বঙ্কিমের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫) উপন্যাসের প্রতিবাদে ইসলাইল হোসেন সিরাজী ‘রায়নন্দিনী’ (১৯১৬) লেখেন এ কথা আমি প্রথম জানি আহমদ ছফার মাধ্যমে। ছফা কোন একটি লেখায় বঙ্কিমের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের প্রতিবাদটিকে অতি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। সম্প্রীতি সেকথাটা ফের ফেইসবুকে কোথাও দেখেছি, তাতে মনে হলো এটা নিয়ে লেখা উচিত। তাই বঙ্কিমের ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ফের পড়তে হলো। তারপর ইসমাইল হোসেন সিরাজীর ‘রায়নন্দিনী পড়তে হলো। সত্যি কথা বলতে, সিরাজীর কোন লেখাই আমার পড়া ছিলো না। আমাদের স্কুল পাঠ্যে তার কবিতা ছিলো। সেই সুবাদে তার নাম জানা। ছফার বিশিষ্ট খাদেম সলিমুল্লাহ খান বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর সকলকেই মুসলমান বিরোধী সাম্প্রদায়িক হিন্দু বলে প্রচার করে। কাজেই ছফার মারফত ‘রায়নন্দিনী’ উপন্যাসের কথা জেনে আগ্রহী হয়েছিলাম বলাই বাহুল্য। নইলে ইসমাইল হোসেন সিরাজী আমাদের স্কুল পাঠ্য বইয়ে ‘মুসলিস লেখক’ কোটা পূরণ ব্যতিত সাহিত্যে তার অবস্থান ক্লাসিকদের মধ্যে পড়ে না। ছফা নিজেও সিরাজীর লেখাকে পক্ষান্তরে দুর্বলই বলেছেন। দুর্গেশনন্দিনীর সাহিত্য ও শিল্পমানের যে বিপুলতা- তার পাল্টা লেখা রায়নন্দিনী সেখানে নিতান্তই দুর্বল একটি প্রয়াস। কিন্তু ছফা কেন সিরাজীর প্রতিবাদকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বলেছিলেন? রায়নন্দিনী পড়ে সেটা আমি বুঝলাম।
বঙ্কিমের দুর্গেশনন্দিনী যারা পড়েছেন সেখানে কতলু খাঁর কন্যা আয়েষার (বঙ্কিম আয়েশা বানান এভাবেই লিখেছেন) প্রতি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন কারণ আয়েষা ট্র্যাজিক হিরোইন। মানসিংহ পুত্র জগত সিংহের প্রেমে পড়েন আয়েষা। এই প্রেমের কারণে কতলুখাঁর সেনাপতি ওসমানের প্রেম প্রত্যাখ্যান করে আয়েষা। এদিকে জগতসিংহ ভালোবাসে বীরেন্দ্রসিংহের কন্যা তিলোত্তমাকে। এই উপন্যাসে কোথাও সাম্প্রদায়িকতা, মুসলিম বিদ্বেষ চোখে পড়েনি। শেষ পর্যন্ত এখানে মানুষের ধর্ম জাতি পরিচয়ের উর্ধে যে প্রেম- সে প্রেমকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। আয়েষার সঙ্গে জগতসিংহের মিলন বঙ্কিম দেননি। কিন্তু সে ভালোবাসাকে গভীরে সন্মান ও শ্রদ্ধায় উভয়ে সম্মত তা দেখিয়েছেন। তাহলে ইসমাইল হোসেন সিরাজী কেন ক্ষুব্ধ? কেন সেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াকে ছফা গুরুত্বপূর্ণ বলছেন? সলিমুল্লাহ গ্যাংরা কেন বঙ্কিম উত্তর বাংলা সাহিত্যকে মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক বলছেন?
কারণটি ইসমাইল হোসেন সিরাজী নিজেই রায়নন্দিনী উপন্যাসের শুরুতে ভূমিকায় পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন। সিরাজী ভূমিকায় লেখেন, “ইহা ঐতিহাসিক ধ্রুবসত্য যে, মুসলমানদিগকে পৃথিবীর সকল জাতিই কন্যা দান করিয়াছিলেন এবং করিতেছেন। কিন্তু মুসলমান কখনো অমুসলমান বা কাফেরদের কন্যা দান করেন নাই।... নিচমতি বঙ্কিমচন্দ্র ও রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় হইতে আরম্ভ করিয়া সকলেই উদ্ভট উপন্যাসিক লেথকই এই অতি জঘন্য চিত্র অঙ্কন করিয়া বিশ্বপুজ্য মুসলমানের মন্ডুপাত এবং মর্মবিদ্ধ করিতে অসাধারণ প্রয়াস স্বীকার করিয়া আসিতেছেন”।
১৮১৬ সালে ‘বাঙালী লেখক’ বলতে সিরাজী হিন্দুদের বুঝিয়েছে। সিরাজী নিজেকে মুসলমান এবং আরবী তুর্কি আফগান মুসলমানদেরকে পূর্বপুরুষ বলছেন। এটি মাথায় রাখতে অনুরোধ করব কারণ যে সিরাজীর প্রতিবাদকে ছফা প্রাসঙ্গিক বলছেন, বঙ্কিমদের মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক বলছেন, মুসলমানদের নিজস্বতার জাতীয়তাবাদী লেখক ছফা সিরাজীর ‘বাঙালী লেখক’ ও ‘মুসলমান লেখক’ বিভাজনে নিজেকে কোথায় রাখেন সেই প্রশ্ন কিন্তু কোথাও মিমাংসা হয়নি আজ পর্যন্ত। এদিক দিয়ে সিরাজী ও তার সমসাময়িকরা পরিস্কার। কোন ভন্ডামীর আশ্রয় নেননি। সরাসরি নিজেদের ‘মোছলেম জাতি’ বলেছেন।
সে যাগগে, সিরাজীর ক্ষুব্ধতার কথায় আসি। কেন সিরাজী ক্ষুব্ধ? কারণ মুসলমান কন্যা হিন্দু যুবকের প্রেমে দিয়ানা দেখানো হয়েছে এতে মুসলমানদের বঙ্কিমচন্দ্র ‘হেয়’ করেছেন! অপমান করেছেন! সিরাজী গর্বভরে মুসলমি হেরেমে হিন্দুর কন্যা দিয়ে ভর্তি মুসলিম শাসনের কথা স্মরণ করতে বলেছেন সকলকে। কিন্তু হিন্দু রাজার হেরেমে কোন মুসলিম কন্যা ছিলো না বলে তিনি বঙ্কিমকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সিরাজী হয় সরল না হয় মাথা গরম- না হলে ইতিহাসের একটি নগ্ন সত্যকে নিজের অজান্তেই তিনি স্বীকার করে ফেলেছেন। মুসলিম শাসনে হিন্দু নারীদের উপর মুসলিম শাসকদের হস্তক্ষেপকে তিনি নিজেই গৌরব হিসেবে স্বীকার করে ফেলেছেন। বঙ্কিম দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসে সেই নির্মমতা ও মুসলমানদের নিজেদের কাছে সেগুলো যে অতি স্বাভাবিক ছিলো সেটি একটি মাত্র পরিচ্ছেদে দেখিয়েছেন মাত্র। সিরাজী ক্ষুব্ধতার সেটিও একটি কারণ হতে পারে। ভারতের হিন্দুরা অন্য জাতির উপর সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সমুদ্র পাহাড় পেরোয়নি। অন্য জাতির নারীদের হেরেমে এনে ভরেনি। ভারতে সাতশো বছরের মুসলিম শাসনে সেটি ছিলো খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেগুলি সেকালে হোক, একালে হোক- যে-ই বলতে যাবে তাকে ‘মুসলিম বিরোধী’ হিসেবে দাগিয়ে দিবে কমিউনিস্টরা।
‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসের নবম পরিচ্ছেদ ‘দিগ্গজ সংবাদ’ থেকে খানিকটা তুলে ধরছি-
ব্রাহ্মণ সুর থামাইয়া কহিল, “আমি মোছলমান হইয়াছি।“
রাজপুত্র কহিলেন, “সে কি?” গজপতি কহিলেন, “যখন মোছলমান বাবুরা গড়ে এলেন, তখন আমাকে কহিলেন যে, আয় বামন তোর জাতি মারিব। এই বলিয়া তাঁহারা আমাকে ধরিয়া লইয়া মুরগির পালো রাঁধিয়া খাওয়াইলেন |”
“পালো কি?”
দিগ্গমজ কহিলেন, “আতপ চাউল ঘৃতের পাক |”
রাজপুত্র বুঝিলেন পদার্থটা কি। কহিলেন, “বলিয়া যাও!”
“তারপর আমাকে বলিলেন, ‘তুই মোছলমান হইয়াছিস’; সেই অবধি আমি মোছলমান |”
রাজপুত্র এই অবসরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর আর সকলের কি হইয়াছে?”
“আর আর ব্রাহ্মণ অনেকেই ঐরূপ মোছলমান হইয়াছে |”
রাজপুত্র ওসমানের মুখপানে দৃষ্টি করিলেন। ওসমান রাজপুত্রকৃত নির্বাক তিরস্কার বুঝিতে পারিয়া কহিলেন, “রাজপুত্র, ইহাতে দোষ কি? মোছলমানের বিবেচনায় মহম্মদীয় ধর্মই সত্য ধর্ম; বলে হউক, ছলে হউক, সত্যধর্মপ্রচারে আমাদের মতে অধর্ম নাই, ধর্ম আছে |” (দুর্গেশনন্দিনী, দ্বিতীয় খন্ড, নবম পরিচ্ছেদ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যায়)।
এ হচ্ছে মর্মজ্বালা! এগুলো তুলে ধরলেই লেখক হবেন ‘হিন্দুত্ববাদী’। বঙ্কিমকে ‘হিন্দুত্ববাদী’ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত করেছে হিন্দু কমিউনিস্টরা। কমিউনিস্টদের দুর্গেশনন্দিনী ভালো লাগে নাই। সত্য ধর্মে জোর করে হোক, আপোষে হোক যেভাবেই ধর্মান্তর হোক তাতে ওসমানের যেমন অধর্ম নাই তেমনি করে অরুন্ধতী রায়দেরও নাই। ছফারও নাই। সলিমুল্লারও নাই। কিন্তু সেকথা অভিযোগের সুরে বললে সেটা বিদ্বেষ! ফোবিয়া! কিন্তু সিরাজী ও অন্যান্য বাংলা ভাষী মুসলমান লেখকরা হিন্দুদের সম্পর্কে যা লিখেছেন সেগুলি কি বিদ্বেষ হিসেবে ধরা হবে? ‘রায়নন্দিনী’-তে সিরাজী ইসা খাঁর মা আয়েশা ও বোন ফাতেমার মুখে এই সংলাপগুলি জুড়ে দিয়েছেন-
ফাতেমাঃ সে ত আর হিন্দু থাকছে না, শাদী হলে সে সত্য ধর্ম গ্রহণ ক'রে মুসলমান হবে।
আয়েশাঃ তা' হউক বাছা। তাই বলে আমি প্রতিমাপূজক কাফেরের কোনও কন্যাকে কদাপি ঘরে এন বংশ কলুষিত করবো না।
ফাতেমাঃ “কেন মা! আজকাল ত অনেক মুসলমানই হিন্দুর মেয়ে বিয়ে করছে।” হিন্দুর মেয়েরা অসভ্য হলেও, মুসলমান-পরিবারে এসে আদব, কায়দা, লেহাজ, তমিজ, তহ্জিব, আখ্লাক সমস্তই শিখে সভ্য হয়ে যায়।
আয়েশাঃ তা বটে মা! কিন্তু এতে গুরুতর জাতীয় অনিষ্ট হচ্ছে। হিন্দুর নিস্তেজ রক্ত মুসলমানের রক্তে মিশ্রিত হ'য়ে মুসলমানকে ক্রমশঃ হিন্দুর ন্যায় ভীরু, কাপুরুষ, ঐক্যবিহীন, জড়োপাসক নিবীর্য নগণ্য জাতিতে পরিণত করবে।“
কী ভয়ানক সংলাপ! গোটা বঙ্কিম সাহিত্য পড়লেও আপনি এর কাছাকাছি নয় দূরতম দিক দিয়েও কি মুসলিম বিদ্বেষী সংলাপ পাবেন? শুধু তাই নয় একই পরিচ্ছেদে ইশা খার মা আয়েশা কন্যা ফাতেমাকে দিল্লিশ্বর আকবরকে দুষছেন হিন্দু বিয়ে করে ক্ষমতায় হিন্দুদের টেনে আসার জন্য। সিরাজী তার নিজের অভিমতই যে আয়েশার মুখে দিয়েছেন বেশ বুঝা যায়। ভারতে মুসলিম শাসন দুর্বল হবার জন্য তিনি মুসলমানের রক্তে হিন্দু রক্ত মেশাকে দায়ী করেছেন। অথচ মুঘল বংশের জাহাঙ্গির ও শাহজাহান সময়ে সাম্রাজ্যের যে শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিলো, যুদ্ধে তারা যে নিপুণতা দিয়েছিলেন উল্টো করে বললে সেটি কি রাজপুত রক্তের কারণেই? কারণ এই দুই শাহাজাদার গর্ভধারীনী ছিলেন রাজপুত নারী। সিরাজী রায়নন্দিনীতে লিখেছেন-
“আয়েশাঃ দেখবে কে? স্বয়ং বাদশাহ আকবর পর্যন্ত এই পাপে লিপ্ত। হিন্দুকে সন্তুষ্ট করবার জন্য তিনিই এই প্রথা বিশেষরূপে প্রবর্তন করেছেন। তিনি ভাবছেন, এতে হিন্দুরা প্রীত ও মুগ্ধ হ'য়ে বাধিত থাকবে। ফলে কিন্তু বিপরীত ঘাটবে। এতে স্পষ্টই ভারত-সম্রাটের সিংহাসনের উপর হিন্দুদের মাতুলত্বের দাবী প্রতিষ্ঠিত হবে। হিন্দুর সাহস স্পর্ধা দিন দিন বেড়ে যাবে। ভাগিনের সম্রাট হ'লে হিন্দুদের উচ্চ উচ্চ পদ প্রাপ্তি সহজ ও সুলভ হ'য়ে উঠবে। এইরূপে দেশের রাজদন্ড পরিচালনায় হিন্দুর হস্তও নিযুক্ত হবে। অন্যদিকে বংশধরেরা মাতৃরক্তের হীনতাবশতঃ কাপুরুষ, বিলাসী এবং চরিত্রহীন হয়ে পড়বে। আমার মনে হয়, উত্তরকালে এ জন্য ভারতীয় মুসলমানকে বিশেষ কেশ ও লাঞ্জনা ভোগ করতে হবে। এরা ভারতের রাজপতাকা স্বহস্তে রক্ষা করতে পারবে না।“
সিরাজী এই উপন্যাসে হিন্দুদের কাপুরুষ, তাদের উদ্ভট ধর্ম বিশ্বাস, তারা লিঙ্গ পুজা করে বলে উপহাস করিয়েছেন স্বাদ মিটিয়ে। এক জায়গায় হিন্দুদের মুখে নারী অপহরণকে তাদের ধর্ম হিসেবে দেখিয়ে বলিয়েছেন, অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের বোনকে তুলে এনেছিলো। এতে আমাদের কোন পাপ নাই। আবার প্রতাপাদিত্যে তার মুসলিম সেনাকে স্বর্ণকুমারীকে তুলে আনতে বললে সেই সেনার মুখের সংলাপ বসিয়েছেন, এসব কোন মুসলমানের কাজ নয়। মুসলমান কখনো এরকম হীন কাজ করে না...। দুর্বল কাঠামো ও দুর্বল সাহিত্যের উপন্যাসটি পাঠসুখ নয়। কিন্তু লেখকের মনের বিষ এতে মিটেছিলো। সেই বিষ মেটানোকে ছফা সাহেব বলেছেন ‘প্রাসঙ্গিক’! আর তার মুরিদরা বগল বাজিয়ে সায় দিয়েছেন- বঙ্কিম ও বঙ্কিমউত্তর সমস্ত ‘হিন্দু লেখকই’ মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক!
আমি আশ্চর্য হয়ে যাই হিন্দু কমিউনিস্টরা কি করে ইংরেজ আসার আগে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে গলায় গলায় পীরিত আবিস্কার করেন? সিরাজী ছিলেন ইংরেজ বিরোধী। তিনি প্যান ইসলামিজমের গুরু সৈয়দ সাহেবের শিষ্য ছিলেন। তুরস্ক গিয়ে তিনি খিলাফত রক্ষার যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ইংরেজদের তাড়িয়ে আবার মুসলমানরা শাসক হবে সে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। হিন্দুরা হবে মুসলমানদের প্রজা। পূর্ববঙ্গের লেখকদের প্রায় সকলেই ছিলেন এই জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। কায়কোবাদ ‘মহাশ্মশান’ লিখেন মুসলমান ও মারাঠাদের মধ্যে লড়াই নিয়ে। এখানেও হিন্দু মুসলমান বিরোধ। চৌধুরী মোহাম্মদ আর্জুমন্দ আলী প্রেমদর্পন (১৮৯১) মতীয়র রহমান থানের যমুনা (১৯০৪) এবং ইসমাইল হোসেন সিরাজীর তারাবাঈ (১৯০১৬) সবখানে হিন্দুর কন্যাকে মুসলমান বানিয়ে বিয়ে করে উপন্যাসের উপসংহারে বলা হয়েছে ‘অতপর উহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল’...। শিবাজী কন্যা তারাবাঈয়ের সঙ্গে বিজাপুর সেনাপতি আফজল খাঁর প্রেম কাহিনী নিয়ে ‘তারাবাঈ’ লেখেন সিরাজী। শিবাজী কন্যাকে মুসলমান বানানো হয়। কিন্তু কতলু খাঁ কন্যা আয়েষাকে বঙ্কিম জগত সিংহের সঙ্গে বিয়ে দেননি। ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ‘অঙ্গুরীয় বিনিময়’ (১৮৫৭) উপন্যাসে ঔরাঙ্গজেবের কন্যা রওশন আরার সঙ্গে মারাঠা বীর শিবাজীর প্রেম নিয়ে লিখিত হয়। এতেও ক্ষুব্ধ হয় মুসলমান কবি লেখকরা। কেন এসব লিখে মুসলমানদের ‘ছোট’ করা হচ্ছে? অথচ সিরাজী হিন্দুদের দুর্বল, ভীত, যুদ্ধ করতে পারে না ইত্যাদিতে ভূষিত করছেন। ইতিহাস বিকৃতি যে করেছেন সেগুলি নিয়ে ‘ছফা পীরবাবার’ কিন্তু কোন কথা নেই। যদি ‘হিন্দু’ পরিচয় ধরি তাহলে মুঘল সাম্রাট আকবর থেকে জাহাঙ্গির কেউই তো রাজপুতদের হারাতে পারেনি। স্বয়ং রাজপুতদের বীরত্ব দেখে বিস্মিত হতেন আকবর। মুঘলদের সাম্রজ্য বিস্তারে তিনি সব সময় রাজপুতদের ক্রেডিট দিতেন। ইতিহাসের প্যাঁচটা হচ্ছে ভারতবর্ষে আফগান তুরস্ক আরবী শক্তিগুলি নিজেদের মধ্যেও সাম্রাজ্য নিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে তাদেরকে ‘মুসলিম জাতি’ হিসেবে মুসলমান ও হিন্দু কমিউনিস্টরা স্বীকৃতি দিয়েছেন। কিন্তু ভারতে ‘হিন্দু’ বলতে কোন জাতিকে বুঝায় না। মুসলমানও কোন জাতি নয়। কিন্তু তাকে জাতি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। সেই গৌরবে হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত পূর্ববঙ্গের এক মুসলমান লেখক তার উপন্যাসের হিন্দু শাহজাদীকে মুসলমান সুলতান চিঠিতে যুদ্ধবিদ্যা শিখে মুসলামানদের পাতে উঠতে যোগ্য হতে বলেন-
“পত্র শেষ করিয়া ঈসা খাঁ পুনরায় পত্রের এক কোণে বিশেষ করিয়া লিখিলেনঃ
“হে প্রেমময়ি! ব্যায়াম-চর্চা এবং অস্ত্র-সঞ্চালনে পটুতা লাভ করিতে বিশেষ যত্ন করিবে, ঐ পটুতাই সেই বাধা দূরীকরণে বিশেষ সহায় হইবে।”
বাহ্, বেশ!... উপরের আলোচনা বিচারে তাহলে কে সাম্প্রদায়িক বঙ্কিম না ‘মোছলেম’ লেখকরা? বঙ্কিম ‘হিন্দুত্ববাদী’ হলে ‘মোছলেম লেখকরা’ কি ছিলেন?
সূত্রলিংক: pathoksusupto
0 মন্তব্যসমূহ