায়গা নির্ধারণ করা হয়। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্মিত। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার। উপজেলায় ১৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার আয়তনের ‘বি’ ক্যাটারির মসজিদ ৪৭৫টি। আর উপকূলীয় এলাকা ২০৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার আয়তনের ‘সি’ ক্যাটাগরির মসজিদ ১৬টি। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার মসজিদগুলোতে একসঙ্গে এক হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। অপরদিকে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। এসব মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এর বাস্তবায়ন এবং দেশব্যাপী শক্তিশালী ইসলামি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা। সারাদেশে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান চালু করা। সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পুরুষ-নারী মুসল্লিদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টি করা। ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার করা এবং সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য সমর্থন সৃষ্টি করা।
ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আজ সারাদেশে বিস্তৃত হচ্ছে এবং ওলামাদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামি মূল্যবোধ প্রচার-প্রসারে বর্তমান সরকার যে অবদান রেখেছে, তা সমকালীন মুসলিম দুনিয়ার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে চিরকাল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, বেতার ও টিভিতে কোরআন তিলাওয়াত ও তরজমা পেশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ, বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) উদযাপন এবং মদ, জুয়া ও লটারি নিষিদ্ধ করা ছিল বঙ্গবন্ধুর উল্লেখযোগ্য অবদান।
ইসলামের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ এক অধ্যাদেশবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২৮ মার্চ ১৯৭৫ সালে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ এ্যাক্ট প্রণীত হয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। সুপ্রাচীনকাল থেকে এ দেশে ইসলামি আদর্শ ও মূল্যবোধের লালন ও চর্চা হয়ে আসছে। বর্তমানে ৬৪টি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শাখা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে; বিশেষ করে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ধর্মপ্রাণদের সেবায় নিবেদিত হয়ে কাজ করছে। লাখ লাখ শিশু নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ইসলামি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং এর সফল প্রচার-প্রসারের জন্য মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার। বর্তমান আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়েছে। মাদ্রাসাগুলো সরকারি দান-অনুদান, মাদ্রাসা বোর্ড ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান করছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মাঝে স্থান করে নেন। এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।
ইসলাম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকার ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাদরাসা শিক্ষাধারার ফাজিল/স্নাতক ও কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি প্রদান করা হয়। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, ফাজিল/স্নাতক, কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর পরিবীক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধান করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৩১টি কামিল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্রসারণ, সুউচ্চ মিনার নির্মাণ, মহিলাদের নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি শেখ হাসিনার সরকার প্রদান করেছে।
পরিশেষে বলছি, ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার যুগান্তকারী অবদানের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।
সূত্র: ঢাকা টাইমস
0 মন্তব্যসমূহ