প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
সৈয়দপুর রেল কারখানার চুল্লি ॥ সাড়ে তিনশত বাঙালী হত্যার এক স্মৃতিময় স্থান
সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধে অবাঙ্গালীরা সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ফাউন্ড্রি সপের আঠারশত সেন্টিগ্রেড ফারেনহাইট তাপমাত্রার চুল্লিতে প্রায় সাড়ে তিনশত রেলকর্মচারিকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও বিভৎস্য হত্যাকান্ডের এ স্থানটি আজও সংরক্ষনের উদ্যগ নেওয়া হয়নি।
এ কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারিরা জানান, যুদ্ধ শুরুর পর অনেক বাঙ্গালী রেলকর্মচারি কারখানায় আসা বন্ধ করেন। এতে পাকিস্তানি জল্লাদরা কৌশল অবলম্বন করে। তারা শহরব্যাপী মাইকিং করে সকল রেলকর্মচারিদের অভয় দিয়ে কাজে যোগ দানের জন্য নির্দেশ জারি করেন। চাকরি বাচাতে বাধ্য হয়ে অনেকে কাজে যোগ দেন। তবে ওই কর্মচারিরা কেউ আর ঘরে ফিরে যায় নি। অবাঙ্গালীরা বিভিন্ন শপে তাদেরকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বড় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় এ কারখানায়। সৈয়দপুর কলেজের তৎকালীন অবাঙালী অধ্যক্ষ জল্লাদ মাওলানা মতিন হাশমী, হব্বু বিহারী, জাহিদ ও রেলওয়ের অবাঙালী কর্মচারীরা এপ্রিল মাসে গণহত্যার নেশায় মেতে উঠেছিলেন। শহর, গ্রাম ও রেলওয়ে কারখানার বিভিন্ন শপের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ধরে এনে হত্যা করে। নরপিশাচরা কারখানার ফাউন্ড্রি শপের ১৮ শত সেন্টিগ্রেড ফারেনহাইট তাপমাত্রার ৩টি চুল্লি ও ফার্নেস চুল্লিতে নিক্ষেপ করে মুক্তিকামী বাঙালিদের। এতে দেহের হাড়, মাংস ও রক্ত গলে পানি হয়ে বেরিয়ে আসে। এ নৃশংসতার ভয়াবহতা পৃথিবীর ইতিহাসে সকল ঘটনাকে ছাড়িয়ে গেছে।
২৫ ফুট উচু ও ৫ফিট চওড়া চুল্লিগুলো যেন জলন্ত এক আগ্নেযগিরি। কয়লা ও বৈদ্যুতিক বাতাস দ্বারা লোহা গলানোয় যেন ভূ-অভ্যন্তরের লাভা বের হচ্ছে। এখানে বাঙালীদের নিক্ষেপ করে হত্যার ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে শপটির ইনচার্য উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, এ শপের চুল্লিগুলোতে বাঙালী হত্যাকান্ডের কথা শুনেছি। তবে এর কোন প্রমান খঁজে পাইনি। তবে এখানকার তেজস্ক্রিয়া আগ্নেয়গিরির লাভার চেয়ে বেশি। কারণ লাভার উষ্ণতা থাকে ৭০০ থেকে ১২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এখানকার তাপমাত্রা ১৮শত ডিগ্রি সেলসিয়াস ফারেনহাইট। তাই এই চুল্লিতে কোন মানবদেহ পরলে শুধু পানি বের হবে। এ নিয়ে সৈয়দপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নজরুল ইসলাম (৬৭) বলেন, মুলত ৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী সরকার ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় যুদ্ধপরাধীদের প্রেতাত্মারা অনেক চিহ্ন মুছে ফেলেছে। তবে শহীদদের প্রাণঘাতি স্থানটি অবশ্যই সংরক্ষন করা উচিত।
কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: একরামুল হকের সাথে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এ কারখানার উর্ধ্বত্বনরা সবই জানেন। তারপরেও তারা উদাসিন। এটি খুবই দু:খ জনক। কিভাবে তারা বদ্ধভুমি স্থানে স্বাভাবিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে শহীদ পরিবারের সন্তান ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক বলেন, যাদের প্রানের বিনিময়ে স্বাধীন এ দেশ পেয়েছি। তাদের প্রতি এমন অবজ্ঞা। এটা মেনে নেয়া যায় না। অবশ্যই সরকারী ভাবে ওই স্থানটি সংরক্ষন করে স্মৃতিফলক করা উচিত।
প্রকাশিতঃ ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
0 মন্তব্যসমূহ