নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা, প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৩
নীরবেই চলে গেলেন আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল (৫৩)। তাঁকে বাঁচাতে ধারদেনায় ডুবে স্ত্রী-মেয়ের সাত দিনের লড়াই ব্যর্থ করে গতকাল সোমবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে লক্ষ্য করে অন্য সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলি মাথায় লেগেছিল সেখান দিয়ে যাওয়া ভুবনের। কর্মস্থল থেকে তিনি ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে আরামবাগের মেসে ফিরছিলেন। ওই রাত থেকেই তিনি পপুলার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
১৮ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই একমাত্র মেয়ে ভূমিকা রানী শীলকে নিয়ে হাসপাতালে ছিলেন ভুবনের স্ত্রী স্কুলশিক্ষক রত্না রানী শীল। আর্থিক সংকটেও ধারদেনা করে চিকিৎসা চালিয়েছেন। শনিবার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে দুটি স্প্লিন্টার বের করা হয়। আশায় ছিলেন, স্বামীর জ্ঞান ফিরবে, সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু তা হলো না। গতকাল দুপুরে হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছেন রত্না। স্মৃতিচারণা করছেন। তিনি বলেন,
‘আমার মেয়েটা বাবাকে ছাড়া কিছু বুঝত না। তার বাবা নীরবে চলে গেল। আমার মেয়েটা এত অভাগা, তার ছোট ছোট স্বপ্নও আর পূরণ হবে না।’
এ সময় আশপাশে থাকা স্বজনেরা রত্নাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভূমিকা এবার এসএসসি পাস করেছে।
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে রত্না বলেন,
‘আমার স্বামী তো চলেই গেল। যারা তাঁকে গুলি করেছে, তাদের বিচারটা যেন হয়। এভাবে যেন আর কোনো সন্তানের বাবাকে এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে যেতে না হয়।’
রত্না নোয়াখালীর মাইজদীর অরুণ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক। মেয়েকে নিয়ে তিনি মাইজদীতেই থাকেন। তিনি বলেন, তিনিও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য কয়েকবার ভারতে গেছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর আবার চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের।
রত্নার ভাই পলাশ চন্দ্র আজকের পত্রিকাকে বলেন,
ভুবনের চিকিৎসার বিল হয়েছে ৮ লাখ টাকা। সব বিল শোধ করে বেলা ২টার দিকে মরদেহ বের করা হয়েছে। একজন মানুষ রাস্তায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হলেও প্রশাসনের কেউ সহায়তা করেনি, খোঁজও নেয়নি। বেসরকারি একটি ফাউন্ডেশন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা ধারদেনা করে জোগাড় করা হয়েছে।
ভুবনের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন,
‘এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায় এবং দায়িত্ব দুটিই ছিল।’
পপুলার হাসপাতাল থেকে ভুবনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা মরদেহ নিয়ে ফেনীর পরশুরামে ভুবনের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। রত্নার আরেক ভাই আকাশ মজুমদার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, গ্রামে ভুবনের সৎকার হবে।
তিন মাস আগে জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুনকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিল সন্ত্রাসীরা। সেই গুলিই লেগেছিল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ভুবনের। এ ঘটনায় মামলা করেন রত্না। পুলিশ বলছে, কারাগারে আটক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের পরিকল্পনায় ওই হামলা হয়। মামুন ও ইমন দুজনেই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক গতকাল বলেন,
সন্ত্রাসীদের একজন মারুফ বিল্লাহ হিমেলকে (৩৬) সন্ধ্যায় পুরান ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রত্নার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক বি এম রানা বলেন,
ভুবন মারা যাওয়ায় আগের মামলাটিই হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করা হবে।
সূত্র: আজকের পত্রিকা
0 মন্তব্যসমূহ