লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে একজনের ‘মৃত্যু’, পুলিশের দাবি ‘আত্মহত্যা’

লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে একজনের ‘মৃত্যু’, পুলিশের দাবি ‘আত্মহত্যা’
থানা ও হাসপাতালের সামনে রাতভর ভিড় করেন উত্তেজিত জনতা। ছবি: স্টার

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, শনিবার, জানুয়ারি ৮, ২০২২ ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন


লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানায় পুলিশ হেফাজতে চা দোকানি হিমাংশু রায়ের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চলছে সমালোচনা। পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হতে পারে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। থানা ও হাসপাতালের সামনে রাতভর ভিড় করেছেন উত্তেজিত জনতা। তবে পুলিশের দাবি, হিমাংশু আত্মহত্যা করেছেন।


গতকাল হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের পূর্ব কাদমা মালদহপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সাবিত্রী রানী (৩০) আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার স্বামী হিমাংশু রায়কে (৩৬) সন্দেহ করা হয়। শুক্রবার সকালে সাবিত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হিমাংশুকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।


শুক্রবার বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে হিমাংশুর মরদেহ হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ। তার মরদেহ শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত হাসপাতালে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়। সেসময় আত্মীয়স্বজন কিংবা কোনো সংবাদকর্মীকে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি।


সংবাদ পেয়ে স্থানীয় জনতা হাসপাতাল ও থানায় ভিড় করেন। তাদের ধারণা, পুলিশের নির্যাতনে হিমাংশুর মৃত্যু হয়েছে।


হিমাংশুর বাবা বিশেশ্বর বর্মণকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানানো হলেও, এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ মিলছে না।


নিহত হিমাংশুর কাকা দীগেন্দ্রনাথ রায় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, 


হিমাংশুর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তারা শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ছুটে যান। পুলিশ হেফাজতে কেন এবং কীভাবে হিমাংশুর মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন না।


তিনি বলেন, 


'পুলিশ শুক্রবার সকালে যখন হিমাংশুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়, তখন সে সুস্থ ছিল।'


'থানায় নেওয়ার পর থেকে আমার দাদা বিশেশ্বর বর্মণেরও কোনো খোঁজ পাচ্ছি না', যোগ করেন দীগেন্দ্রনাথ রায়। 


হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিরম্বর রায় ডেইলি স্টারকে বলেন,


 'পুলিশ বিকেল ৪টা ৬ মিনিটে হিমাংশুর মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে। হিমাংশুর গলায় দাগ পাওয়া গেছে। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।'


শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, 


'হিমাংশুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। তিনি একাই ছিলেন ওই রুমে। সেসময় রুমের ব্রডব্যান্ড লাইনের ক্যাবল গলায় পেঁচিয়ে জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি। পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।'


তিনি বলেন, 


'হিমাংশুকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাকে কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি।'


লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আতিকুল ইসলাম শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানান, হিমাংশু আত্মহত্যা করেছেন। তিনি কেন আত্মহত্যা করেছেন, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।


হাতীবান্ধা থানায় ওসির রুমের সামনে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক রুম। থানার বেশিরভাগ সিসিটিভি ক্যামেরা অকেজো বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এমন তথ্য আরও বেশি সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।


পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্ত ব্যক্তির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা। এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও দাবি তাদের।


সূত্র: ডেইলি স্টার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ