যশোরে হামলা লুটপাট আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা | নেত্রকোনা সুনামগঞ্জে পাহারায় বিএনপি, মাদ্রাসার ছাত্র

যুগান্তর ডেস্ক, ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম


যশোরের বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও চৌগাছায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসব ঘটনায় অনেকেই ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে নেত্রকোনায় ধর্মীয় উপাসনালয় মন্দির, গির্জাসহ দোকানপাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাহারার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ শহরের মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহারা দিচ্ছেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-


যশোর : জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন। অসংখ্য পরিবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। আমরা অসংখ্য মানুষের ফোন পাচ্ছি। তাদের আর্তনাদ শুনছি। কার কাছে অভিযোগ দেব, বুঝতে পারছি না।


তিনি আরও জানান, বিএনপির নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ রয়েছেন। তাদের ইউনিটগুলোর মাধ্যমে অনেক জায়গায় নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছেন। জানা যায়, সোমবার কয়েক শ লোক বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকানে হামলা চালায়। এর মধ্যে ২০টির মালিক হিন্দু। হামলাকারীরা দোকান ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। এরপর রাতে ১০ থেকে ১২ জন রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে গ্রামের লিটন কুন্ডুর বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে তিন ভরি স্বর্ণালংকার এবং ২ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে শিমুল সাহার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। সোমবার রাতে উপজেলার শালবরাট গ্রামের হিন্দুপাড়ায় হামলা চালায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। এ পাড়ায় ৬৫টি হিন্দু পরিবার বসবাস করে। তারা দুটি পরিবারের কাছে চাঁদা দাবি করে। তাৎক্ষণিকভাবে টাকা দিতে না পারায় তারা একজন বৃদ্ধকে পিটিয়ে আহত করে। তারা একজনের বাড়ি থেকে তিনটি গরু এবং অপর একজনের বাড়ি থেকে দুটি ছাগলও নিয়ে গেছে। উপজেলার সেকেন্দারপুর গ্রামে একদল মুখোশধারী তিনটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। সোমবার ভোর পর্যন্ত বাঘারপাড়ার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি হিন্দু বাড়িতে চার দফা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।


চৌগাছার বল্লভপুর গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের চাষ করা বাঁওড়ের (জলাশয়) প্রায় ৪০ লাখ টাকার মাছ লুট করেছে সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত ২০০-২৫০ জন বাঁওড়ে জাল ফেলে মাছ লুট করে নিয়ে যায়। প্রকাশ্যে লুট হলেও কেউ ঠেকাতে পারেনি। বল্লভপুর মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা বলেন, এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন সরকারি ইজারা নেওয়া বাঁওড়টি দখলের পাঁয়তারা করছিল। সন্ত্রাসীরা এখন বাঁওড়ের মাছ লুট করে নিচ্ছে। বাধা দিতে যাওয়ার সাহস পাইনি আমরা। হিন্দুপল্লিতে রাতের আঁধারে হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।


নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় ধর্মীয় উপাসনালয় মন্দির, গির্জাসহ দোকানপাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাহারা দিচ্ছেন জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে জেলা শহরসহ জেলার ৮৬ ইউনিয়নে বসানো হয়েছে এই পাহারা। জেলা বিএনপির নেতারা দুপুরে শহরের বিভিন্ন এলাকার মন্দির পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা শহরের বড়বাজার, ছোটবাজার, আখড়ার মোড়, শহিদ মিনার মোড়, মোক্তারপাড়া ও কুড়পাড় এলাকায় ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খুলে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করার পরামর্শ দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুর রহমান পাঠান, এসএম মনিরুজ্জামান দুদু, সদস্য ফরিদ আহমেদ, মেহেরুল আলম রাজু, জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন খান মিলকী, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরীসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতারা।


জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আহ্বানে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংখ্যালঘুরাসহ ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে পাহারার ব্যবস্থা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় পাহারার ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও তারা জানান। উল্লেখ্য, সোমবার রাতে নেত্রকোনার মদন, খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা মোহনগঞ্জ থানায় প্রবেশ করে পুলিশের দুটি গাড়িসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়াও জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হামলার খবর পাওয়া গেছে।


সুনামগঞ্জ : শহরের মন্দিরের নিরাপত্তা দিতে পাহারা দিচ্ছেন কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। সোমবার রাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলার খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক, মাদ্রাসার ছাত্ররা শহরের বিভিন্ন মন্দিরে অবস্থা নিয়ে পাহারা দিতে শুরু করেন। মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর থেকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের মন্দিরের সামনে বসে পাহারার ব্যবস্থা করেন।


ছাত্রদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সুনামগঞ্জের কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবুও ফজরের পর থেকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা সুনামগঞ্জের সব মন্দিরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ মহতী উদ্যোগের প্রশংসা করে স্বাগত জানিয়েছেন।


সুনামগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক আম্মার আহমদ জানান, সুনামগঞ্জ অসাম্প্রদায়িক শহর। এ শহরে আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে থাকি। হিন্দুরাও আমাদের ভাই-বোন। তাই তাদের নিরাপত্তা ও তাদের অভয় দিতে মন্দিরের সামনে অবস্থান নিয়েছি। যে কদিন লাগে আমরা শহরের মন্দিরগুলোয় পাহারা দিয়ে যাব, ইনশাল্লাহ।


সূত্র: যুগান্তর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ