২০০৯ সালের ২৯শে অক্টোবর কেরালা হাইকোর্টে একটি মামলা হয়-- শাহান শাহ ভার্সেস কেরালা। ব্যাপক আলোচিত সেই মামলাটির মূল আসামী শাহান শাহ ও সিরাজুদ্দিন। সেখানে ভুক্তভোগী হিসেবে দুই তরুণীর নাম আসে যাদের একজন হিন্দু, অপরজন খৃস্টান। আদালত ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করেনি। অভিযোগ ছিলো, প্রেমের ছলনায় ঐ দুই তরুণীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। যেহেতু ২০০৬ সাল থেকেই একের পর এক অভিযোগ জমা হচ্ছিলো পুলিশ ও আদালতে, তাই কেরালা হাইকোর্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে বের হয়ে আসে, আসামীরা সবাই পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া বা পিএফআই নামক একটি দলের সদস্য ছিলো এবং দলটির 'সত্যসারণী' নামক একটি এনজিও'র মাধ্যমে ধর্মান্তরের কাজ করে চলেছে ১৯৯২ সাল থেকেই।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ কান্ডের পরপরই প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (এনডিএফ)। ২০০১ সালে আরেকটি সংগঠন তৈরী হয়, যার নাম কর্ণাটকা ফোরাম ফর ডিগনিটি (কেএফডি)। ২০০৬ সালে এই দুটি সংগঠন একত্রিত হয়ে গঠিত হয় পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)। 'শিক্ষা, চিকিৎসা, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য' নিয়ে যাত্রা করা এনডিএফ ও কেডিএফ অর্ধশতাধিক ছোট-বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, হাসপাতাল তৈরী করে যার একমাত্র সুবিধাভোগী ছিলো মুসলমানরাই। পিএফআই'র সবচেয়ে বড় সংগঠন ছিলো সত্যসারণী ট্রাস্ট। এই ট্রাস্টের মাধ্যমেই মূলত ধর্মান্তরের কাজগুলো পরিচালিত হতো। লক্ষ্যণীয়, কেডিএফ ও সত্যসারণী মূলত আন্তর্জাতিক জিহাদী সংগঠন আহলে হাদিসের মত ও পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়। শুরু থেকেই অভিযোগ ছিলো, এই সমাজসেবার আড়ালে মূলত মগজ ধোলাইয়ের কারখানা চালাচ্ছে সংগঠনগুলো। কিন্তু রাজ্যের ক্ষমতায় যেহেতু বামপন্থী ও কংগ্রেস, সেসব অভিযোগ ২০১০ সালের আগে আমলে নেয়া হয়নি মোটেই।
২০১০ সালে জুলাইয়ে 'নবীর অবমাননার অভিযোগে' কেরালার একটি কলেজের শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করে কিছু লোক। গ্রেপ্তারের পরে দেখা যায়, এরা সবাই পিএফআই'র সদস্য। এর পরে রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রের এ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) অভিযান চালায় কেরালাস্থ পিএফআই'র বিভিন্ন দপ্তরে এবং সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বোমা ও বোমা তৈরীর সরঞ্জামাদি, দেশীয় ও স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, শরীয়াহসম্মত শাস্তির ভিডিও, তালেবানী প্রশিক্ষণের ভিডিও ও পুস্তিকা, ভারতবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী নানান বই সহ অসংখ্য জিহাদী ডকুমেন্ট। পরবর্তীতে রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালাইসিস উইং -এর তত্ত্বাবধানে সারা ভারতেই অভিযান চালায় পুলিশ ও এটিইউ এবং উদ্ধার করে একই ধরনের নানান প্রমাণাদি।
একই বছর ২৪ জুলাই তৎকালীন রাজ্য মূখ্যমন্ত্রী ভি.এস অচুতানন্দন (কমিউনিস্ট পার্টি) দিল্লীতে এক সাক্ষাৎকারে জানান যে, পিএফআই ২০৩০ সালের মধ্যে কেরালাকে ইসলামিক স্টেট বানাতে কাজ করছে। একই সময়ে তিনি এ্যাসেম্বলিকে জানান যে, এই অপকর্মে বিদেশ থেকে ফান্ডিং পাচ্ছে পিএফআই এবং যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয় কেরালার অবস্থাও কাশ্মীরের মতো হবে।
২০১১ সালের আগস্টে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) আটক করে শিনা ফারজানা ও নাসিরকে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, উভয়ে ভারতে ইসলামিক স্টেটের হ্যান্ডলার হিসেবে কাজ করছে এবং ধর্মান্তরের মাধ্যমে নতুন নতুন তরুণ-তরুণীকে রিক্রুট করে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকে পাঠানোই তাদের কাজ। লক্ষ্যণীয়, তারা উভয়েই সত্যসারণী ট্রাস্টের সদস্য।
২০১১ সালে আব্দুল রাশেদ আব্দুল্লাহ প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করে সোনিয়া সেবাস্টিনকে। পরবর্তীতে তদন্তে পাওয়া যায়, রাশেদ মূলত আইসিস'র কেরালা হ্যান্ডলার হিসেবে কাজ করতো। এই কাজে তার আগের বউ ফারহিন ইয়াসমীনও সহযোদ্ধা ছিলো। আব্দুল ও ইয়াসমিন কেরালায় ১০টা স্কুল বানায় যেখানে টার্গেট করে করে ফাঁদ পাতা হতো এবং ধর্মান্তরিত করা হতো। তাদের সমস্ত অপকর্ম চলতো পিস এডুকেশনাল ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে। ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ২২ জন হিন্দু মেয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত ও পাচার করে আব্দুল-ইয়াসমীন গং।
২০১২ সালে কেরালা এ্যাসেম্বলিতে তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী ওমান চান্ডি (কংগ্রেস) একটি প্রতিবেদন পেশ করেন, যেখানে দেখা যায়, ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যেই ৭৭১৩ ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেছে কেরালায়। শুধু ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যেই ধর্মান্তরিত হয়েছে ২৬৬৭ মেয়ে, যার মধ্যে ২১৫২ জন হিন্দু, বাকিরা খৃস্টান। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ২৮০০ থেকে ৩২০০ তরুণী ও যুবতীকে মুসলমান বানানো হয়েছে, যাদের অনেকেই নিখোঁজ।
২০১৬ সালে কেরালা পুলিশ একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যাতে বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৫৭৯৩ জন ধর্মান্তরিত হয়েছে, যাদের মধ্যে ৪৪০৩ জনই মেয়ে, যাদের ৩৯৬৪ জন হিন্দু।
২০২১ সালে উপ-মহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ও প্রভাবশালী গির্জা সাইরো মালাবার চার্চের বিশপ একটি প্রতিবেদন প্রদান করেন এনআইএ এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২১ সালে ১২১ জন খৃস্টান তরুণী ধর্মান্তরিত হয়েছে, যাদের ২১ বিভিন্ন মুসলিম গোষ্ঠীর হাতে পাচার হয়ে গিয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারীতে ৮ জন আটক হয় এনআইএ'র হাতে। তদন্তে জানা যায়, এরা সবাই আইসিস'র হ্যান্ডলার হিসেবে কাজ করতো। তদন্ত শেষে এনআইএ রিপোর্ট দেয় যে, কেরালায় আইসিস'র স্লিপার সেল অত্যন্ত প্রবল এবং তারা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করছে অনেককেই। আরো বলা হয়, রাজ্যটিতে অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ চলে মূলত এইসব স্লিপার সেলগুলোর সহায়তায়ই।
কেরালার বাদে বাকি রাজ্যগুলোর কি অবস্থা? ছোট্ট একটি উদাহরণ দেয়া যায় এই প্রসঙ্গে।
২০১০ সালে হায়দ্রাবাদ নিবাসী আয়েশা জাবীন ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলে 'ইসলাম ভার্সেস ক্রিস্টিয়ানিটি' নামে। গ্রুপটিতে আয়েশা একাধিক ছদ্মনামের এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতো এ্যাডমিন ও মডারেটর হিসেবে। তাকে সহযোগিতা করতো তাসাউফ ট্রাস্টের ৮ সদস্য। দুর্বলচিত্ত ও নিজ ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ মেয়েদেরকে টার্গেট করে করে তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা হতো, তারপর ধর্মান্তরের পর্ব।
২০১৪ সালে সালমান মহিউদ্দিন নামের একই এলাকার এক যুবক ইউটিউবে চ্যানেল খোলে এবং খৃস্টিয়ানিটির দুর্নাম ও ইসলামের মহিমা কীর্তনে নিয়োজিত হয়।
সালমান ও আয়েশা উভয়ে মূলত পৃথক দুটি প্ল্যাটফমে জিহাদের সপক্ষে প্রচারণা এবং রিক্রুটিংয়ের কাজ করতো। ২০১৫ সালে দুবাই হয়ে আফগানিস্তান যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়া সালমানকে হায়দ্রাবাদ বিমানবন্দর থেকে আটক করে এটিইউ। পরবর্তীতে র' ও এনআইএ'র মাধ্যমে আয়েশাকে আটক করা হয় আবুধাবি থেকে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র থেকে এরা দু'জন অন্তত ৬৮ জনকে ধর্মান্তরিত করেছে, যাদের ৫১ জনই হিন্দু।
একটি মজার কথা জানাতে চাই শেষে। এই যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তর অর্থাৎ লাভ জিহাদ কোন হিন্দুর দেয়া নাম না কিন্তু। এই নামটি মূলত প্রথম ব্যবহার করে খৃস্টান চার্চগুলো।
আরেকটা মজার বিষয় হলো, একই ধরনের অপকর্মকারী দলকে বৃটেনে বলা হয় গ্রুমিং গ্যাং।
0 মন্তব্যসমূহ