Republic71, Jan 10, 2023
এক হিন্দু রাজার প্রেমে পাগল হয়ে আত্মঘাতী হয়েছিল এক মুসলিম শাহজাদী - হ্যাঁ এটাই সত্যি।
এতদিন আমরা জানতাম চিতোরের রানী পদ্মাবতীর কাহিনী যিনি দিল্লির নীচ ও ব্যভিচারী সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর দ্বারা অপমানিত হয়ে জহরব্রত পালন করেছিলেন, কিন্তু আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে আলাউদ্দিন খিলজীর এক মেয়ে শাহাজাদী ফিরোজা এক রাজপুত রাজাকে বিবাহ করার জন্য লালসাগ্রস্ত ছিল। স্থান জালোর বর্তমানে রাজস্থানে, বহু পূর্বে এক ঋষি জাবালির নাম অনুসারে জায়গাটির নাম জালোর হয়, অনেকে জালোরকে জবলিপুরা নামেও জানতো। পরে জালোরের নাম বদলে সুবর্ণগিরি রাখা হয়।
বারো শতাব্দীর(12th century) শেষ বছরের দিকে জালোরে চৌহান রাজা কানহরদেবের শাসন চলতো। তার পুত্র কুনওয়ার বিরমদেব চৌহান সব রাজপুত্রের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা ছিলেন। তিনি তার অল্প জীবনের জীবদ্দশায় অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করে জালোরকে বিজয়ী করেছিলেন। বিরমদেবের খ্যাতি, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, যুদ্ধের সাহসিকতা ও নির্ভীক চরিত্র দেখে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী সবসময় তার প্রতি সময় ঈর্ষাপরায়ণ ছিল।
হিংসা ও ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে পরিকল্পনা করে আলাউদ্দিন খিলজী বিরমদেব চৌহানকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ করেন। খিলজী তার অজেয় পালোয়ান পুঞ্জুকে দিয়ে বিরমদেবকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে একটি মল্লযুদ্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। কিন্তু ফল হয় উল্টো, বিরমদেব চৌহান খিলজীর পালোয়ান পুঞ্জুকেই হত্যা করেন। প্রতিযোগিতা চলাকালীন শাহজাদী ফিরোজা বিরমদেবের সুন্দর সুঠাম চেহারা ও তার শৌর্য বীর্য ও সাহসিকতা দেখে তার প্রতি প্রেমে পড়ে যান। তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বিরমদেবকে ছাড়া আর কাউকে বিবাহ করবে না। শাহজাদির এইরকম ইচ্ছার কথা শুনে দিল্লির দরবারে বড় বিতর্কের সৃষ্টি হল। আলাউদ্দিন খিলজী এই বিষয়ে জানতে পেরে ভীষণ রাগান্বিত হলেন। কিন্তু শাহাজাদী তার প্রতিজ্ঞায় অনড় ছিল, যে কোন মূল্যে সে বিরমদেবকে বিবাহ করতে চাইলো। অনেক বিচার বিবেচনার পর রাজনৈতিক সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেখে আলাউদ্দিন খিলজী রাজি হলেন। খিলজী ভাবলো বিবাহের পর বিরমদেবকে ইসলাম কবুল করিয়ে জালোর কব্জা করে নেবে, বিবাহের প্রস্তাব জালোর দুর্গে বিরমদেবের কাছে পাঠানো হলো।
এদিকে প্রস্তাব পাওয়া মাত্র তৎক্ষণাৎ বিরমদেব সেই প্রস্তাব নাকচ করলেন এবং বললেন,
"আমার মামা ভাঁটি বংশের লোক আর আমি নিজে স্বয়ং রাজপুত আমি কিভাবে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে একজন মুসলিমকে বিধর্মী হয়ে বিবাহ করতে পারি। আমি কি করে আমার বংশকে অপবিত্র করতে পারি, এইরকম কখনো সম্ভব নয়"।
বিরমদেবের এরকম কথা বলার পর খিলজী তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল, এক বছর পর্যন্ত খিলজীর সেনা জালোর দুর্গ অবরোধ করে থাকলো এবং তারপর যুদ্ধ শুরু হলো, দুর্গের রাজ পরিবারের মহিলারা তাদের নিয়ম অনুযায়ী আগুনে ঝাঁপ দিয়ে জহরব্রত পালন করলেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে বিরমদেব গেরুয়া পোশাকে সজ্জিত হয়ে সেনার অগ্রভাগে থেকে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, এই ভয়ংকর সম্মুখ সমরে বিরমদেবের বীরগতি প্রাপ্ত হয়েছিল।
খিলজীর সেনা বিরমদেবের কাটা মুন্ডু একটি থালায় সুদৃশ্য কাপড়ে ঢেকে শাহজাদী ফিরোজার সামনে উপস্থিত করল। তখন শাহজাদী ফিরোজা বিরমদেবের ওই কাটা মুণ্ডুর সাথেই বিবাহের মনস্থ করলো। কিন্তু কাটা মুন্ডুটি হঠাৎ থালা থেকে পড়ে গেল, কিন্তু শাহজাদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল সে বলল, বিবাহ করলে তার কাটা মুন্ডুর সাথেই বিবাহ করবে নয়তো আজীবন কুমারী থেকে যাবেন। শাহজাদি ফিরোজা তার ভালোবাসার জন্য বিরমদেবের কাটা মুন্ডু নিয়ে যমুনা ঝাঁপ দিয়ে তার প্রাণ ত্যাগ করলেন। শাহজাদি তার প্রতিজ্ঞা রেখেছিল, বিরমদেব তার কর্তব্য পালন করেছিলেন এবং ধর্ম রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন। এটাই সেই কাহিনী যে একজন মুসলিম শাহজাদি একজন হিন্দু রাজপুত রাজার প্রেমে পাগল হয়ে তার জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন।
https://www.republic71.com/2023/01/kiljisdaughtersuicidefor.html
0 মন্তব্যসমূহ