হুমায়ূন আহমেদের 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাস থেকে ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী

হুমায়ূন আহমেদের 'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাস থেকে ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী
 


ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দরজা খুলে হাসিমুখে বললেন- কেমন আছ বাবা ?

(তিনি ধরেই নিলেন সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকটি তাঁর ছাত্র)

কলিমউল্লাহ বলল- স্যার ভালো আছি । আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার ?

(তিনি তাকে চিনতে পারেন নি । চিনতে পারার কথাও না)

তারপরও হাসিমুখে বললেন- চিনতে পারবনা কেন ? অবশ্যই চিনেছি। 

(মিথ্যা বলার কারণ হলো তিনি অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, যতবার কোনো ছাত্রকে দেখে তিনি না চেনার কথা বলেছেন, ততবারই তারা ভয়ঙ্কর মনে কষ্ট পেয়েছে । এক ছাত্র তো কেঁদেই ফেলেছিল)

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- বাবা, তোমার নামটা যেন কী ?

- কলিমউল্লাহ।

- হ্যাঁ, তাই তো। কলিমউল্লাহ। এখন পরিষ্কার মনে পড়েছে। তুমি কি খাওয়াদাওয়া করেছ ?

- জি না স্যার ।

- এসো আমার সঙ্গে চারটা ভাত খাও । আয়োজন খুব সামান্য । ভাত, ডিম ভর্তা । ঘরে আরো ডিম আছে । তোমাকে ডিম ভেজে দেব। ঘরে এক কৌটা ভালো গাওয়া ঘি ছিল, কৌটাটা খুঁজে পাচ্ছি না।

কলিমউল্লাহ বলল- এখন খেতে পারব না । আপনার কাছে আমি একটা অতি জরুরী কাজে এসেছি ।

- জরুরী কাজটা কী ?

- মিলিটারির এক কর্নেল আপনার সাথে কথা বলতে চান ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বিস্মিত হয়ে বললেন- আমার সাথে মিলিটারির কী কথা ?

- আমি জানি না । তবে স্যার আপনার ভয়ের কিছু নেই । আমি সঙ্গে আছি ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় বললেন- তুমি আমার কোন ব্যাচের ছাত্র বলো তো ?

- কথা বলে সময় নষ্ট করতে পারব না । মিটিংটা শেষ করে আসি, তারপর গল্প করব ।

- দুইটা মিনিট অপেক্ষা করো, ভাতটা খেয়ে নিই । আমি খুব ক্ষুধার্ত । সকালে নাশতা করিনি।

- ভাত খাবার জন্যে অপেক্ষা করার সময় নাই স্যার।

- তাহলে দাঁড়াও, পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে আসি । আমার সঙ্গে কি কথা বুঝলাম না । সে আমার ছাত্র না তো? করাচি ইউনাভার্সিটিতে আমি দু'বছর মাষ্টারি করেছি । প্রফেসর সালাম সাহেব সেখানে আমার কলিগ ছিলেন ।

কলিমউল্লাহ বলল- আপনার ছাত্র হবার সম্ভাবনা আছে । কর্নেল সাহেব যেভাবে বললেন "স্যারকে একটু নিয়ে আসো"... তাতে মনে হচ্ছে উনি আপনার ছাত্র ।

ধীরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী গাড়িতে উঠে দেখলেন.. গাড়ি ভর্তি মানুষ । তারা সবাই চিন্তায় অস্থির । ধীরেন্দ্রনাথ রায় তাদের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভঙ্গিতে হাসলেন । ভুলে তিনি চশমা ফেলে এসেছেন বলে তাদের কাউকে চিনতে পারলেন না । চোখে চশমা থাকলে এদের অনেককেই তিনি চিনতেন । বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সেই গাড়িতে বসেছিলেন । তাঁদের নিয়ে যাওয়া হবে বধ্যভূমিতে....


(জোছনা ও জননীর গল্প : হুমায়ূন আহমেদ)


সূত্র: ফেসবুক পোস্ট

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ