কাল আমার এক মেরিনার ছোটভাইয়ের পোস্টে এক সিনিয়র মেরিনারের সাথে ধর্ম নিয়ে ছোট্ট আলাপচারিতায় চেষ্টা করেছি ধর্ম নিয়ে তার ভুল ধারণাটা ভেঙে দেওয়ার। যেহেতু আলোচনা অসম্পূর্ণ এবং তিনি আর কোন রিপ্লাই দেন নি তাই ফলাফলও অসম্পূর্ণ। আপনাদের সাথে ছোট্ট আলাচনাটি শেয়ার করলাম।
★ আল-মাহমুদ ভাই: ধর্ম মানুষকে শোষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয় ...। যে ধর্মই হোক ...
★ আমি: ধর্ম ও রিলিজিয়ন কিন্তু আলাদা। তাই শোষণের দায় ধর্মের উপর না দিয়ে রিলিজিয়নের উপর দিন, কারণ শোষণ মাত্রই অধর্ম।
★ আল-মাহমুদ ভাই: অনিক সাহা আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি না ।। কিন্তু ধর্ম এবং রিলিজিওন দুটো শব্দ মাত্র ... একই ভাবার্থে ব্যাবহৃত ...
★ আমি: না, ব্যুৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়েও দু'টো আলাদা শব্দ। রিলিজিয়ন টিকে থাকে কেবল বিশ্বাসের উপর, কিন্তু ধর্মের মূলমন্ত্র হলো কর্ম। ধর্ম শব্দের ইংরেজি কদাপি রিলিজিয়ন হতে পারে না।
★ আল-মাহমুদ ভাই: কীভাবে?
★ আমি: ধর্ম শব্দটি এসেছে ধৃ ধাতু থেকে৷ এর অর্থ হচ্ছে ধারণ করা। স্মৃতি শাস্ত্রে ধর্মের ১০টি লক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এই ১০টি লক্ষণ যদি কেউ তার কর্মে, আচারে ও চিন্তাধারায় ধারণ করে তবেই সে ধার্মিক। এই ১০টি লক্ষণের মধ্যে "বিশ্বাস" শব্দটিই নেই৷ অর্থাৎ, কেউ যদি এই ১০টি লক্ষণ বা সৎগুণ নিজের মধ্যে ধারণ করে তবে সে ঈশ্বরে বিশ্বাস না আনলেও সে ধার্মিক হিসেবে বিবেচিত হবে।
অন্যদিকে রিলিজিয়নের ভিত্তিই হলো বিশ্বাস। এখানে শুরুই হয় "আমি আজ হতে আমার আমার স্রষ্টার উপর বিশ্বাস আনলাম" প্রতিশ্রুতি দিয়ে...
তাই স্পষ্টত ধর্ম ইংরেজি রিলিজিয়ন বা রিলিজিয়নের বাংলা ধর্ম হতে পারে না। রিলিজিয়নের বাংলা হতে পারে "বিশ্বাস".... অন্যদিকে ধর্মকে আমরা ইংরেজিতেও Dharma লিখি।
★ আল-মাহমুদ ভাই: তবে উইকিপিডিয়া রেলিজিয়ন এর সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে --Religion is a range of social-cultural systems, including designated behaviors and practices, morals, beliefs, worldviews, texts, sanctified places, prophecies, ethics, or organizations, that generally relate humanity to supernatural, transcendental, and spiritual elements although there is no scholarly consensus over what precisely constitutes a religion.Different religions may or may not contain various elements ranging from the divine sacredness, faith, and a supernatural being or beings.
★ আমি: আপনার উইকিপিডিয়ার দেওয়া ডেফিনিশনের সাথেও ধর্ম শব্দের মূল অর্থ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই আপনার দেওয়া সংজ্ঞা থেকেও ধর্মের ইংরেজি রিলিজিয়ন করা যাচ্ছে না।
★ আল-মাহমুদ ভাই: আপনি স্মৃতি শাস্ত্রের কথা বললেন রেফারেন্স হিসেবে। কেন এ রেফারেন্স দিলেন? কারণ এ শাস্ত্রে আপনি বিশ্বাস করেন। একজন জাপানিজ কে এ প্রশ্ন করলে সে কিন্তু স্মৃতি শাস্ত্রের রেফারেন্স দিবেনা, কারণ এর উপর তার বিশ্বাস নেই। যেকোন ধর্মই এই বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল যুক্তির উপর নয়। ধর্মিয় দর্শনকে যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, তার প্রথম শর্ত হল বিশ্বাস।
★ আমি: না, আমি বিশ্বাসের উপর স্মৃতিবাক্যের রেফারেন্স দেই নি বরং বিচারবিবেচনা করেই দিয়েছি। কেন? কারণ স্মৃতিতেই বলা আছে যে শাস্ত্রবাক্যও বিচারবিবেচনা করে গ্রহণ করতে। স্মৃতিতে ধর্মের যে ১০টি লক্ষণ সেখানে কোথাও নিজ স্বার্থ, বিশ্বাস, লাভ-লস -এর হিসেব নেই বরং এগুলো সম্পূর্ণ জনহীতকর সৎগুণ। তাই আমি যথাযথ বিবেচনায়ই এই স্মৃতিবাক্যকে ধর্মবাক্য হিসেবে গ্রহণ করেছি। লক্ষণগুলি কি কি? সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয় সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধ হীনতা। একটা পৃথিবীকে সর্বোতভাবে সুন্দর করতে এই দশটি গুণই যথেষ্ট এবার এগুলো কোন জাপানিজের মধ্যে থাকুক বা কোন আফ্রিকানের মধ্যে।
0 মন্তব্যসমূহ