শ্মশান মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর |
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫০
কুড়িগ্রামের উলিপুরে গত দুই দিনে একাধিক মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ও বুধবার রাতে উপজেলার পৌর এলাকার যোদ্দারপাড়া ও খেওয়ারপাড় কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ক্ষোভের পাশাপাশি শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে উলিপুরের ঘটনাস্থলগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, যোদ্দারপাড়ার সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের কালী প্রতিমাটি মন্দিরের নির্ধারিত স্থানে নেই। মন্দিরের ভেতরে পায়ের ছাপ। পাশে কয়েকটি স্থানে প্রতিমার ভাঙা টুকরো ও একগুচ্ছ চুল পড়ে আছে।
স্থানীয় যুবক শৌমিক জানান, মন্দিরটি প্রায় সারা বছর তালাবদ্ধ থাকে। ভক্তরা প্রতিদিন বাইরে থেকে ঠাকুরকে পূজা দিয়ে যান। মন্দিরের গ্রিলের ওপরের ফাঁকা জায়গা দিয়ে কেউ ভেতরে প্রবেশ করে প্রতিমা নিয়ে গেছেন। বাইরে সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। সেগুলোর ফুটেজ পরীক্ষা করলে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যাবে।
সন্ন্যাসীতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দেব ধ্রুব বলেন,
‘প্রতিদিনের মতো সকালে পূজা করতে গিয়ে দেখি মন্দিরের প্রতিমা উধাও। আশপাশে প্রতিমার ভাঙা টুকরো পড়ে আছে। এটি খুবই দুঃখজনক।’
কুড়িগ্রামের উলিপুরের সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয়েছে |
তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সব ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করেন। এ ধরনের কাজ স্থানীয় কেউ করেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙা হচ্ছে।’
সন্ন্যাসীতলা মন্দিরের কিছুদূর দক্ষিণে বটতলা মন্দির। ওই মন্দিরের একাধিক প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। কালী প্রতিমার নিচের বড় অংশজুড়ে ভাঙা। এই মন্দিরের ভাঙা প্রতিমা সাংবাদিকদের দেখান স্থানীয় বাসিন্দা টুকু রানী। তিনি জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে তারা মন্দিরের কালী প্রতিমা ভাঙা দেখতে পান। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কয়েকজন বলছেন, মন্দিরে তালা দেওয়া থাকলেও গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে খোঁচা মেরে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। স্থানীয় বসতি ও সড়কের পাশের এই মন্দিরের প্রতিমা ভাঙায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
এই এলাকার বাসিন্দা শাওন বলেন,
‘বাইরের কেউ এলাকায় এসে এমন কাজ করতে পারে। স্থানীয় কারও এমন সাহস করার কথা নয়।’
আরেক বাসিন্দা প্রিতম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এক ছেলেকে বাঁশ নিয়ে যেতে দেখেছি। সেই ছেলে এমন কাজ করেছে কিনা, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’
বটতলা মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় বাসিন্দা শৌমিক বলেন,
শহরের ব্যস্ততম জায়গায় এ ধরনের ঘটনা শঙ্কার বিষয়। আগে ভাবতাম আমাদের এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কখনও এমন হামলা হবে না। কিন্তু ২০২১ সালের পর থেকে আমরা আতঙ্কিত থাকি।’
তিনি আরও বলেন,
‘হঠাৎ করে আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটতে পারে।’
ওই মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোনও একটি মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এই কাজ করছে। স্থানীয় কারও ইন্ধনে বাইরের কোনও গোষ্ঠী পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে মন্দিরে হামলা চালাচ্ছে।’
উপজেলার কেন্দ্রীয় শ্মশান মন্দিরের কালী প্রতিমাও ভাঙচুর করা হয়েছে। দিনের বেলায় শ্মশান এলাকায় লোকসমাগম থাকলেও রাতে থাকে সুনসান নীরবতা। ওই মন্দিরের কালীসহ একাধিক প্রতিমা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা মন্দির পরিদর্শনে গেলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সনাতন ধমালম্বীরা। তারা বলেন, এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে। সবগুলো মন্দিরে হামলার পেছনে একই গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।
কুড়িগ্রামের উলিপুরের বটতলা মন্দিরের ভাঙা প্রতিমা সাংবাদিকদের দেখান স্থানীয় বাসিন্দা টুকু রানী |
শ্মশান কালী মন্দিরে ভেঙে ফেলা প্রতিমা দেখতে যাওয়া যোদ্দারপাড়ার পাখি রানী বলেন,
‘এসব কোনও সুস্থ মানুষের কাজ হতে পারে না।’
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উলিপুর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন,
‘একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এসব কর্মকাণ্ড করছে। প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করেছি। তারা ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।’
উলিপুর থানার ওসি শেখ আশরাফুজ্জামান বলেন,
‘আমরা পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টার পাশাপাশি উপজেলার সব মন্দিরে নিরাপত্তা বাড়াতে কাজ করছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২১ সালে দুর্গোৎসব চলাকালীন উলিপুরের বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী-অস্থায়ী কয়েকটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনায় একাধিক মামলা হয়। মামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
0 মন্তব্যসমূহ