২০১৬ সালে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়েছে পুলিশ

সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দিলো পুলিশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা, 12.12.2016, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬


গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লিতে আগুন দেয়ার ঘটনায় সর্বশেষ প্রকাশ হওয়া একটি ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷ ফুটেজে এক পুলিশ সদস্যকে সাঁওতালদের একটি বাড়িতে আগুন দিতে দেখা গেছে৷ তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে৷


ভিডিওতে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্বেই সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হয়৷ এ ব্যাপারে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র সরেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, 


‘‘পুলিশও আগুন দিয়েছে, দুর্বৃত্তরাও আগুন দিয়েছে।'' 


তবে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ তারা দাবি করছে, 


‘‘পুলিশ আগুন দিতে নয়, আগুন নেভাতে গিয়েছিল।''


গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জে সাঁওতালদের জমিতে চিনিকলের আখ কাটাকে কেন্দ্র করে গত ৬ নভেম্বর সংঘর্ষ হয়৷ সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন, আহত হন অনেকে৷ পুলিশের ৯ সদস্যও আহত হন৷ সংঘর্ষের পর সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে৷ সেই ঘটনার পর একমাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে৷ এরইমধ্যে ঐ ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলেও তাতে ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করা হয়নি৷ দায়ী করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ভূমি দস্যু ও তাদের সহযোগীদের৷


কিন্তু নতুন ভিডিও ফুটেজ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ বাংলাদেশের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং এবং একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এই সাড়ে তিন মিনিটের ফুটেজ প্রকাশ করেছে৷


ফুটেজে দেখা যায় প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে একটি বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ এরপর কাছে গিয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্য বাড়ির দরজায় লাথি মারছেন৷ তারপর একজন পুলিশ সদস্য আগুন দিচ্ছেন৷ এসময় সাদা পোশাকে একজন তাঁকে সহায়তা করেন৷ ঐ পুলিশ সদস্য আগুন ছড়িয়ে দেয়ার কাজও করেন৷ আগুন লাগানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা পিছনে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ আগুনে ঘরটি পুড়ে শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন৷


জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র সরেন বলেন, 


‘‘আমি ফুটেজটির কথা শুনেছি৷ তবে আমরাতো আগেই বলেছি পুলিশও আগুন দিয়েছে, ওরাও আগুন দিয়েছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে এমপিও ছিলেন৷ পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই আগুন দেয়া হয়।''


তবে গাইবান্ধা জেলার পুলিশ সুপার আসরাফুল ইসলাম ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, 


‘‘পুলিশ আগুন দিতে নয়, আগুন নেভাতে গিয়েছিল।'' 


তিনি আরো বলেন, 


‘‘আমি নতুন এই ভিডিও ফুটেজটি এখনো দেখিনি। তবে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এর একটি ব্যাখ্যা দেয়া হবে। ভিডিও ফুটেজটি সংগ্রহ করতে পারলে আমরা আমলে নেব।''


গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, 


‘‘পুলিশ আগুন দেয়নি। আমি ঐ ভিডিও ফুটেজ দেখিনি। যে ভিডিও ফুটেজ আমি দেখিনি তা নিয়ে কী তদন্ত করবো?''


এদিকে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, 


‘‘পুলিশ নিজেই আগুন দিয়েছে। পুলিশ এখন যা খুশি তাই করে। নিজেরা আগুন দিয়ে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। এই পুলিশকে পুরোপুরি সংস্কার করা উচিত৷ তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।''



সূত্র: ডয়চে ভেলে


======================


ভিডিও সোর্স: সিলেটটুডে২৪ গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের ঘরে প্রথম আগুন দেয় পুলিশ! (ভিডিও)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ