ঝুমন দাশের জন্য দুটো কথা- শ্রীমান গৌতম হালদার প্রান্ত

ঝুমন দাশের প্রতি দুটো কথা- শ্রীমান গৌতম হালদার প্রান্ত

21 September, 2022

স্রোতের প্রতিকূলে গিয়ে ঝুমন দাস সম্পর্কে কিছু কথা বলব, সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে গঠনমূলক মতামত জানাবেন। কেউ উত্তেজিত হয়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কোন মন্তব্য করবেন না। নিজে নিরাপদ থাকুন এবং অন্যদেরকে নিরাপদ রাখুন........


আসুন জেনে নেই ঝুমন দাসের একটি পোস্টে ওখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কি কি ক্ষতি হয়েছিল......


***সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলায় কমপক্ষে ৮০ টি হিন্দু ঘর বাড়ি ভাঙচুর লুটপাট অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল!

*** কমপক্ষে ১০ টি মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছিল!

*** এই ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ মারাত্মক আহত হয়েছিল!

***সেখানে বসবাসরত ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মা-বোনরা ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল!

***তবে ওখানে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়েছে সেটা হল মনোবল ভেঙ্গে যাওয়া  তারা এখন আর আগের মতো মানসিক শক্তি নিয়ে চলাফেরা করতে পারে না! তাদের মধ্যে সর্বদা ভয় আতঙ্ক বিরাজ করে! এই বুঝি আবার যে কোন সময় হামলা চালায়.....


উপরোক্ত ঘটনার জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী ঝুমন দাশের একটি পোস্ট! ঝুমন দাস কি জেল থেকে বের হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা করা, ঘর তুলে দেওয়া, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলা, যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের ব্যবস্থা করা, ভাঙচুর করা মন্দিরগুলো পুনর্গঠন করা সহ সংখ্যালঘুদের মানসিকভাবে সহযোগিতা করা, এগুলো সে কিছুই করেনি এবং কখনো করতে পারবে না। কারণ তার সেই সমর্থ্য নেই। উল্টো ওখানকার বর্ষিয়ান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিল। বিষয়টা এমন "ঝড়ে কাক মরে ফকিরের কেরামত বাড়ে!"


আচ্ছা এই ঘটনা ঘটার আগে ঝুমন দাশ কি করত??? সে কি কোন সংখ্যালঘু সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল??? সে কি কখনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করেছে??? সে কি কখনো মন্দির ভাঙচুরের বিরুদ্ধে কথা বলেছে??? আগে এসব সে কোন কিছুই করেনি!


এর আগে সে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিল এবং জেল থেকে বের হয়ে সেই রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত! সেটা তার বিভিন্ন পোষ্টের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাহলে সে দ্বিতীয়বার যখন জেলে গিয়েছে অবশ্যই সেই রাজনৈতিক দল তাকে আইনি সহযোগিতা করবে, তার পক্ষ হয়ে রাজপথে কথা বলবে এবং তাকে মুক্ত করে আনবে।

এবার আসি ঝুমন দাস সম্পর্কে মূল বক্তব্যে! ঝুমান দাস আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়েছিল। এই দেশে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রাচীন রাজনৈতিক দল। যে রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। বর্তমানে এই রাজনৈতিক দলটি ক্ষমতায় সরকারিভাবে। এই দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন রয়েছে। এই দলে কোটি কোটি নেতা সমর্থক রয়েছে। দেশে আইন আদালত বিচার ব্যবস্থা রয়েছে।


কেউ যদি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলে, দেশের অস্তিত্ব নিয়ে কথা বলে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করবে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করার যথেষ্ট সমর্থক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রয়েছে। বাংলাদেশে কোটি কোটি আওয়ামী লীগ সমর্থক রয়েছে, তারা যেকোনো সময় যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অতীতের অনেক কঠিন আন্দোলনের সাক্ষী এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি।


এখন আমার কথা হল, তুমি ঝুমন দাস এই দেশের একজন সংখ্যালঘু, তোমার ঘরের ভাত খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে যাওয়া লাগবে কেন??? এই মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দেশের হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক পোস্ট দিয়েছে, প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু তাদের বাড়িতে, এলাকায়, গ্রামের পর গ্রামে হামলা হয়নি, লুটপাট হয়নি, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ হয়নি! কিন্তু তুমি সংখ্যালঘু বলে তোমার এলাকায়.......


ঝুমন দাস তোমার বোঝা উচিত ছিল তুমি একজন সংখ্যালঘু, তোমার কারনে আজ তোমার এলাকার সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে, হারিয়েছে তাদের ধন সম্পদ, এলাকায় বুক ফুলিয়ে চলত, মনে সাহস ছিল, ছিল আত্মসম্মান কিন্তু এখন তারা সব সময় থাকে উৎকণ্ঠায় উদ্বিগ্নে আতঙ্কে! তাদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে! তুমি কি পারবে তাদের হারানো মনোবল ফিরিয়ে দিতে??? তুমি কি পারবে সেই সাবেক শাল্লা ফিরিয়ে দিতে??? কখনোই পারবেনা! 


হ্যাঁ তুমি একটা কাজ করেছ, তাহল সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যালঘুতর করেছ.... আর এর ফল আমাদের ভোগ করতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম! 


সর্বশেষ তুমি গ্রেফতার হয়েছো সেখানেও পোস্টে উস্কানিমূলক কথা ছিল! সেই ঘটনার প্রতিবাদ আমরাও করেছি! প্রতিবাদ অবশ্যই করবো তবে প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে রুচিশীল এবং মার্জিত। সকলের বোঝা উচিত জলে বাস করে কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা যায় না! প্রতিদিন বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় আমাদের ধর্মকে নিয়ে হাজার হাজার কুরুচিপূর্ণ কমেন্টস, অবমাননাকর পোস্ট করা হয়! আমাদের সাথে হাজারটা অন্যায় হয় কিন্তু আমরা কয়টার প্রতিবাদ করতে পারি বা কয়টার বিচার পাই??? তারপরও সকলকে বলব ধৈর্য সহকারে মার্জিত ভাষায় গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ করবেন.......


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ঝুমন দাস গ্রেফতার হওয়ার পর রাজপথে আন্দোলন, সমাবেশ, মানববন্ধন এবং ফেসবুকে আমি নিয়মিত প্রতিবাদ করেছি। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও আমি পোস্ট দিয়েছি। আমিও চাই ঝুমন দাশ মুক্তি পাক এবং ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক।


বিনীত নিবেদক-


শ্রীমান গৌতম হালদার প্রান্ত

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি,

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট,

তাং ২১-০৯-২০২২ ইং।


https://www.facebook.com/pranto.halder.169/posts/pfbid0ZMMuGz6eJbSW2co9dot1QnDyMRX8aAsEY4oQJCwQEGJaghP8rcghYFgcDm9bAkd8l

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ