বন্ধ করে দেওয়া হলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ী মেলা

কুণ্ডুবাড়ী মেলা বন্ধে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ছবি : ইনডিপেনডেন্ট
কুণ্ডুবাড়ী মেলা বন্ধে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ছবি : ইনডিপেনডেন্ট

রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর, প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম


মাদারীপুরের কালকিনিতে বন্ধ করে দেওয়া হলো শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুণ্ডুবাড়ী মেলা। প্রায় আড়াই শ বছরের পুরোনো এ মেলা প্রতিবছর কালিপূজায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর তা আর হচ্ছে না। প্রশাসনের দাবি, স্থানীয় জনগণ ও আলেম সমাজ এ মেলা আয়োজনে আপত্তি জানায়। এ কারণে প্রশাসন মেলা আয়োজনে অনুমতি দেয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ।


উত্তম কুমার দাশ ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, 


‘কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটার কুণ্ডুবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কালিপূজাকে কেন্দ্র করে মূলত সপ্তাহব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এ মেলা এবারও অনুষ্ঠানের জন্য কালকিনি পৌরসভা থেকে আকবর হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় আলেম সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধিরা মেলায় আইন‑শৃঙ্খলার অবনতিসহ বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে মেলা বন্ধ করার জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কালকিনি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন এবার মেলা আয়োজন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।’


তবে মেলা বন্ধ থাকলেও মন্দিরটিতে কালিপূজা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, 


‘ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কুণ্ডুবাড়ীর কালিপূজা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। তবে পূজাকে কেন্দ্র করে হওয়া শুধু মেলা বন্ধ থাকবে।’


এ বিষয়ে মেলা আয়োজনের ইজারাদার আকবর হোসেন বলেন, 


‘প্রায় আড়াই শ বছর ধরে কুণ্ডুবাড়ীর মেলা হয়ে আসছে। কেউ কোনোদিন কোনো প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু এবার প্রশাসনের কাছে হুজুররা (আলেম সমাজ) আইন‑শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করে মেলা না করার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু তারা আমার কাছে এসে বলেছে, হিন্দুদের মেলায় মুসলমানরা যাবে না। তাই এখানে মেলা করা যাবে না। আমাকে তারা মেলা না করার জন্য নিষেধ করেছে।’


মেলা না হওয়ায় আর্থিক লোকসানের মুখে পড়বেন জানিয়ে ইজারাদার আকবর হোসেন আরও বলেন, 


‘আমি পৌরসভা থেকে মেলার ইজারা নিয়ে কয়েক শ দোকানির কাছে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছি। এসব দোকানিরা ঋণ করে লাখ লাখ টাকার মালামাল মেলায় বিক্রির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এখন এই মেলা না হলে এসব দোকানি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়বে। তাছাড়া আমারও আর্থিক অনেক ক্ষতি হবে। আমি এ বিষয়ে দ্রুতই পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’


মেলা না হওয়ায় স্থানীয়দের অনেকেই অখুশি। কালকিনি উপজেলার ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা দলিল উদ্দিন হাওলাদার বলেন,


‘আমি ছোটবেলা থেকেই কুণ্ডুবাড়ীর মেলায় যাই। মেলায় বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনি। আমি আমার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের নিয়েও এই মেলায় অনেকবার গিয়েছি। কই কখনো তো কোনো ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কথা শুনিনি। কিন্তু এবার শুনতেছি আলেম সমাজ আপত্তি জানিয়েছে। এসব নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক না।’


মেলা না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্দির কমিটির উপদেষ্টা বাসু দেব কুণ্ডু বলেন, 


‘দিপাবলী ও শ্রী শ্রী কালিপূজা উপলক্ষে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই মেলা আয়োজন করে আসছে। এবার মেলা কারা বন্ধ করে দিয়েছে–এটি আপনারা খুঁজে বের করুন। বাজারে কারা ব্যানার টাঙিয়েছে মেলা না করার জন্য–সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনাদের। আর বেশি কিছু বলে আমরা বিপদে পড়তে চাই না। আমরা আমাদের পূজা নিয়ে থাকব।’


সূত্র: ইন্ডিপিন্ডেন্ট টিভি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ