অত্যাচারিত বাঙালি হিন্দু - দীপ্তাস্য যশ

অত্যাচারিত বাঙালি হিন্দু - দীপ্তাস্য যশ

প্রথম প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২১


২২শে জানুয়ারি ২০১৬, পুণেতে শাওন রাঠোর নামের সতেরো বছরের একটি ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়। অভিযোগ তার হিন্দু পরিচয়ের জন্যই তাকে ঐভাবে পুড়িয়ে মারা হয়। ছেলেটি জঞ্জাল কুড়ানোর কাজ করত। এই ঘটনায় পুলিশ ইব্রাহিম শেখ, জুবের তাম্বোলি আর ইমরান তাম্বোলিকে এরেস্ট করে।


১৪ই এপ্রিল, ২০১৬, দিল্লীতে ৪২ বছর বয়সী ডেন্টিস্ট পঙ্কজ নারাংকে রড দিয়ে পিটিয়ে নয় জন মিলে হত্যা করে। অভিযোগ ভারত বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতের জয়ের পরে পঙ্কজ নারাং এবং তার বালক পুত্রের জয় উদ্বযাপনের ফলেই অভিযুক্তদের সাথে ঝামেলা শুরু হয় এবং তারপরে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে মূল অভিযুক্ত নাসির খান, তার ভাই আমীর, মা মেসার এবং ১৭ বছর বয়সী আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।


১০ই অক্টোবর ২০২০, দিল্লীতে রাহুল রাজপুত নামের একটি যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়। মহম্মদ রাজ, মানওয়ার হোসেন এবং আরও তিনজনকে এই ঘটনার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে জানা যায় মহম্মদ রাজের বোনের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কারনেই রাহুলকে মহম্মদ রাজ এবং তার সঙ্গীরা পিটিয়ে খুন করে।


৩রা নভেম্বর, ২০২০, জনপ্রিয় ইউটিউবার নিজামুল খানের হাতে খুন হন কমল শর্মা। তদন্তে জানা যায় কমলের বোনকে নিজামুলের বিরক্ত করার জেরে এই ঘটনার সূত্রপাত এবং নিজামুলের হাতে কমল খুন হন।


২৮শে অক্টোবর ২০২০, তৌসিফের হাতে খুন হন ২১ বছরের কলেজ ছাত্রী নিকিতা তোমর। তদন্তে জানা যায় তৌসিফ বারংবার নিকিতাকে ধর্মান্তকরন এবং বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করছিলেন। নিকিতার প্রত্যাখানের জেরেই প্রতিহিংসা বশত এই খুন।


৬ই জুলাই ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট দাঙ্গার সময় খুন হন কার্তিক ঘোষ। পরিবারের অভিযোগ অজ্ঞাত পরিচয় দাঙ্গাকারীরা পিটিয়ে খুন করেন কার্তিক ঘোষকে।


১৯শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ রোহিত তাঁতি নামের ১৮ বছরের যুবক নিহত হয় খড়্গপুরের গোলবাজারে একদল "দুষ্কৃতির" হাতে। মূল অভিযুক্তের নাম শাকিল।

১১ই জুলাই ২০২১, সানি খান নামক এক যুবকের লাগাতার ব্ল্যাকমেলিং-এর জেরে আত্মহত্যা করে ন্যাশানাল লেভেল ক্যারাটে প্লেয়ার পামেলা অধিকারী। পামেলার সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় সানি খানকে। তদন্তে জানা যায় নিজের বিবাহিত পরিচয় এবং ধর্ম পরিচয় গোপন করে পামেলা সানিকে প্রেম প্রস্তাব দেয়। প্রথমে পামেলা সেই সম্পর্কে রাজী হলেও পরে সানির প্রকৃত পরিচয় জানার পরে সম্পর্ক থেকে সরে আসতে চাইলে সানি আগের কিছু ছবি ফটোশপ করে ফেসবুকে পোস্ট করে। তার জেরেই পামেলা আত্মহত্যা করে।


১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২০, স্বামী আফতাব এবং তার পরিবারের লাগাতার ধর্ম পরিবর্তনের চাপের জেরে আত্মহত্যা করেন বারাণসীর পূজা প্যাটেল।


২১শে এপ্রিল ২০১৯, কুলতলির প্রিয়াংকা চাতুই নামের একজন আত্মহত্যা করেন গলায় দড়ি দিয়ে। অভিযোগ ফয়জুল্লা মোল্লা নামের এক যুবক রাজু দাস নামে নিজের পরিচয় দিয়ে প্রিয়াংকার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে। পরবর্তীতে প্রিয়াংকা যখন ফয়জুল্লার আসল পরিচয় জানতে পারে তখন সে ঐ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। এরপর যখন প্রিয়াংকার বিয়ে ঠিক হয় সেই সময় ফয়জুল্লা নানাভাবে প্রিয়াংকাকে হেনস্থা করা শুরু করে। তারই মর্মান্তিক পরিণতি প্রিয়াংকার আত্মহত্যা।


১৮ই অক্টোবর ২০২০, জামিল এবং সৈয়দ মুস্তাফার হাতে খুন হন এক দলিত কিশোরী ২৩ বছর বয়সী রাধিকা। রাধিকার ভাই পবনের অভিযোগ প্রেমে প্রত্যাখাত হয়েই মুস্তাফা প্রতিহিংসাবশত রাধিকাকে খুন করে।


১৬ই জুন ২০২১, আসাম পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন মুজাম্মিল শেখ, নাজিবুল শেখ, ফারুখ রহমান, হানিফ শেখ, জাহানুর ইসলাম, মহম্মদ আতব আলি এবং সাংকরদে দুই আদিবাসী তরুনীকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে।


গত কয়েকদিন ধরে শুনছি এদেশেও নাকি সংখ্যালঘুরা ভীত এবং সন্ত্রস্ত। এমনকি এক বিজ্ঞ তো দেখলাম এও বলেছেন রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজের মুসলিমরা নাকি ভীত, সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে সবসময়। যাইহোক অবোধের গোবধে আনন্দ। তেমনিই এরা ভাবে এরা ঘরে বসে আমাদের যা বোঝাবে আমরা তাই বুঝব। 


এদের জন্যই উপরে লিস্টটা দিলাম। এদেশের "সংখ্যালঘুদের" ভীত এবং সন্ত্রস্ত থাকার এক ডজন উদাহরন দিতে। চাইলে এই বিষয়ে পাশবালিশের সাইজের বইও লিখে ফেলা যায়। পক্ষান্তরে কেউ যদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের এরকম কিছু কীর্তিকলাপের উদাহরন দেখাতে পারেন তাহলে বাধিত থাকব।


আসলে আমাদের দেশের একদল বুদ্ধিজীবী "সংখ্যাঘুঘুদের" আমাদের মাথায় চাপিয়ে দিতে চায় "সংখ্যালঘু" বানিয়ে। যদিও এই সংখ্যাঘুঘুদের অবস্থা কোন মতেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সাথে তুলনীয় নয়। কিন্তু তাও এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর নৃশংসতাকে চাপা দিতে। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে যা হয়েছে তা কোন দাঙ্গা বা হাঙ্গামা নয়। দাঙ্গা বা হাঙ্গামা কখনও এক তরফা হয়না। সেখানে প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি বিপরীত ও সমান প্রতিক্রিয়া থাকে। বাংলাদেশে যা হয়েছে তা হোল progrom. কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ আমার জানা নেই। সাধারন ভাবে বলা যেতে পারে এক তরফা সংহার। সেই নৃশংসতা থেকে দশ বছরের মেয়েও ছাড় পায়না। তাকেও গণধর্ষনের বলি হতে হয়।


তবে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন আমরা গান্ধীর বাঁদর। তাই ওরা আমাদের যা দেখাবেন আমরা তাই দেখব। যা শোনাবেন তাই শুনব। যা বলতে দেবেন, সেই টুকুই বলব। তাই ওনারা আমাদের বলেন বাংলাদেশে কোন দশ বছরের মেয়ের গণ ধর্ষন হয়নি বা এদেশের সংখ্যাঘুঘু থুড়ি সংখ্যালঘুরা নাকি ভীত সন্ত্রস্ত। অথচ এই ভীত সন্ত্রস্ত সংখ্যালঘুদের দাপটে এই বাংলাতেই দুর্গা পুজোর বিসর্জনের নির্ঘন্ট বদলে দিতে বাধ্য করে প্রশাসন। পরিচালক সৃজিত বাধ্য হন তার সিনেমার ডায়লগ বদল করতে। কিন্তু সংখ্যাগুরুদের অনুভূতি এবং আবেগে আঘাত করেও কিন্তু দিব্যি করে কম্মে খান এই বুদ্ধিজীবীরা। শিবলিঙ্গে কন্ডোম পরিয়েও ভোটে দাঁড়িয়ে হিন্দুদের কাছে ভোট চাওয়া যায়। ত্রিশূলে কন্ডোম পড়িয়ে আর বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনে চুপ থেকেও নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দাবী করা যায়। কারন দেশটাতে এখনও হিন্দুরা সংখ্যাগুরু। কমিউনিস্ট বা মুসলিম শাসকরা নয়। তাই এখানে কথায় কথায় কল্লা যায়না।


তবে আমাদের প্রতিভাধর বুদ্ধিজীবীরা খুব ভালোই জানেন এসব বিষয় কিভাবে সামলাতে হয়। এমনিতেই তারা প্রতিনিয়ত প্রমান করে থাকেন নাইজেরিয়ার বোকো হারাম থেকে শুরু করে সিরিয়ার আইসিস। আফগানিস্তানের তালিবান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের জামাত সবই আসলে বিজেপি আরএসএসের সরলমতি বালকদের বিপথে চালিত করার চক্রান্ত। আর সবেরই সংযোগ ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের ভোটের সাথে। খালি এটা বুঝিনা যে ঐ সরলমতি বালকদের ওনারা বিজেপি আরএসএসের কথায় চালিত হতে দেন কেন। তাদের ওনারা বিপথে যেতে দেন কেন।


এই বুদ্ধিজীবীদের দেখলে আমার একটি জনপ্রিয় হিন্দী গানের কয়েকটি লাইন মনে পরে, "জানে মেরী জানেমন, বচপন কা পেয়ার মেরা ভুল নেহী যানা রে"। সেই দেশভাগের সময় থেকে এদের প্রেম। এই প্রেমকে অস্বীকার করার ক্ষমতা এই বাজারুদের নেই। আর নেই বলেই এদের বাজারও নেই। এদের আসলে আছে একে অপরের পিঠ চুলকানি আর পিঠ চাপড়ানি। আর তার ফলেই এরা বাজার ভরিয়ে দিয়েছেন ট্র্যাশে। যাকে এরা সাহিত্য বা শিল্প বলে থাকেন। এদের আসলে বাজার নেই। এদের আছে লোভ। পিঠচাপড়ানির লোভ। আর সেই লোভ থেকেই এরা লালায় ভিজিয়ে রাখতে চান সংখ্যাঘুঘুদের। কটা দিন যেতে দিন দেখবেন এরা থিয়োরী দিয়ে প্রমান করে দেবে মণ্ডপে কুরান আসলে নরেন মুদী রেখে এসেছিল। আর দাড়িওলা মোটা মৌলবী আসলে ছদ্মবেশে অমিত শাহ ছিল।


তবে এরা ভুলে যান জাতটা হোল বাঙালি হিন্দু। এদের মতো অত্যাচারিত জাত বোধহয় পৃথিবীতে আর দুটো নেই। ইহুদীদের থেকেও এরা বেশী অত্যাচারিত। আজও। কিন্তু তারপরেও জাতটা শেষ হয়ে যায়নি। বারেবারে উঠে এসেছে ফিনিক্স পাখির মতো। রূপকথার গল্পের মতো। রূপকথাই তো। নাহলে যে নোয়াখালিতে ৪৬ সালেই বিপুল হিন্দু নিধন যজ্ঞের মাধ্যমে নোয়াখালিকে হিন্দু শূন্য করে ফেলা হয়েছিল, সেই নোয়াখালিতে আজও পুজো হয়। এমনকি ওখানকার হিন্দুদের এতোটাই মনে জোর যে ঠাকুর ভেঙে দেওয়া হলেও তারা ঘট বসিয়ে পুজো করে। রূপকথা নয় তো কি এটা? এই রূপকথার সাথে লড়ে কি করে জিততে পারবে এই বাজারুরা। পারবেনা। এরাও সেটা ভালোই বোঝে। আর বোঝে বলেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হিন্দুদের উপরে। 


খেয়াল করবেন কাল নোয়াখালির ঘট পুজোর ভিডিওটা প্রকাশ্যে আসার পরেই এই বাজারুদের দৌড়াদৌড়ি বেড়েছে। বেচারাদের দেখলে মায়াও লাগে। কিন্তু কি আর করা। হয় তুমি আমার পক্ষে আর নাহলে তুমি আমার বিপক্ষে। হয় তুমি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হও। আর নাহলে তোমার নীরবতাকে আমি অত্যাচারের প্রতি নীরব সমর্থন বলেই মনে করব। তাই এদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি থাকবে। কারন আমরা বাঙালি হিন্দু। আমরা হেরে যেতে পারিনা। আমাদের হারা মানা। আমাদের হার স্বীকার করে থেমে যাওয়ার অনুমতি নেই। আমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি, দর্শন আমাদের সে অনুমতি দেয়না। আমার ধর্মের দর্শন আমাকে বলেছে, ""অহিংসা পরম ধর্ম,ধর্মহিংসা তদৈব চ ।" -অর্থাৎ অহিংসা মনুষ্য জীবনের পরম ধর্ম , এবং ধর্ম রক্ষার স্বার্থে হিংসা করা তার চেয়েও শ্রেষ্ঠ।


#SaveHindus 

#SaveHinduTemples 

#We_want_justice 

#save_minority_hindu 

#HumanRightsViolations 

#I_Am_Feeling_unsafe_In_Bangladesh

#Save_The_Hindu_Of_Bangladesh

#save_hindu_bangladesh

#stop_hindu_oppression_bangladesh

#Stop_Communal_Attack

#Save_Bangladeshi_Hindus

#BangladeshiHinduWantSafety

#SaveBangladeshiHindus

#WeDemandSafety

#WeDemandJustice


# সংগৃহীত #

প্রথম প্রকাশ: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ