মসজিদের জন্য দিনাজপুরে হিন্দু বাড়ি ধ্বংস

মসজিদের জন্য দিনাজপুরে হিন্দু বাড়ি ধ্বংস

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বলাইবাজার নামক স্থানে মসজিদ তৈরি জনিত সমস্যার কারণে ৩০টির বেশি হিন্দু বাড়িঘর ধ্বংস করা হল। গত ৪ আগস্ট ২০১২ তারিখ সকাল ১০টার দিকের ঘটনা। সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু জনগণ অধ্যুষিত এলাকায় একটা ছোট বাজার বসে। মুসলিম ধর্মাবলম্বী চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন কলেজের প্রফেসর বেগম হামিদা বানু সেখানে জমি কিনে কয়েকটি দোকানঘর তৈরি করেন। বাজার এলাকায় একটা শিবমন্দির ছিল। এই শিবমন্দিরের জায়গা ছেড়েই দোকানঘরগুলি তৈরি করা হয়েছিল।


কিছুদিন আগে 'অধ্যাপক' ম্যাডামের শখ হয়েছে একটা মসজিদ তৈরি করার। বাজারে আগত মুসলমানদের নামাজ পড়ার সুবিধা করার জন্য তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছেন নাকি পাপ বেশি হয়ে গেছে তা পরিষ্কার নয়। মসজিদ তৈরি করার জায়গা তিনি নির্বাচন করেছেন শিব মন্দিরের জায়গাটাকেই। সেখানে ২০০ গজের মধ্যে আরেকটা মন্দির ছিল। শিবমন্দিরের জায়গায় মসজিদ তৈরি করাসহ প্রধান মন্দির থেকে আরও কিছু দূরত্ব বজায় রাখতে সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিবর্গ অনুরোধ করেছিল। এছাড়াও রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়ার কথাও বলা হয়েছিল। এটা হয়ে গেছে অপরাধ। গণতান্ত্রিকভাবে প্রস্তাব দেয়ার কারণে মুসলিম ভাবাপন্ন ব্যক্তিদের মনে দারুণ আঘাত লাগে। অন্যের মতকে সম্মান জানানোর শিক্ষা তারা পায়নি। তাদের ধর্ম আরবীয় নীতিবোধ আমাদের দেশী ধর্ম সংস্কৃতিকে মূল্য দেবার কথা শেখায়নি। তারা বিদেশী ধর্মের দালালী করাটাকেই সঠিক ভেবেছে। উপজেলার UNO সাহেব মো: রাশিদুল মারুফ কবীর আরবীয় ইসলাম ধর্মের অনুসারী মুসলমান। ফলে তিনিও মানসিকভাবে দেশি ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ এবং বিদেশী ধর্মের কাছে আত্মসমর্পিত। হাজার মাইল দূরের আরব দেশের ধর্মকে স্থাপন (Penitrat) করার জন্য তিনি জানমাল ছেড়ে দিয়েছেন। তাই মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি নিজে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি নাকি বিশেষ অতিথি হিসেবে - তা কোথাও লেখা নেই।


হিন্দুরা মসজিদ স্থাপন বিষয়ে মন্তব্য করেছে; সম্ভাব্য পরিবর্তনের পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছে- এই সাধারণ গণতান্ত্রিক আচরণকে আরবীয় সংস্কৃতি মেনে নেয়নি, গ্রহণ করার তো দূরে থাক। আরবীয় ধর্ম-সংস্কৃতির আজ্ঞাবহ ঘুঘড়াতলী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল আমীন সহ অন্য মুসলমানরা লিফলেট বিতরণ করে মাইকিং করে হিন্দু ও হিন্দুবিরোধী উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রচার করে। ফলে আরবীয় ধর্মের দাস অন্য মুসলমানরা সংঘটিত হয় ও দেশী ধর্মের প্রতিনিধি হিন্দুদেরকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করার জন্য সংঘটিত হতে থাকে। হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ চিরিরবন্দর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিকাশ রায় ৩ আগস্ট ২০১২ শুক্রবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধর্ণা দিয়ে রাত ১২টার দিকে ১৪৪ ধারা জারি করান। ১৪৪ ধারার যে মাইকিং ছিল তাতেও হিন্দুবিরোধী উস্কানীমূলক বক্তব্য ছিল। বলা হয়েছে "হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মসজিদ নির্মাণে বাধা দিচ্ছে। এজন্য উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তাই ১৪৪ ধারা জারি করা হচ্ছে।" বোধহয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মন থেকে ১৪৪ ধারা জারি করতে চায়নি। ১৪৪ ধারা মানে তিনজনের বেশি মানুষ একখানে থাকতে পারবে না- এমন অবস্থার মধ্যে ৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার আরবীয় ধর্মের চাকর, বর্বর মানসিকতার অন্ধ হিংস্র মুসলমানেরা হিন্দুদের বাড়িঘরের উপর ঝাঁপিয়ে পরে। ৩০টির বেশি বাড়িঘর ভেড়েচুরে, গরু-ছাগল, ধান-চাল, পাট, টাকা, টেলিভিশন লুটপাট - তছনছ করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। কোন মানুষ মারা যায়নি। কিন্তু গুরুতর আহত হয়েছে অনেক জন। অনেক দেশী সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবেন।


ইসলাম কিভাবে নিজেকে বিস্তৃত করেছে, কিভাবে বাংলার মাটিতে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে- এই ঘটনার তার আরেকটি প্রমাণ/ উদাহরণ/ নিদর্শন। এটাই ইসলামের আসল রূপ।


উস্কানীদাতা ব্যক্তিটিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পার্টির সদস্য বলে কেউ কেউ ছোট করার চেষ্টা করছেন। তারা বলেন- "যারা জামাত-শিবির করে, তারা আরবীয় নোংরা দুর্গন্ধময় কদাকার ইসলামী সংস্কৃতির পা-চাটা। আমরা তেমন অগণতান্ত্রিক ধারণার পালক-বাহক নই।" এই 'আমরা' বলতে কেউ কেউ দেশের জনগণকে বোঝান। আমি বলি এই 'আমরা' আসলে আপনারাই মাত্র। দেশের অল্প কয়েকজন স্বশিক্ষিত জনগণ, বাকীরা নয়।


মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় হিন্দু বাড়িঘর আক্রমণের ঘটনায় জামায়াতের ব্যক্তি তো ছিল কয়েকজন মাত্র, আর বাকী হাজার হাজার মানুষ যে সন্ত্রাস করল, তারা কারা? তারা তো দেশের সাধারণ জনগণ। তারা হিন্দুদের উপরে সহিংস সন্ত্রাসী আক্রমণ করল কেন? তারা যদি গণতান্ত্রিক হয়, সুফী ইসলামের পক্ষে থাকে, তাহলে তারা আরবীয় আচরণ করল কেন? জানি মডারেট মুসলমানরা এই কথার উত্তর দিতে পারবে না। যারা বলে কতিপয় মুসলমান নামধারী ব্যক্তির জন্য অন্য মুসলমানরা দুর্ণামের ভাগী হচ্ছে; যারা বলে দুয়েকজন মুসলমানকে দিয়ে সকল মুসলমানকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না, তাদের ভন্ডামী এখন সবাই বোঝে। তাদের মুখে লাথি মারা উচিত। যে মসজিদের কারণে আমার দেশের প্রাচীন ঐতিহ্য হিন্দু সংস্কৃতির সেবকদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয় সেই মসজিদের গায়ে আমি থুথু দেই।


সংযুক্তি: সরকার ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দুদেরকে ২০ কেজি চাল ও পাঁচ হাজার টাকা রিলিফ দিয়েছে। কি হাস্যকর। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেল, দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার, পরম মমতায় গোছানো-সঞ্চিত সম্পদ লুট গেল আর সরকার দিচ্ছে মাত্র কয়েক হাজার টাকা ও কয়েক কেজি চাল। এটা সহায়তা নয় এটা বিদ্রুপ।


খবরসূত্র:


উৎসলিংক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ