সময়টা এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ঠিক পর পর।
মফস্বলের মোটামুটি অবস্থাপন্ন পরিবারের সুদর্শন হ্যান্ডসাম ছেলে রায়হান (ছদ্মনাম) ঢাকা শহরে আসে পড়তে। তখনকার সময়েও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় বরাবরের মতোই হিন্দুদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। তেমনই এক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলো রায়হান, আশপাশে বহু হিন্দু রমণী পরিবেষ্টিত হয়ে।
হিন্দু ঘরের সুন্দরী যুবতী সুতপা(ছদ্মনাম)র বাসা ঢাকাতেই। একই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে বছর দু'একের মধ্যে রায়হানের নজরে পড়ে গেল সুতপা। একই সাথে চলাফেরা, আড্ডা- সেখান থেকে প্রেম।
স্বাধীনতা পরবর্তী সে সময়ে মুজিবীয় আদর্শের নাম ভাঙ্গিয়ে বেশ কিছু মানুষের হাতে তখন বেশ ক্ষমতা, অর্থ আর অস্ত্র এসে যায়- সেই দলে রায়হানও যেন ভিড়ে গিয়েছিল ছাত্র রাজনীতির বদৌলতে।
সেই সুযোগে সুতপাকে একদিন অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় রায়হান। কোমল মনের মেয়ে সুতপা বাসায় ফিরে যাবার কথা বেশ কয়বার ভাবলেও লোকলজ্জা আর রায়হানের প্রতি ভালোবাসার কথা ভেবে ফিরে যায় নি আর। পরে কাজী অফিসে নিয়ে ধর্মান্তরিত করে সুতপাকে বিয়ে করে মেসে নিয়ে ওঠে রায়হান। বিয়ের বছর কয়েকের মধ্যে দুটো সন্তানও আসলো তাদের ঘর আলো করে।
কিন্তু এটুকুই যেন শুধু সুতপা মেয়েটার জীবনের সুখস্মৃতি!!!
বাচ্চা দুটো বড় হবার সাথে সাথে যেন বাড়তেই থাকলো সুতপার প্রতি রায়হানের অনাদর আর অবজ্ঞা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে কাজের নাম করে একেক সময় একেক পরনারীতে আসক্ত হয়ে রায়হান চরম মানসিক আর শারীরিক অত্যাচারে বিভীষিকাময় করে তুললো সুতপার জীবন।
এদিকে মায়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় সুতপা বিভিন্ন সময়ে তার নিজ আত্মীয়দের করুণা নিয়ে অথবা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করেও চালিয়ে যায় নিজ জীবন। অবশেষে শেষ বয়সে এসে বিভিন্ন রোগে শোকে ভুগতে থাকে তার শরীর যার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও ঠিকমতো করে নি কখনো নিষ্ঠুর রায়হান। এভাবে করে আরো কিছুদিন বেঁচে থেকে একসময় পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয় সুতপা। দুখিনীর নিষ্প্রাণ দেহটার শেষ ঠিকানা হয় সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে।
অথচ রায়হানের সাথে সম্পর্ককালীন সুতপার মায়ের কাছে মেয়ের জন্য খুব ভালো এক হিন্দু পাত্রের একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল, যা কিনা নানান অজুহাতে প্রত্যাখ্যান করেছিল সুতপা।
সেদিন হয়তো পুরো ঘুরেই যেতে পারতো সুতপার জীবন।
কিন্তু, যে নিজ ইচ্ছায় সর্বনাশের মালা গলায় পরে নেয় তাকে স্বয়ং বিধাতাও যে বাঁচাতে আসেন না!!!
0 মন্তব্যসমূহ