কাঠমোল্লারা আপনাকে যে দুটো প্রশ্ন দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে তার উত্তর

 ধর্মান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করতে মুসলমান কাটমোল্লারা আপনাকে যে দুটো প্রশ্নের মাধ্যমে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে তা হলো:


  • ১। বেদে প্রতিমাপূজা নাই, দেখুন প্রমাণসহ (আপনাকে রেফারেন্স দেখিয়ে বুঝাবে প্রতিমাপূজা ঠিক নয়)।
  • ২। ঈশ্বর নিরাকার, দেখুন বেদের প্রমাণসহ (আপনাকে রেফারেন্স দেখিয়ে বুঝাবে সাকার উপাসনা ঠিক নয়)।


এই দুই প্রশ্নে আপনাকে বিভ্রান্ত করার পর সে এটা বুঝাতে চাইবে যে, ইসলাম হলো সত্য ধর্ম, তাই ইসলামে ফিরে আসো এবং আল্লাহ্’র উপাসনা (এবাদত) করো।। 


শুভঙ্করের ফাঁকিটা এখানেই আছে। তাই এবার আপনার পক্ষ থেকে কাউন্টারের পালা।


প্রশ্ন ১-এর বিপরীতে আপনার উত্তর: বেদে প্রতিমাপূজা নাই, কিন্তু পুরাণ ও তন্ত্রে আছে। বেদের উপাসনা উচ্চমার্গীয়-এ কথা সত্য, কিন্তু তাই বলে পুরাণ ও তন্ত্র অনুসারে কেউ যদি পূজার্চনা করে তাহলে সেটিকে আপনারা ভুল বলতে পারেন না। কেননা, আপনাদের কোরআনে সালাত (নামাজ) আদায়ের কথা থাকলেও ৫ ওয়াক্ত নামাজের সময় দেওয়া নাই, অথচ আপনারা হাদিস অনুসারে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আপনারা যদি হাদিস অনুসারে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারেন, তাহলে আমরা কেন পুরাণ ও তন্ত্র অনুসারে প্রতিমাপূজা করতে পারব না? ভারতীয় উপমহাদেশে এই গ্রন্থগুলোকে শাস্ত্রের মর্যাদা দেওয়া হয়নি? এগুলো সনাতন ধর্মের শাস্ত্র নয়? যেহেতু এগুলো সনাতন ধর্মের শাস্ত্র, সেহেতু কেউ যদি বেদোক্ত উপাসনা না করতে পেরে পুরাণোক্ত পূজার্চনা করে তাহলে সেটিকে অনৈতিক বলার অধিকার আপনার মতো মোল্লার নাই।


টীকা:

  • - বেদে ঈশ্বরের মূর্তি নাই (যজুর্বেদ: ৩২/৩)।
  • - প্রতিমাপূজা আছে (দেবী পুরাণ: অধ্যায়: ৬০, ৬১, ৬৫, ৯৯ ইত্যাদি)।
  • - কোরআনে নামাজের (সালাত আদায়) উল্লেখ থাকলেও ৫ ওয়াক্ত নামাজের উল্লেখ নাই (২/৪৩), (২/১১০), (২৯/৪৫), (৩১/১৭) ইত্যাদি। 
  • - হাদিসে ৫ ওয়াক্ত নামাজের উল্লেখ (সহীহ বুখারী: ইসলামিক ফাউন্ডেশন নম্বর: ৫০৩, আন্তর্জাতিক নম্বর: ৫২৮)।


প্রশ্ন ২-এর বিপরীতে আপনার উত্তর:


 ঈশ্বর নিরাকার-একথা সনাতনী মাত্রই স্বীকার করে। আমরা সৃষ্টিকর্তার যে সাকার মূর্তি তৈরি করি তা শ্রেষ্ঠ আচার্যগণ কল্পনা করে নিয়েছেন। কিন্তু এর সাথে ইসলাম ধর্মের সৃষ্টিকর্তার কোনো মিল নাই। কেননা, ইসলাম ধর্মের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ নিরাকার নয়, সাকার। আল্লাহ্’র হাত, হাতের আঙ্গুল, পা, চক্ষু, রং, সিংহাসন ইত্যাদি রয়েছে। একথা ইসলামিক স্কলারগণ কোরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণ দিয়েছেন এবং তাদের দাবি এই যে, আল্লাহকে নিরাকার মনে করার প্রবণতা হিন্দুধর্ম থেকেই প্রাপ্ত করা। সুতরাং কোনো মোল্লা যদি ঈশ্বরকে নিরাকার প্রমাণ করে তাহলে এর অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহ্’র সাথে ঈশ্বরের সাদৃশ্য রয়েছে এবং সেজন্য আল্লাহ্’র উপাসনা করতে হবে। বরং সনাতন ধর্মের বিধান অনুসারেই নিরাকার ঈশ্বর অর্চিত হবে।


টীকা: 

  • - ঈশ্বর নিরাকার (যজুর্বেদ: ৩২/৩; ব্রহ্মসূত্র: ৩/২/১৪; মুণ্ডক উপনিষদ: ১/১/৬, ২/১/২; কঠ উপনিষদ: ১/২/২২, ১/৩/১৫; প্রশ্ন উপনিষদ: ৪/১০; শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ: ৩/১০, ৫/১৪; তৈত্তিরীয় উপনিষদ: ২/৭/২ ইত্যাদি)।
  • - মূর্তি আচার্যগণের কল্পনা (সত্যার্থ প্রকাশ-দয়ানন্দ সরস্বতী; বাণী ও রচনা-স্বামী বিবেকানন্দ; হিন্দুধর্ম-স্বামী নির্বেদানন্দ; হিন্দুধর্মের সারতত্ত্ব-ড. দুর্গাদাস বসু; ঔপনিষদ ব্রহ্ম-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; হিন্দুধর্ম্মের শ্রেষ্ঠতা-রাজনারায়ণ বসু ইত্যাদি)।
  • - আল্লাহ্’র সিংহাসন বা আরশ (কোরআন: ১৩/২, ৪০/৭ ৫৭/৪ ইত্যাদি)।
  • - আল্লাহ্’র হাত, হাতের আঙ্গুল ও হাতের মুঠো (কোরআন: ৪৮/১০, ৫/৬৪; সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন): ৭৪১২,১৩,১৪ ইত্যাদি)।
  • - আল্লাহ্’র রং (কোরআন: ২/১৩৮)।
  • - আল্লাহ্ নিরাকার নয়, সাকার; এবং ‘আল্লাহ্ নিরাকার-এই মতবাদ হিন্দু ধর্ম থেকে নেওয়া’-এই বিষয়ে ইসলামিক স্কলারদের মতামত (সহীহ বুখারী: তাওহীদ পাবলিকেশন নম্বর: ৪৮১১, টীকাদ্রষ্টব্য)।
  • - নিরাকার ঈশ্বরের দ্বিসন্ধ্যোপাসনা (অথর্ববেদ: ১৯/৫৫/৩, মনুস্মৃতি: ২/১০১-১০২)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ