নওগাঁয় রাতের আঁধারে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর |
জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ, অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ১১:২৪ পিএম
নওগাঁয় রাতের আঁধারে প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে। অভিযোগ দূর্বৃত্তরা ত্রিশুলসহ প্রতিমার মাথার চুল, মুকুট ও গলার মালা নিয়ে গেছে। সদর উপজেলার বালুভরা এলাকার সন্ন্যাস তলার রাধা গোবিন্দ এবং সন্ন্যাস মন্দিরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত কোনো একসময় ভাঙচুরসহ চুরির এই ঘটনা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার ১৫ অক্টোবর বিকেলের দিকে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ঘোষপাড়া, মধ্য পাড়া, ভাটো পাড়া, হরিহারপুর ও পালপাড়াসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাধাগোবিন্দ প্রতিমার দুটো আঙুল ভাঙা। পড়ে আছে নিচে। বাহিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙাচোরা জিনিস। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের অসংখ্য নারী পুরুষ হতাশার ছাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
সেখানে কথা হয় সন্ন্যাস তলার রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ কুমার ঘোষের সাথে। তিনি হতবিহ্বল হয়ে ক্ষোভের সহিত বলেন, আমার ৭৫ বছর বয়সে এরকম ঘটনা দেখিনি। আমরা সকলে মিলে এখানে পূজা করে থাকি। এখানে জেলার সর্ববৃহৎ হরিবাসর হয়ে থাকে। যেখানে প্রায় ৪০-৫০ হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে ভালো কিছুর আশায় মানত দেয়। আমাদেরকে অন্যান্য ধর্মের লোকজনও সহযোগিতা করে থাকে। আজকের এই ঘটনায় আমরা স্থানীয় হিন্দু সমাজ হতবিহ্বল হয়ে গেছি।
ভাঙচুরকৃত প্রতিমা |
স্থানীয় ও মন্দির সংশ্লিষ্টরা জানান, মঙ্গলবার সকালে পূজা দেয়ার জন্য মন্দিরে এসে শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ এবং শ্রী শ্রী সন্ন্যাস মন্দিরে রাখা তিনটি প্রতিমা ভাংচুর, ত্রিশুলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করেছে। স্থানীয় অশোক কুমার ঘোষ, সুমন কুমার ঘোষ, উজ্জ্বল কুমার মহন্ত, কল্যাণী মহন্ত, মলি রানি, সিতি রানী জানান, আমাদের এই মন্দিরটি জাগ্রত। প্রায় প্রতিদিন পূজা শেষে মন্দিরে তালা দেওয়া হয়। প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার ১৫ই অক্টোবর সকালে স্থানীয় বিমল ঘোষ সন্ন্যাস তলার এই মন্দিরে পূজার জন্য আসে। এরপর তিনি শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ প্রতিমার হাতের আঙুল ভাঙা, চুল, মাথার মুকুট নেই। নিচে থাকা পূজা দেওয়ার জিনিস নেই। এবং পাশে সন্ন্যাস ঠাকুরের ত্রিশুল নেই, পরনের বস্ত্র খোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব দেখে বিমল গ্রামে গিয়ে আলোচনা করলে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি জানতে পেরে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলস্বীরা মন্দির প্রাঙ্গনে আসেন। মন্দিরে তালাবদ্ধ থাকায় রাতের অন্ধকারে লাঠি দিয়ে দুর্বৃত্তরা অঘটন ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। বিষয়টি নওগাঁ থানায় জানালে থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসেন।
স্থানীয় ও মন্দির সংশ্লিষ্টরা জানান, সনাতন ধর্মাবলস্বীদের মধ্যে ভয়ভীতি তৈরী করতে এই ঘটনা ঘটানো হতে পারে। দ্রুত এই ঘটনার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এলোমেলো পড়ে থাকা মন্দিরের জিনিসপত্র |
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নওগাঁ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলার সভাপতি মাধব চন্দ্র কর্মকার। তিনি বলেন, এই ঘটনাতে আমরা হিন্দু সমাজ আতংকিত হয়ে পড়েছি। তাই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ নুরে আলম সিদ্দিকী মুঠোফোনে বলেন, আমি খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রতিমার দুটো আঙুল ভাঙা আছে। কমিটির লোকজনকে থানায় আসতে বলেছি। তারা আসলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনাস্থলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, সন্ধা হতেই এখানে আশপাশেসহ দূরদূরান্তের মাদকসেবীদের আড্ডা হয় এবং যা গভীর রাত পর্যন্ত চলে। আশেপাশে বাড়িঘর না থাকার সুযোগে মাদকের আড্ডা জমে।
অপরদিকে পাশে সর্বোচ্চ ১০০ ফিট দূরে থাকা ঈদগাহ মাঠ দেখিয়ে দিয়ে তারা বললেন, আমরা প্রায় কয়েক যুগ থেকে এভাবেই একে অপরের ধর্ম পালন করে এসেছি। কোনোদিন সমস্যা হয়নি। আজকের এই ঘটনায় আমরা হতবিহ্বল। তাই এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
# খবরের সূত্র NCN (North Capital News)
0 মন্তব্যসমূহ