গতকালকের ঘটনা (১০/০১/২০২৩)। বরিশাল লঞ্চঘাট। ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে সকালের নাস্তা করতে আসলেন সুন্নতি দাঁড়ি আছে এমন জনৈক কাস্টোমার। নাস্তা করা শেষ হলে তিনি বিল দিতে গেলেন। হোটেলের মালিক বললেন বিল ৪০ টাকা। সুন্নতি লোকটা বললেন ৩০ টাকা।
এমন দৃশ্য বাংলাদেশে নতুন না। সামান্য টাকার পার্থক্যের কারনে এসব ক্ষেত্রে প্রথমে তীব্র বাকবিতন্ডা, তারপরে গালাগালি এবং শেষ পর্যন্ত তা হাতাহাতি বা মারামারিতে গড়ায়। সেই মারামারিতে একজন আরেকজনের দাঁড়ি ধরে টানা, পান্জাবি ছিঁড়ে ফেলা, এমনকি লুংগিতে হ্যাঁচকা টান দিয়ে খুলে ফেলার ঘটনাও ঘটে। এখানেও তাই হইলো। এসব ক্ষেত্রে সাধারনত তারপরে কেউ মধ্যস্ততা করতে এগিয়ে আসেন। এবং ঝামেলা মিটে গেলে সবাই যার যার কাজে চলে যান। এখানে সাম্প্রদায়িকতার কিছু নাই।
কিন্তু গতকালকের ঘটনাটা অন্য রকম হয়ে গেলো। সুন্নতি ব্যাক্তি রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে অভিযোগ করলেন তার মুসলমানিত্বের চিহ্ন দাঁড়ি ধরে টান দিয়েছে রেস্টুরেন্টের হিন্দু কর্মচারি। তারপর ছড়িয়ে পড়ে ধর্মীয় উত্তেজনা। দলে দলে আরো টুপি, দাঁড়িওয়ালারা জড় হয়ে “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার” স্লোগান সহ হিন্দু ধর্মের মানুষদের নানা সাম্প্রদায়িক গালি দিতে দিতে হোটেলটি ভাংচুর করে, লুট করে। শেষ পর্যন্ত হোটেল মালিককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। যে ভিকটিম সেই এখন আসামী।
এটাই একটা সাম্প্রদায়িক ঘটনা আর সাধারন ঘটনা বা অপরাধের সাথে ফারাক। সাম্প্রদায়িক হামলা বলে একটা ঘটনাকে তখনই চিহ্নিত হয় যখন কারো ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়ের কারনে তারা হামলা বা বৈষম্যের শিকার হয়।
বরিশালে তুচ্ছ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক আক্রমণে একজন মুসলিম জিহাদীর স্বীকারোক্তি |
আমরা অনেক বাস্তবতাই স্বীকার করতে চাই না। কিন্তু তাই বলে সত্য তো আর কারো এপ্রুভালের আশায় বসে থাকে না। সমাজ এতটাই সাম্প্রদায়িক হয়েছে যে সমস্ত ঘটনায় সাধারনত কিছুই ঘটে না সেখানে একটু ধর্মীয় জজবা মিশিয়ে দিতে পারলে কাউকে আঘাত করা, তাকে লুটপাট করা যায়। সমাজে সাম্প্রদায়িকতা এতটাই গ্রাস করেছে যে পুলিশও যে ভিকটিম তাকেই সমাজের চাপে গ্রেপ্তার করে।
0 মন্তব্যসমূহ