এই যে ইউনিভার্সিটিতে ভোর রাতে অসুস্থ হলে সাঈদ নামের বন্ধুটাই তো অঙ্কিতাকে ছুটে এসে রক্ত দিলো হিম করা শীতের রাতে, তাহলে সাঈদ কী কখনো অঙ্কিতার খারাপ চাইতে পারে?!
আপাতদৃষ্টিতে সহজেই মনে হবে— সাঈদ অঙ্কিতার সর্বোচ্চ ভালো চায়, তাই তো ছুটে এলো এভাবে!
কিন্তু সত্যিটা কী আদৌ তাই?
কিছুদিন পর যদি দেখা যায়— এর পিছনে ছিল একটা গভীর আর সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র, যদি সাঈদ একদিন বলে বসে,
"অঙ্কিতা চলো, সমাজকে তোয়াক্কা না করে মানব ধর্মকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দিই, আমার ভালোবাসা ছড়িয়ে দিই মানবতায়।"
এরও কিছুদিন পর— অঙ্কিতার মনে হতেই পারে, সাঈদ তো অন্যরকম। কারণ সাঈদকে সে তার বাড়ি থেকে আনা লক্ষ্মী পূজোর নাড়ু পর্যন্ত খাইয়েছে, বরং সাঈদই নিজে থেকে খেতে চেয়েছে।
সুতরাং মানবতার চেয়ে বড় ধর্ম আর নেই, উলটো যে ধর্ম মানুষের বিভেদ তৈরি করে, সে ধর্ম অঙ্কিতা চায় না।
অঙ্কিতাও এক সময় হাঁটতে থাকলো সাঈদের দেখানো কূপযুক্ত রাস্তায়।
টুপ করে যখন একদিন অঙ্কিতা সেই কূপ বা গর্তে পড়েই গেলো, তার মনে হলো— সাঈদ তাকে টেনে তুলবে উপরে, কিন্তু না, সাঈদ তো তার ডাকই শুনলো না!
যেখানে এক শীতের রাতে অঙ্কিতার একটা ডাকেই দৌড়ে এসেছিল সাঈদ, সেই সাঈদই অঙ্কিতার এই আর্তচিৎকার শুনতে পাচ্ছে না!
অঙ্কিতা সেই অন্ধকার কূপে ডুবে যেতে যেতে ভাবতে থাকে— তার জীবনেও এক সময় আলো ছিল, দীপাবলিতেও সেও এক সময়ে প্রদীপ জ্বালাতো, ঘর ভর্তি আলো! অষ্টমীতে ঢাক, কাঁসরঘণ্টার শব্দে সে অঞ্জলি দিতো, আর এখন তাকে শব্দ করে কেউ একবার ডাকে না, তার ডাকও কেউ শোনে না।
লক্ষ্মীপূজায় যেবার নাড়ু খাইয়েছিল সাঈদকে, সেখানে সাঈদকে তার মনে হয়েছিল— মানবতার প্রদর্শক, আর এখন সাঈদই একটা অন্ধকার কূপে ফেলে তার জীবন কেড়ে নিচ্ছে!
এই যখন 'ওদের' পাশে পাওয়ার গল্প, তখন নিজেকে আর নিজের অস্তিত্ব, সংস্কার, ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে, তীব্র স্বার্থপরতা মহান এবং পুণ্যের বলে আমি মনে করি। এই স্বার্থপরতায় কোনো পাপ নেই।
যে মানবতা আমার অস্তিত্ব আর সংস্কার কেড়ে নেয়, সেই মানবতার ডাক পাওয়ার আগে মৃত্যুও শ্রেয়।
ধন্যবাদ।
(অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত)
1 মন্তব্যসমূহ
কথা সত্যি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত এই গল্পটা পড়ুন, যদিও দুজনই মুসলমান। তবুও ঘটনা কিন্তু টার্গেট করে করা। লিংক https://www.prothomalo.com/lifestyle/e1o17nvpjq
উত্তরমুছুন-------==-=-=-=-------
নাজিফা আর রাফসান আজও জানে না ওদের প্রেমটা কীভাবে শুরু হয়েছিল
ভালোবাসার গল্প আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। বিপুল সাড়া দিয়েছেন পাঠকেরা। কেউ লিখেছেন দুরন্ত প্রেমের গল্প, কেউবা শুনিয়েছেন দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়ার অনুভূতি। এখানে পড়ুন বাছাই একটি লেখা।
লেখা:
শফিকুল ইসলাম, মস্কো, রাশিয়া
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩০
নাজিফা আর রাফসান আজও জানে না ওদের প্রেমটা কীভাবে শুরু হয়েছিল
আঁকা: এস এম রাকিবুর রহমান
মেসেজের শব্দে ফোনটা বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখি নাজিফা রিপ্লাই দিয়েছে: ‘তোদের দোয়ায় ভালো আছি আমরা। রাফসানের সঙ্গে খারাপ থাকা সম্ভব না!’
নাজিফার উত্তর পড়ে মনে পড়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সেদিনের কথা। স্যার আসতে বেশ দেরি করছিলেন। সবাই আড্ডায় মত্ত। আমার মাথায় দুষ্টুমি চাপল। ফামিনের সঙ্গে এসব বিষয়ে আমার আবার ভালো জমে। তাই ফামিনকে ডেকে বললাম, ‘আয় একটু মজা নিই।’
—কী বল?
ফামিনকে একটু আড়ালে নিয়ে আস্তে আস্তে আমার পরিকল্পনার কথা বললাম। পরিকল্পনা বলতে আমি নাজিফাকে ডেকে নিয়ে বলব, ‘রাফসান আমাকে বলছে, তোর অনেক কিছুই নাকি তার ভালো লাগে। সে তোকে পছন্দও করে, কিন্তু বলতে পারে না। তোর সঙ্গে একটু কথা বলতে চায়, কিন্তু পারছে না।’
একই কথা একটু ঘুরিয়ে রাফসানকে বলবে ফামিন। শুধু যোগ করবে, অবসরে যেন সে নাজিফাকে মেসেজ পাঠায়।
এ কথা শুনেই ফামিন বলল, ‘তুই কি পাগল, মাথা ঠিক আছে?’ তার হাসি থামছেই না। ‘রাফসানের মতো ভদ্র ছেলে কি এটা মেনে নেবে?’
আমি বললাম, ‘দুইটাই একরকমের আছে। সমস্যা নেই।’
যে কথা সেই কাজ। ফামিন রাফসানের কাছে আর আমি নাজিফার কাছে চলে গেলাম।
আমার কথা শুনে নাজিফা বলল, ‘ও কি সত্যিই বলছে...না না আমার পক্ষে সম্ভব না।’ নাজিফা লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
আমি বললাম, ‘এত আশা করে বলল ছেলেটা, তুই কিন্তু মেসেজের রিপ্লাই দিস। আর যা বলার তুই নিজেই তাকে বলিস। আবার আমার কথা কিন্তু বলিস না রাফসানকে, প্লিজ।’
খেয়াল করে দেখলাম, ওয়াশরুমের দিকটায় রাফসানকে একইভাবে বোঝাচ্ছে ফামিন।
সেই ঘটনার পর অনেক দিন কেটে গেল। এ নিয়ে আমাদের আর কোনো কথাও হলো না। তবে নাজিফা-রাফসানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করি। পড়ালেখা, গ্রুপ স্টাডি, ল্যাবের কাজে পাশাপাশি থাকে তারা, আলাদা সময় কাটায়।
একসময় গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলো। বন্ধুদের কেউ কেউ চাকরিতে ঢুকে গেল। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গেল কয়েকজন। আমি নিজেও বাইরে চলে এলাম। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে যেতে থাকল। দিনে দিনে অনেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসল। এমনই একদিন হোয়াটসঅ্যাপে ফামিনের কল, ‘এই জানিস, নাজিফা আর রাফসানের বিয়ে হয়ে গেছে।’
শুনে আমি খুব একটা অবাক হলাম না; বরং ভালো লাগা কাজ করল, যাক দুজন মানুষকে এক করার নেপথ্যে আমারও ভূমিকা আছে!
এ কথা বলতেই নাফিজাকে টেক্সট করেছিলাম, ‘দিনকাল কেমন যাচ্ছে রে? কেমন আছিস তোরা?’
-------=-=-=-==-------