নড়াইলের কালিদাস পুকুরের নাম পরিবর্তনের চেষ্টাকে সমর্থন জানিয়ে যতগুলি পোস্ট দেখেছি তার সবগুলোই বামপন্থীদের লেখা! তারা বলছে অত্যাচারিত জমিদারদের নামে কোন স্থাপনা, জায়গা, প্রতিষ্ঠানের নাম রাখাই উচিত না। রক্তচোষা কৃষক নিপীড়ক এইসব জমিদারদের নাম মুছে ফেলা হোক...।
তাহলে তো ‘নবাব সলিমুল্লাহ রোডের’ নাম পরিবর্তন করা উচিত? ঢাকার নবাব ছিলো ইংরেজের একটা পা-চাটা গোলাম। এক লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে ‘মুসলিম লীগ’ বানিয়েছিলো। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিভেদ সৃষ্টিতে এই ঘুষ দেয়া হয়েছিলো। ঢাকার নবাব বাড়িতে কি ছাতা মাথায় দিয়ে বুক টানটান করে হাঁটতে পারত কমরেডরা?
তারা মুসলমান বলেই কি ‘রক্তচোষা শোষক’ ছিলো না? মানে হিন্দু জমিদার খারাপ আর মুসলমান জমিদার ভালো?
আহসান মঞ্জিলটাও ভেঙ্গ ফেলা উচিত! কারণ এক বামাতী কালিদাস পুকুরের নাম পরিবর্তনকে জায়েজ করতে উদাহরণ দিয়েছে তাদের খলিফা জনাব লেনিন সাহেব রাশিয়ায় জারের সমস্ত ইতিহাস মুফে ফেলেছিলো। সব গুঁড়িয়ে দিয়েছিলো। সেই উদাহরণ বাস্তবায়ন করতে হলে আহসান মঞ্জিল তো আর আস্ত থাকে না! তারাও তো কৃষকের পাট বেচা টাকায় বাঈজি নাচাতো! নাকি মুসলমান বলে সে পাপ মাপ?
জ্বি না, বামাতীরা এসব করবে না আমি জানি। কারণ বামাতীরা ‘মানসিকভাবে মুসলমান’ হয়।
তাদের সমস্যা কেবল হিন্দু জমিদারে! পূর্ববঙ্গের কোলকাতা নিবাসী হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ থাকলেও হায়দ্রাবাদের নবাবদের প্রতি তাদের ভালোবাসা বুক ভরা!
আজকে ভারতের নবাদের নামের কোন স্থানের নাম যদি পরিবর্তন করা হয় তখন এই বাঙ্গু কমরেডদের আহাজারীতে ফেইসবুকে টেকা দায় হবে!
জমিদারদের প্রতি এদের এতখানি ঘৃণা অথচ ‘মুসলিম উপনিবেশ’ যুগকে এরা অস্বীকার করে!
ভারতের মুসলিম শাসন যে ‘মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ’ ছিলো সেটি তো স্বীকার করেই না উল্টো সেই শাসনের ইতিহাসকে গৌরব করতে এদের কোন আপত্তি নেই!
এদের একমাত্র প্রতিপক্ষ হচ্ছে ইংরেজ আর হিন্দুরা! ঢাকার নবাবকে নিয়ে আপনি এদেরকে কোনদিন বিদ্বেষ প্রকাশ করতে দেখবেন না কিন্তু বিদ্যাসাগরকে এরা ইংরেজদের দালাল বলবে!
ইংরেজদের দেয়া নাইট উপাধি বর্জন করা রবীন্দ্রনাথকে এরা ইংরেজদের দালাল বলতে আগ্রহী কিন্তু ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ এক লাখ টাকার ঋণ তথা ঘুষ গ্রহণের পরও নবাব সলিমুল্লাহ তাদের চোখে ইংরেজ উপনিবেশকালে মুসলমান সমাজের প্রতিনিধি!
কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অধিকার নিয়ে যে বিপ্লব, শ্রেণীশত্রু, প্রলেতারিয়েত, বুর্জোয়া, পুঁজিবাদী... এইসব শ্রেণী বিভাগ থেকেও ভয়ংকর কাল্টের জন্ম হয় ইতিহাস সাক্ষি।
৪৬ সালের নোয়াখালী ম্যাসাকার কৃষক প্রজা পার্টির নেতা পীরজাদার হাতে ঘটেছিলো।
জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন শেষে হিন্দু কিলিংয়ে রূপ নেয়।
জমিদার বাড়িতে হামলা করে হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পর সাধারণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে এই ম্যাসাকার ছড়িয়ে দেয়া হয়। ফেইসবুকে যেসব বামাতী দেখেন এদের প্রায় সকলেই হিন্দু বিরোধী।
এই বিরোধীতা কখনো ‘ভারত’ মোড়কে কখনো ‘বিজেপি’ মোড়কে ছড়ানো হয়।
যেন তারা সাধারণ হিন্দুদের বিরুদ্ধে না। অথচ সাধারণ হিন্দুদেরকে এরা বিজেপির এজেন্ট হিসেবে ট্যাগ করছে ইদানিংকালে। এদের মতের অমিল হলেই সে ভারতের এজেন্ট! এক বামাতী পরামর্শ দিচ্ছে, বাংলাদেশের হিন্দুদের উচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সঙ্গে ঘৃণা ত্যাগ করে মিশতে...।
অর্থ্যাত, হিন্দুরাই এইদেশের সাম্প্রদায়িকতার মূলে! তারাই ঘৃণা প্রকাশ করে মুসলমানদের প্রতি! একজন লিখেছে, ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য’ পরিষদ মৌলবাদী সংগঠন! এরাই ফুরফুরা শরীফের সঙ্গে জোট করলে ঢাকার কাওরান বাজারে উল্লাস প্রকাশ করা হয়! আপনার পরিবারে এই রকম বামাতী কাল্ট তৈরি হলে সতর্ক থাকুন। এরা ইসলামিক জঙ্গিদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
©সুষুপ্ত পাঠক
0 মন্তব্যসমূহ