রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার ঘাটাবিল গ্রামে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুর জমি দখলের পায়তারা

রংপুরের ঘাটাবিল গ্রামে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুর জমি দখলের পায়তারা

গত ৫ জানুয়ারি রংপুর-বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের কিসমত ঘাটাবিল গ্রামের সংখ্যালঘু বাসিন্দা সুকুমার চক্রবতী ও মুকুল চক্রবতীর ১ একর ৩৫ শতক জমির নকল কাগজ তৈরি করে জমি দখলের পায়তারা করছে আলমগীর হোসেন।

 

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, 

রংপুর জেলা বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের কিসমত ঘাটাবিল গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার চক্রবতী ও মুকুল চক্রবতী। তারা সম্পর্কের ভাই। তারা ৯০ দশক থেকে কিসমত ঘাটাবিল মৌযায় ভিন্ন ভিন্ন দাগে ১ একর ৩৫ শতক জমি ক্রয় ভোগ দখল করে আসছেন। ১৯৯০ সালে দুই ভাইয়ের নামে ৭৩ শতক ঐ মৌজা জমিগুলো চূড়ান্তভাবে রেকর্ড হয়। ২০১৮ সালে বড় ভাই সুকুমার মারা যান। এর পর মারা যাওয়া সুকুমারে দুই সন্তান ও তার ভাই মুকুল চক্রবতী সম্প্রতি রামনাথপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে জমির খাজনা পরিশোদ করেন।


আকস্মিক ভাবে গত ৫ জানুয়ারি এই জমিতে চাষাবাদ করতে নিষেধ করেন পুলিশ। পরে জানতে পারেন সম্প্রতি ধুন্দাপাড়া গ্রামে কথিত আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি ওই জমির দলিল সম্পাদন করে আদালতে ৪৪ ধারা চেয়ে মামলা করেছেন। পরে মুকুল চক্রবর্তী দলিলের নকল তুলে দেখতে পান তাদের জমি কথিত আলমগীর গত ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার খোলাটির উত্তর বালাপাড়া গ্রামের হান্নানের কাছ থেকে ক্রয় করছেন।


তবে মুকুল চক্রবতী ও তার ভাতীজা চিনেন না আবদুল হান্নাকে। হান্নান ওই জমিতে কোনদিন যাননি ও দেখেননি।


ভুক্তভোগী মুকুল চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন,

আলমগীর রংপুর কোটের মুহরী। আমরা সংখ্যালঘু হওয়ায় তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সাব রেজিস্টার এ দিয়ে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে আমাদের ১একর ৩৫ শতক জমি লিখে নিয়েছেন।বদরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান গত ১৪ডিসেম্বর জমির দলিল সম্পাদন করেছেন। যার দলিল নং ৯১১৬। দলিলটি লিখেছেন আব্দুল লতিফ সরকার। দলিলে উল্লেখ করা হয় ১৯৭০ সালে ৫ জুন তারিখে ৬৫৬৭ নং কবলা দলিল মূলে বর্তমান বি আর এস চুড়ান্ত রেকর্ড নিজ নামে ভোগদখল আছে। আলমগীরকে ঐ জমি লিখে দেন আব্দুল হান্নান(৭৫)।


আব্দুল হান্নান সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, 

আমি কোন দিন কিসমত ঘাটাবিল জায়গার নাম শুনিনি জমি তো দূরের কথা। আমার কোন জমি নাই।আমি প্রতিদিন ভিক্ষা করে খাই।


আলমগীর সম্প্রতি ৫হাজার টাকা দিবার কথা বলে বদরগঞ্জ বাজারে নিয়ে যান। সেখানে একটি কাগজে টিপ দিতে বলে আলমগীর। তার কথামতো টিপও দেই।টিপ দিবার পর আলমগীর বলেন চাচা ৫হাজার টাকা আমার বাসায় গিয়ে নেন। আমি এখন পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি।কোন কাগজে টিপ দিয়েছি তাও জানিনা। আমি সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ও যায় নি।আলমগীর খুব খারাপ প্রকৃতির মানুষ পরে একজনের কাছে শুনেছি।


হান্নান স্ত্রী আরজিনা বেগম বলেন,

কিসমত ঘাটাবিল গ্রামটি কোটে কোনা আমি চিনিও না।আমার স্বামীর কোন জমি ছিলো না। এখনোও নাই। আলমগীর একজন টাউট। তার সব কাজ দুই নম্বর।


রামনাথপুর ভুমি অফিসে গিয়ে সরজমিনে দেখা যায়, 

ক্রয় সূত্রে ঐ জমির প্রকৃত মালিক সুকুমার চক্রবতী ও মুকুল চক্রবতী। তাদের নামে চুড়ান্ত রেকর্ডও আছে। জমির শাখা ডাঙ্গা।


ইউনিয়ন ভুমি কর্মকতা শওকত আকবর বলেন,

সুকুমার চক্রবতী ও মুকুল চক্রবতী ব্যতিত অন্য কারও ঐ জমি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। যদি দলিল সম্পাদন হয়ে থাকে তাহলে দুই নম্বরি হয়েছে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দলিল লেখক বলেন, 

ওই দলিলটিতে অপরাধ করা হয়েছে দুইটি। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দলিল সম্পাদন করা একটি জঘন্য অপরাধ। অপর অপরাধ হলো সেই দলিল সম্পাদন করতে সরকারকে রাজস্ব থেকে ১৫০০০০/টাকা ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রারসহ উর্ধতন কর্মকর্তা হস্তক্ষেপ কামনা করা হোক। ২০২০ সালে শ্রেণির পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদন করার দায়ে বদরগঞ্জ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ সরকারের সনদ বাতিল হয়।


সুকুমার চক্রবতীর ছেলে বিপ্লব চক্রবতী বলেন, 

৯০দশকে আগে বাবা জমি ক্রয় করেন। ভোগ দখল করার পর তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা ভোগদখল করে আসছি। আমাদের জমি অন্য ব্যক্তি কিভাবে বিক্রি করেন। দেশে কোন আইন নেই। এটা কি মগের মল্লুক।


সুকুমারে ভাতিজা বাবলা চক্রবতী অভিযোগ করে বলেন, 

সাবরেজিস্টার অর্থের বিনিময়ে একজন সংখ্যালঘুর জমি ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে দলিল সম্পাদন করে হিন্দু মুসলিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃস্টি করেছে। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে আমার বিনীত অনুরোধ আমার বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে দিয়ে চাষাবাদ করার সুযোগ করে দিবেন, আর যারা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।


দলিল লেখক আবদুল লতিফ সরকার বলেন, 

মুহুরী আলমগীর অত্যন্ত ভয়ানক চালাক প্রকৃতি ছেলে।


বদরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক(এসআই)রাকিবুল ইসলাম বলেন, 

ওই জমি আলমগীর দীর্ঘদীন ধরে ভোগ দখল করে আসছেন সেই জমিতে তাকে এখন উঠতে দিচ্ছেন না এমন অভিযোগ করে তিনি ঐ জমির ওপর ৪৪ধারা চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু সরজমিন দেখা গেছে ৪০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছে মুকুল চক্রবতী সহ তার ভাতিজারা।


এ বিষয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, 

জমি সঠিক কাগজপত্র দিয়ে হান্নান কাছ থেকে কিনছি। আলমগীর আরো বলেন জমির কাগজ ঠিক আছে বিধায় সাব রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান জমি সম্পাদন করেন।


বদরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান বলেন, 

সঠিক কাগজপত্র ছাড়া আমি কোন জমি সম্পাদনা করিনা।


রংপুর জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বলেন, 

ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা আবু সাঈদ বলেন, 

আইন অনুযায়ী চুড়ান্ত রেকর্ড ছাড়া জমি সম্পাদন করার সুযোগ নেই। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে

দেখা হবে।


প্রথম প্রকাশ: সোজাসাপ্টা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ