বি.এম কলেজে মসজিদ আছে মন্দির নাই

বি.এম কলেজে মসজিদ আছে মন্দির নাই


বরিশাল, সময়ের অনুসন্ধান


বি.এম কলেজে মসজিদ আছে মন্দির নাই ।। মোঃ ইমন খন্দকার হৃদয় ॥ পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও বাংলাদেশের সংবিধান অন্য ধর্মালম্বীদের তাদের ধর্ম পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা ও সমঅধিকার দিয়েছে।


যেখানে কোন বৈষম্যের স্থান নেই। কিন্তু বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ব্রজমোহন কলেজে বৈষম্যর চিত্র দেখা যায়। এখানে তিনটি মসজিদ থাকলেও, ১৩৪ বছর ধরে কোন মন্দির নেই অথচ এই কলেজটি দাঁড়িয়ে আছে একজন হিন্দুলোকের দেয়া জমিতে। এই কলেজের হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাদের ধর্ম পালন থেকে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার।


এ নিয়ে তারা কয়েক যুগ ধরে আন্দোলন করলেও এবং বারে বারে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও আশানুরূপ কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। বি.এম কলেজে প্রায় সাত হাজার হিন্দু শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মসজিদ- গির্জা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।


তারা চায় একই ক্যাম্পাসে মসজিদ- মন্দির থাকবে। যে যার ধর্ম পালন করবে কারো প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ থাকবে না। এ সম্পর্কে সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শুভদীপ নট্ট সময় বার্তাকে বলেন,


”বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে সকল ধর্মের অধিকার সমান কিন্তু আমরা বৈষম্যের শিকার। আজ বি.এম কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৩৪ বছর হয়ে গেল অথচ আমাদের একটি উপাসনালয় মাত্র নেই। আমাদের হয়তোবা কখনো ক্লাসরুমে, কখনো মাঠে, কখনো রাস্তায় পূজা করতে হয়। মাঠে বেশিরভাগ সময় জল থাকে তাই অনেক সময় আমরা পূজা করতে পারি না। আমাদের যদি নির্দিষ্ট একটি স্থান থাকতো তবে আমরা সেখানে উপাসনা করতে পারতাম”। 


বি.এম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম সময়ের বার্তা কে বলেন,


”ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কোন বৈষম্য করেনি। আমি আমার ক্যাম্পাসের মসজিদে নামাজ পড়ি অথচ আমার হিন্দু বন্ধুটি তার ধর্মচর্চা থেকে বঞ্চিত। যা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগে। আমরা ক্যাম্পাসে মিলেমিশে থাকতে চাই। তাই কর্তৃপক্ষকে আমি একজন মুসলিম হিসাবে, একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেব বলতে চাই বি.এম কলেজে অনতিবিলম্বে কেন্দ্রীয় মন্দির নির্মাণ করা হোক”।


সরকারি বি.এম কলেজে মন্দির প্রতিষ্ঠায় হিন্দু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে কিনা? হিন্দু শিক্ষার্থীরা কোন আন্দোলন -সংগ্রাম অব্যাহত রাখছে কিনা? এমন প্রশ্নে বি.এম কলেজ সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি তন্ময় চন্দ্র দাস সময়ের বার্তাকে বলেন, 


”আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়েছে অথচ একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে আমাদের আন্দোলন করতে হয়। যা এই দেশের নাগরিক হিসেবে খুব লজ্জার।

আমাদের বি.এম কলেজে মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে যুগ যুগ ধরে হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন – মানববন্ধন করে যাচ্ছে। আমরা একাধিকবার অধ্যক্ষ কে জানিয়েছি তার বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু তারা বলে এটা প্রসেসিং এ আছে। প্রসেসিং এ থাকতে থাকতে নানা অধ্যক্ষ চলে যায়।

কিন্তু আমাদের মন্দির হয় না। এটি আমাদের ন্যায্য দাবি। অবশ্যই বি.এম কলেজে হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য মন্দির নির্মাণ করতে হবে”। 


বি.এম কলেজে মন্দির প্রতিষ্ঠা নিয়ে সকল সাধারণ মুসলিম শিক্ষার্থীরা সমর্থন জানিয়েছে। যা মানবতার অন্যতম দৃষ্টান্ত।


এমন অনুভূতি প্রকাশ করে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ ইমাম হাসান সময়ের বার্তা কে বলেন, 


”বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তিনি বলেছেন অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে বাধা দিলে তিনি কিয়ামতের ময়দানে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে নালিশ দিবেন। অন্য ধর্মালম্বীদের প্রতি ইসলাম অনেক উদার। মারামারি- হানাহানি -দাঙ্গা- হাঙ্গামা – বৈষম্য ইসলামের শিক্ষা না। এখানে মুসলিমদের জন্য মসজিদ রয়েছে কিন্তু হিন্দুদের জন্য মন্দির নাই। এটা ইসলামের শিক্ষা না। তাই এখানে মন্দির নির্মাণ করে তাদের ধর্ম পালন করার ব্যবস্থা করে দেয়াই শ্রেয়”।



অন্য ধর্মাবলম্বীদের সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? বি.এম কলেজে মন্দির স্থাপনে ইসলাম কি বলে? ইসলামে কোন বৈষম্য রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে বি.এম কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুমিন সময়ের বার্তা কে বলেন,


”আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন ও হাদিসে একাধিকবার মহান আল্লাহপাক এবং নবী করিম (সাঃ) অন্য ধর্মালম্বীদের স্বাধীনতা, অধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে একাধিকবার আলোকপাত করেছেন। যেখানে উঠে এসেছে একজন মুসলিম যতোটুকু তার অধিকার পাবে ঠিক একই ভাবে অন্য ধর্মালম্বী মানুষেরাও ততটুকু অধিকার পাবে। ইসলামে কোন বৈষম্য নেই। সেই ক্ষেত্রে আমি নিজেই দীর্ঘদিন যাবত দেখছি, বি.এম কলেজে কোন মন্দির নেই, যা দুঃখজনক। ইসলাম যৌক্তিক দাবিকে সর্বদা সমর্থন করে। তাই এই মন্দির নির্মাণ হিন্দু শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি। যাকে অবশ্যই ইসলাম সমর্থন করে। ইসলাম মানবতার ধর্ম,সাম্যের ধর্ম। তাই তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ।এখানে হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধর্মপালনে মন্দির নির্মাণ করা হোক”।


তিনি আরো বলেন, 


”বি.এম কলেজ নানা ধর্ম- বর্ণের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে। সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে। এখানে কোন ভেদাভেদ নেই। আমরা সবাই মিলে বসবাস করতে পারলে সৃষ্টি হবে শান্তি। যা সকল ধর্মই চায়”।


বি.এম কলেজে হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীদের মন্দির নির্মাণে বিলম্ব ও নানা অভিযোগের সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া সময়ের বার্তা কে বলেন,


”বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। বি.এম কলেজ তার বাইরে নয়। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টি নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা আমরা ধারণ করি। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই এটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে হাতে। তাদের কাছে আমরা অনেক আগেই চিঠি পাঠিয়েছি। এখন তারা বিলম্ব করছে। তারা যদি বরাদ্দ দেয় তাহলে আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব”


কিন্তু বি.এম কলেজের অধ্যক্ষের এই কথা অস্বীকার করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেন মজুমদার সময় বার্তা কে বলেন,


”বি.এম কলেজের মন্দির নির্মাণ বিষয়ের কোন চিঠি আমাদের হাতে আসেনি। এটা মিথ্যাকথা। আর মসজিদ -মন্দির নির্মাণের কাজ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নয়। এটি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ। তারা সেখানে যোগাযোগ করতে পারে। আর এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক যে এত বছর হয়ে গেল অথচ হিন্দু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের প্রার্থনার নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই”।


বি.এম কলেজ ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে যার ধর্ম পালন করতে পারলে সেখানে গড়ে উঠবে সম্প্রীতি। আর সেই সম্প্রীতিময় বাংলাদেশ সকলের কাম্য। তাই হিন্দু শিক্ষার্থীদের ধর্মচর্চা করার স্বার্থে বি.এম কলেজে মন্দির নির্মাণ করা হোক। যা বি.এম কলেজের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী সহ বরিশালের সুশীল সমাজের দাবি।


সূত্র: সময়ের বার্তা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ