হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ

হিন্দু বিবাহের প্রকারভেদ


আজ আমরা জানব "বিবাহ কত প্রকার ও কি কি?

 বিবাহ আট প্রকার, তার মধ্যে চারটি উত্তম যা গ্রহনযোগ্য আর বাকি চারটি অধম যা ত্যাজ্য অগ্রহণযোগ্য যা পাপযুক্ত নামমাত্র বিবাহ। 

যথা- 
  • ১) ব্রাহ্ম বিবাহ,
  • ২) দৈব বিবাহ,
  • ৩) আর্ষ বিবাহ, 
  • ৪) প্রাজাপত্য বিবাহ এই চারটি উত্তম বিবাহ।

উপরের এই চারটি বিবাহ উত্তম 

 — 
  • ৫) অসুর বিবাহ, 
  • ৬) গান্ধর্ব বিবাহ,  
  • ৭) রাক্ষস বিবাহ, 
  • ৮) পৈশাচ বিবাহ 

এই চারটি অধম বিবাহ তার মধ্যে অধমেরর চেয়েও অধম পৈশাচ বিবাহ। 

📖 মনুস্মৃতি- 

ব্রাহ্মো দৈবস্তথৈবার্ষঃ প্রাজাপত্যস্তথাসুরঃ।
গান্ধর্বো রাক্ষসশ্চৈব পৈশাচশ্চষ্টমোহধমঃ।। ৩/২১

পদার্থঃ- (ব্রাহ্মঃ) ব্রাহ্ম বিবাহ (দৈবঃ) দৈব বিবাহ (তথা এব আর্ষঃ) আর আর্ষ বিবাহ (প্রাজাপত্যঃ) প্রাজাপত্য বিবাহ (তথা আসুরঃ) আর আসুর বিবাহ (গান্ধর্বঃ) গান্ধর্ব বিবাহ (রাক্ষসঃ চ এব) আর রাক্ষস বিবাহ (পৈশাচঃ চ অষ্টমঃ অধমঃ) আর সব থেকে অধম অষ্টম পৈশাচ বিবাহ। 

অনুবাদঃ- ব্রাহ্ম বিবাহ, দৈব বিবাহ, আর্ষ বিবাহ, প্রাজাপত্য বিবাহ, আসুর বিবাহ, গান্ধর্ব বিবাহ,  রাক্ষস বিবাহ আর সব থেকে অধম অষ্টম পৈশাচ বিবাহ। 

১. ব্রাহ্মবিবাহ:- কন্যাকে  বস্ত্রাদিদ্বারা অলঙ্কৃত করিয়া এবং কন্যাও যাকে প্রসন্ন করিয়াছে সেই উত্তম, সুশীল,  বিদ্বান ও কন্যার যোগ্য পুরুষকে আহ্বান করিয়া আদর অভ্যর্থনা সহকারে কন্যাদান করাকে ব্রাহ্মবিবাহ বলে। (মনুস্মৃতি-৩/২৭)

২. দৈববিবাহঃ-  বিরাট যজ্ঞে বড় বড় বিদ্বানকে বরণ করিয়া তাহাকে ঋত্বিক কর্মে নিযুক্ত কোন বিদ্বানকে বস্ত্রালঙ্কারাদি দ্বারা সুশোভিতা কন্যা দান করিলে তাহা হয় দৈব বিবাহ। (মনুস্মৃতি-৩/২৮)

৩. আর্ষবিবাহঃ- বরের নিকট হইতে একজোড়া বা দুইজোড়া গাভী ও বলদ লইয়া তাহাকে ধর্ম পূর্বক কন্যা দান করার নাম আর্ষবিবাহ। (মনুস্মৃতি-৩/২৯)

৪. প্রাজাপত্যবিবাহঃ- যজ্ঞশালায় যথাবিধি যজ্ঞ করিয়া সকলের সম্মুখে–"তোমরা উভয়ে মিলিয়া যথাবিধি গৃহাশ্রম কর্ম করিতে থাক" এইরূপ বলার পর উভয়ে সানন্দে পাণিগ্রহণ হওয়াকে প্রাজাপত্যবিবাহ বলে। (মনুস্মৃতি-৩/৩০)

[এই চারটি উৎকৃষ্ট বিবাহ অর্থাৎ উত্তম বিবাহ - মনুস্মৃতি- ৩/৩৯]

৫. আসুরবিবাহঃ- বরের জ্ঞাতিবর্গকে ও কন্যাকে যথাশক্তি ধন দিয়া হোমাদি বিধিদ্বারা কন্যা দান করাকে আসুরবিবাহ বলে। (মনুস্মৃতি-৩/৩১)

৬. গান্ধর্ববিবাহঃ-  বর ও কন্যার ইচ্ছানুসারে উভয়ের যে সংযোগ হয় এবং কামনাসক্ত হইয়া উভয়ে মনে মনে স্বীকার করিয়া লয় যে, তারা উভয়ে স্বামী - স্ত্রী,  এরূপ বিবাহকে গান্ধর্ববিবাহ বলে। (মনুস্মৃতি-৩/৩২)

৭. রাক্ষসবিবাহঃ- হনন ও ছেদন অর্থাৎ কন্যাপক্ষীয় বাধাদানকারীদিগকে বিদীর্ণ করিয়া বিলাপকারিণী, রোরুদ্যমানা, কম্পিতকলেবরা, ও ভীতিপরায়ণা কন্যাকে বলাৎকারে হরণ করিয়া বিবাহ করাকে রাক্ষসবিবাহ  বলে। (মনুস্মৃতি- ৩/৩৩)

৮. পৈশাচবিবাহঃ-  নিদ্রিতা, উন্মাদগ্রস্তা বা মদ্যপানে উন্মত্তা কন্যাকে একান্তে পাইয়া তাহাকে দূষিত করিয়া দেওয়া - ইহা সব বিবাহের মধ্যে নিচ হইতেও নিচ, মহানীচ, দুষ্ট, অতিদুষ্ট পৈশাচবিবাহ। (মনুস্মৃতি-৩/৩৪)

শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ প্রথম চার বিবাহ  উত্তম বিবাহ  পরবর্তী চার বিবাহ অধম বিবাহ যা করা উচিত নয়- এ করা পাপ।

========
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ অগ্নিবীর 
  সত্য প্রকাশে নির্ভীক সৈনিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ