চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিল

চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিল
চট্টগ্রামে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কালো পতাকা মিছিল


রানা দাসগুপ্ত বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ তার বক্তব্যের জন্য।


চট্টগ্রাম ব্যুরো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Published : 18 August 2022, 09:43 PM

Updated : 18 August 2022, 09:43 PM



দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ ও কালো পাতাকা মিছিল করেছে ‘বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজ’।


শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।


চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হল প্রাঙ্গণে যখন জন্মাষ্টমী ‍উদযাপন পরিষদের আয়োজনে ওই অনুষ্ঠান চলছিল, তখন অদূরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।


হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত সমাবেশে বলেন, 

“জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের অনুষ্ঠানে আমরাও অংশীদার। আমরা চাই এ আয়োজন সর্বাত্মকভাবে সফল ও সার্থক হোক। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বারবার বলেছেন বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয় নাই।


“তিনি বারংবার দেশের বাইরে এই মর্মে প্রচার করেছেন… ‘বাংলাদেশে সে রকম কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয় নাই’ এবং এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিয়ে মিথ্যাচার করে’।”


রানা দাশগুপ্ত বলেন,

“আজ যে প্রতিবাদ মিছিল কালো পতাকা হাতে শুরু হবে, আমার মনে হয়েছে, এটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকের আহ্বান, কোনো ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় এ ধরণের ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। আমন্ত্রণ জানালে সে যেই হোক প্রতিবাদ করা হবে।”


পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতির বিরুদ্ধে কেন কর্মসূচি? – এ প্রশ্নে আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন,

“গত শারদীয় দুর্গা পূজার পর যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির এক নাজুক সময়ে, সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের ঘরে ঘরে গিয়ে মা মাসি মামা ডাকে, নির্বাচনের পরে তাদের আপদে-বিপদে পাশে দেখা যায় না।


“আমরা সে সময় লক্ষ্য করলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন, তিনি যখন বিদেশে গেলেন, তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, এদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের যে সংবাদ... তিনি বললেন, এগুলো সব মিথ্যা এবং এগুলো সব মিথ্যা প্রচারণা। তিনি ভারতের নয়া দিল্লিতে গিয়েছিলেন। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের যিনি চেয়ারম্যান অজিত দোভাল, তার সাথে আলাপেও তিনি বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যে সংবাদগুলো প্রচার করা হয় এগুলো মিথ্যা। এর পিছনে কোনো সত্যতা নেই’।”


রানা দাশগুপ্ত বলেন, 

“পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৩৫ হাজার দুর্গা পূজা হয়েছে। এই দুর্গা পূজো নাকি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। অথচ এগুলো সব নির্জলা অসত্য এবং মিথ্যা কথা।


“যেহেতু এখনো পর্যন্ত তিনি আমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নাই। জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নাই তার মিথ্যাচারের জন্যে। তিনি যখনই চট্টগ্রামে এলেন, চট্টগ্রামের জনতা বিক্ষুব্ধ হল। সেই বিক্ষুব্ধ অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদ করছে।”


রানা দাশগুপ্ত বলেন, 

“অতীতেও এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছিলাম। গতকাল রাতে হঠাৎ করে জানতে পারলাম এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মঞ্চে তিনি উপস্থিত থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চট্টগ্রাম আগমনকে আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না এবং এই আগমনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের জন্য প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থের প্রশ্নে যে দীর্ঘদিনের লড়াই সংগ্রামেরই অংশ।”


জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ নেতৃবৃন্দের প্রতি ইঙ্গিত করে রানা দাশগুপ্ত বলেন,

 “অতীতের মত একসাথে লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে চাই। ভুলভ্রান্তি কারো হয়ত হতে পারে। সেই ভুলভ্রান্তিগুলোকে স্বীকার করে নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”


চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল আন্দরকিল্লা অভিমুখে যায়। এসময় মিছিলকারীদের হাতে কালো পতাকা ও মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল।


সমাবেশে নেতৃবৃন্দের মধ্যে শ্যামল পালিত, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, রুবেল পাল উপস্থিত ছিলেন।


https://bangla.bdnews24.com/ctg/cwwmrfy84p

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ