সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বারানসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদে মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়ে গেল

সুপ্রিমকোর্টের রায়ে বারানসীতে জ্ঞানবাপী মসজিদে মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়ে গেল

নারায়ণ দেবনাথ

১২ সেপ্টেম্বর ২০২২


✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️

বারানসী দায়েরা আদালতের নির্দেশে জ্ঞানবাপী মসজিদের ভেতরে ভিডিও সার্ভে হয়েছিল। সার্ভেতে মসজিদের অজুখানায় শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু মসজিদ কমিটি এই দাবিকে অস্বীকার করে বলে এটি একটি ফোয়ারা এবং মামলাটি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। সুপ্রিমকোর্ট যে কারনে বারানসী আদালতে মামলা হয়েছিল তার বৈধতা রয়েছে বলে রায় দেয়। ফলে বারানসী দায়েরা আদালতে এ মামলা চলতে আর কোন বাধা রইল না। এতে একদিকে মামলা চলবে অন্যদিকে মসজিদে যেখানে শৃঙ্গার গৌরীর বিগ্রহ এবং দেয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্ব রয়েছে সেখানে পূজা-অর্চনা করতে পারবেনা এমন কথা সুপ্রিমকোর্ট বলেনি। এটি নিঃসন্দেহে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাথমিক জয়। একদিন এখানেও বাবা ভোলানাথের মন্দির পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। 


⚜️🌺⚜️🌺⚜️🌺⚜️🌺⚜️🌺⚜️🌺⚜️

ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির।৩৫০ বছর পর উদ্ধার শিবলিঙ্গ।

✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️


ইতিহাস হল স্বয়ম্ভুঃ।স্বেচ্ছায় নিজেকে ধারন করে। আর স্বয়ম্ভু হল শিবের অংশ। যে ইতিহাসের সঙ্গে স্বয়ং শিব জড়িত সে ইতিহাস মুছে ফেলার ক্ষমতা কারো নেই। যে মন্দিরের প্রধান দেবতা শিব-বিশ্বনাথ যিনি বিশ্বেশ্বর নামে পুজিত হন সে মন্দিরের ইতিহাস লুকিয়ে রাখা যায়নি। দীর্ঘ ৩৫০ বছর পর কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের শিবলিঙ্গ উদ্ধার হল জ্ঞানবাপী মসজিদের কূয়ো থেকে। এ এক অবিস্মরনীয় ঘটনা।


১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে জ্ঞানবাপী নামে একটি মসজিদ স্থাপন করেছিল। মসজিদের মধ্যে একটি কূয়ো ছিল। কথিত আছে মন্দির আক্রমণের সময় সেই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত স্বয়ং জ্যোতির্লিঙ্গটি রক্ষার উদ্দেশ্যে সেটি নিয়ে এই কূয়োতে ঝাপ দিয়েছিলেন।


এতদিন সেই ইতিহাস ছিল অন্ধকারে। দেশভাগের পর কংগ্রেস আর বামেরা একটি বিশেষ ধর্মকে পুনঃস্থাপিত করার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে ভারতের ৫ হাজার বছরের পরম্পরা ইতিহাস ঐতিহ্য কৃষ্টি সংস্কৃতি সাধনা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। ইতিহাসে তাজমহল কুতুবমিনার লালকেল্লা কারা তৈরি করেছিল তা পড়ানো হত কিন্তু সোমনাথ মন্দির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির অযোধ্যা কৃষ্ণের জন্মস্থান এবং নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কারা ভেঙেছিল পুড়িয়েছিল তা পড়ানো হত না। ইতিহাস থেকে তারা শিক্ষা নেয়নি বলেই ইতিহাস ফিরে এসেছে নব দিগন্তে আশার দীপ্ত শপথ নিয়ে।


বিশ্বের প্রচীনতম শহর এই কাশী।হিন্দুদের পবিত্রস্থান কাশী ইতিহাসের থেকেও প্রাচীন এবং বিশ্বের সমস্ত সভ্যতার থেকেও প্রাচীন। পুরান থেকে জানা যায় ভগবান শিব কাশী নগর স্থাপন করেছিলেন। হিন্দুদের পবিত্র সপ্তপুরীর মধ্যে কাশীকেও ধরা হয়। স্কন্দ পুরান, মহাভারত, রামায়ণ, ঋকবেদ সহ নানান প্রাচীন গ্রন্থে এই নগরীর উল্লেখ রয়েছে। স্কন্দ পুরানের কাশীখন্ডে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের অস্তিত্বের কথা পাওয়া গিয়েছে। হিন্দুদের বিশ্বাস ভগবান শিব এই মন্দিরে কিছুকাল অবস্থান করেছিলেন।বিশাস করা হয় যে, বিশ্বনাথ এখানে বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধিপতি হিসাবে বাস করেছিলেন। কাশীকে ভগবান শিব-পার্বতীর সবচেয়ে প্রিয়স্থান বলে মনে করা হয়। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে কাশীতে বাবা বিশ্বনাথের নিছক দর্শন পাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং মৃত্যুর পর মোক্ষলাভ হয়। হিন্দুমতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির নামে পরিচিত। ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এই বিখ্যাত মন্দিরটি অন্যতম।


বহুবার মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনঃনির্মিত হয়েছে। ১৪৯০ সালে প্রথম কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরটি প্রথম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। মুঘল সম্রাট আকবর মূল মন্দিরটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে বিশ্বনাথ মন্দিরটি আকবরের নবরত্নদের মধ্যে একজন রাজা টোডরমল নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু ১১৯৪ সালে মুহাম্মদ ঘোরি বারানসির অন্যান্য মন্দিরগুলোর সাথে বিশ্বনাথ মন্দিরটিও ধ্বংস করে দিয়েছিল। পুনঃনির্মানের পর আবার কুতুবউদ্দিন আইবক মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল। ১৩৫১ সালে ফিরোজ শাহ তুঘলক মন্দিরটি পুনরায় ধ্বংস করে। ১৫৮৫ সালে আকবরের নির্দেশে  নবরত্নের এক রাজা টোডরমল মন্দিরটি আবার নির্মাণ করে। এবং ১৬৬৫-৬৯ সালে আওরঙ্গজেব পুনরায় মন্দিরটি ধ্বংস করে সেখানে জ্ঞানবাপী নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করে যার অস্তিত্ব আজও বর্তমান। ১৬৬৯ সালের ১৮এপ্রিল আওরঙ্গজেব কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ধ্বংসের আদেশ দিয়ে একটি ডিক্রি জারি করেছিলেন। কলকাতার এশিয়াটিক লাইব্রেরিতে আজও এই ডিক্রি সংরক্ষিত আছে। তৎকালীন লেখক সাকি মোস্তায়েক খানের লেখা "মাসিদে আলমগিরিতে" এই ধ্বংসের বর্ননা রয়েছে। ১৬৬৯ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর আওরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংসের সমাপ্তির কথা জানিয়েছিলেন। 

যে জাতি তার ইতিহাস ভুলে যায় তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ইতিহাস ফিরে ফিরে আসে তার নিজস্ব গতিতে। এতদিন সুপরিকল্পিত ভাবে ভারতের ইতিহাস ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ডে অষ্টম শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত মুসলিম শাসন সনাতন ধর্ম সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু কোন নির্যাতনই সনাতন ধর্মকে বিলুপ্ত করতে পারেনি। সেই সময় যে সমস্ত মন্দির ভেঙে সেখানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল যা আজও মসজিদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত সে ইতিহাস ভারতের হিন্দুদের জানতে দেয়া হয়নি। ১৯৪৭ সালের পর থেকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতের সব মন্দিরে স্থিতাবস্থা কার্যকর করা হয়েছিল উপাসনা আইন ১৯৯১ বলবৎ করে। অথচ এই আইনটি সংবিধানের ২৫/২৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থনা করার মৌলিক অধিকারকে খর্ব করে। ৩০০ বছর পর প্রমাণ হল কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ভেঙে সেখানে জ্ঞানবাপী মসজিদ বানানো হয়েছিল। আর এখনো প্রমানের অপেক্ষায় রয়েছে, মথুরার শ্রীকৃষ্ণ মন্দির, বারানসীর বিন্দু মাধব মন্দির, ভোজশালায় সরস্বতী মন্দির,কেরালায় আরাথলী মন্দিরের অস্তিত্ব এখন আর নেই। মালদার আদিনাথ মন্দির, আজমেরে সরস্বতী মন্দির, সিদ্ধপুরে রুদ্র মহালয়া মন্দির, বোধনে জৈন হিন্দু মন্দির, শ্রীনগরে কালীমাতা মন্দির, বিদিশায় সূর্য মন্দির, জৈনপুরে আটলা দেবী মন্দির। এই সব মন্দির ভেঙে সেখানে করা হয়েছে মসজিদ।

 

ইসলাম যদি শান্তির ধর্ম হয়ে থাকে বা দখলদারি নৃশংস অত্যাচারের ধর্ম না হয়ে থাকে তাহলে তাদের সুবুদ্ধির উদয় হবে এটাই প্রত্যাশিত। নইলে সনাতনী কায়দায় সব মন্দির উদ্ধার হবে যেভাবে সোমনাথ এবং রাম মন্দির উদ্ধার হয়েছে। 


https://www.facebook.com/debnath.narayan.127/posts/pfbid04HvQTDGpn3TvjBwSAEnAam9Rq2sYjFNnNzJjHXttKmmYu2cp8gfcKkDfB3Ju2KC1l

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ