পূজাতে সঠিকভাবে পূজাটা করুন দয়া করে - রাখাল রায়

সকালে উঠেই কেউ হয়তো পূষ্পাঞ্জলি দিলাম,কেউ হয়তো সেটাও দিলাম না। সুন্দর জামাকাপড় পড়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আর কয়েকশ 'প্রতিমা দর্শন করলাম। পূজা হয়ে গেল?


পূজা শব্দের অর্থ হচ্ছে পূর্ণ রূপে জাগরণ। নিজের আত্ম স্বত্ত্বাকে জাগরণ।প্রতি বছর মা আসছে আবার যাচ্ছে, আত্মোন্নয়ন কতটা করতে পারতেছি? নিজেকে প্রশ্ন করুন তো।


শুধু মায়ের প্রতিমার সামনে গিয়ে বসলাম, মায়ের পায়ে অঞ্জলী নামের ফুল দিলাম, ব্রাহ্মণ কয়েকটা মন্ত্র ঝড়ের বেগে উচ্চারণ করলেন, আপনার নিজের স্বত্ত্বা জাগরিত হবে? প্রতিবছর মায়ের পূজা আসলেই মন খুশিতে নেচে উঠে। কিন্তু মা'কে চেনার চেষ্টা করলাম কখনো?


উঠুন,জাগুন, এবার অন্তত নড়েচড়ে বসুন। সঠিক ভাবে পূজা করুন। প্রতিমা'র মধ্যে যে প্রাণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়, সেই প্রাণ রূপ ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টা করুন। নিজে বসুন, শ্রীমদ্ভগবদগীতা খুলুন, নিজের পূজা নিজে করুন, মা দুর্গা/মা সরস্বতী/মা লক্ষ্মী/কার্তিক/গণেশ কী বা তাদের রূপকে এবার অন্তত জানার প্রয়াস করুন।


নিজের জীবন তরী কেবল এবং কেবলমাত্র নিজেকেই বাইতে হবে। ব্রাহ্মণ আপনার পূজা করে দিল আর আপনি গিয়ে একটু পূষ্পাঞ্জলি দিয়ে আসলেন। কিভাবে আপনার তরী ভগবদ্ধামে পৌঁছাবে বলতে পারেন?


পুতুল পূজা করে না হিন্দু,

কাঠ মাটি দিয়ে গড়া।

মৃন্ময় মাঝে চিন্ময় হেরে,

হয়ে যাই আত্মহারা।(স্বামী বিবেকানন্দ)


একটা প্রতিমা যখন মালির বাড়িতে তৈরি হয় তখন কিন্তু ঐ প্রতিমার পূজা হয় না বা মন্ডপে আনার পরও কিন্তু সাথে সাথেই ঐ প্রতিমাতে পূজা শুরু হয় না। প্রথমে ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমেই পূজা শুরু হয় এবং বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার সমাপ্তি। তাহলে পূজা টা আসলে হয় কার? প্রতিমার নাকি প্রাণের? অবশ্যই প্রাণ রূপ ঈশ্বরের যেটা ষষ্ঠীতে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন ব্রাহ্মণ। দশমীতে বিসর্জনের পর ঐ প্রতিমা আবার জলে ভাসিয়ে দেয়া হয় অর্থাৎ তখন কেউ পূজা করে না ঐ প্রতিমায় কারণ এখন প্রাণ নেই।


প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূজা শুরু এবং বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজা শেষ। স্পষ্টতই পূজা হচ্ছে প্রাণ রূপ ঈশ্বরের, প্রতিমার নয়।


গনেশ,কালী,শিব, দূর্গা সব পূজার মেইন  থিম একই। প্রাণ রূপ ঈশ্বরের আরাধনা করা।


বুঝে হোক বা না বুঝে হোক,আমরা প্রতিটি পূজায় প্রাণেরই পূজা করে থাকি। শুধু তিথি ভেদে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে পূজাগুলো করি।


যেহেতু প্রতিমা পূজায় আমরা প্রাণেরই পূজা করে থাকি, তবে একটাতে হচ্ছে মনুষ্য সৃষ্ট প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূজা,আর একটাতে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক প্রদত্ত দেহরুপ প্রতিমায় আত্মারূপী ভগবানের আরাধনা।একটাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করি আমরা আর অন্যটাতে স্বয়ং ভগবান আমাদের প্রাণ দিয়েছেন।


তাহলে কোনটি শ্রেয়? নিঃসন্দেহে ২য় টি। কিন্তু ১ম টির কি কোন মাহাত্ম্য নেই? অবশ্যই আছে।


১ম মাধ্যমে পূজার আসল মাহাত্ম্য (ধ্যান/সাধনার অভ্যাস,আমরা কার পূজা করি, কোন দেব দেবী দ্বারা আসলে কী বোঝায়, পূজার প্রতিটি উপকরণের তাৎপর্য  ইত্যাদি বিষয়গুলো)অনুধাবন করে ২য় মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করা শ্রেয় অর্থাৎ প্রতিমার মাধ্যমে অনুধাবন করে নিজের মধ্যে থাকা আত্মারূপী ভগবানকে জানা বা খোঁজার চেষ্টা। কিন্তু আমরা হয়তো কোথাও প্রতিমাকেই ভগবান জ্ঞান করে ফেলেছি যা হয়েতো আমাদের আসল রহস্য থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।


তাই সকলের প্রতি সদয় অনুরোধ, প্রতিটি পূজায় ভ্যারাইটিজ মন্ত্র উচ্চারণের পাশাপাশি পূজার আসল মাহাত্ম্য নিজে বোঝার এবং সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করি। অন্তত আমাদের শিক্ষিত সমাজের এই জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনা উচিত।


পূজার মাহাত্ম্য বুঝলে গনেশ আলাদা, কার্তিক আলাদা বা মা দূর্গা আলাদা এই অনুভূতি গুলো আর থাকবে না। তখন ঈশ্বর যে এক ও অদ্বিতীয় এই বিশ্বাস দৃঢ় হবে।


ব্রাহ্মণকে জিজ্ঞেস করুন, নারকেল,ঘট, বেলপাতা ইত্যাদি প্রত্যেকটি সরঞ্জাম কেন ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি উপাদানের মাহাত্ম্য জেনে নিন। গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা করলে ধরুন। তবুও জানুন, সকলকে জানানোর চেষ্টা করুন।


সকালে বিছানা থেকে উঠে স্নান করে পরিবারের সবার সাথে বসে পূজা করুন, গীতা পড়ুন,বাবা মা এবং বড়দের প্রণাম করুন। পূজাতে সঠিকভাবে পূজাটা করুন দয়া করে।


পৃথিবীর সকল জীব সুখী হোক,

সকলেই মঙ্গল লাভ করুক,

কেহ যেন দুঃখ ভোগ না করে,প্রভু।

            ওঁ শান্তি


লিখেছেন: Rakhal Roy দাদা


Link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ