আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় এই লেখাটি পড়া একান্ত প্রয়োজন মনে করছি। অনুগ্রহ করে সম্পূর্ণ পড়বেন। আপনারা জানেন, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা আছে। আমরা কিছু মানুষ যেমন ধর্মান্তররোধে কাজ করি, তেমনি অপরপক্ষ কাজ করে কীভাবে আপনার সন্তানকে ধর্মান্তরিত করতে পারবে। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে, আপনার এলাকায় এসব হয় না বা আপনার সন্তানের বন্ধুবান্ধব খুব ভালো ইত্যাদি। কিন্তু এদের চক্র এতটাই বিশাল এবং গোপনীয় যে, আপনি ভাবতেই পারবেন না আপনার সন্তান নিজ ধর্ম ছেড়ে, নিজের পরিবার ছেড়ে অন্য ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করি এই ঘটনাটি আপনাদের পড়া উচিত।
কিছুদিন আগে এমন একটি কেইস আমাদের সামনে আসে। বিশেষ একদিন ছেলেটি গরুর মাংস খেয়ে এসে বাড়িতে জানায় সে ভিন্ন ধর্মমত গ্রহণ করবে। মা-বাবার মাথায় হাত, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন সবার মধ্যে একটাই প্রশ্ন, ছেলে হঠাৎ কেন গরুর মাংস খাবে? কেন অন্য ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট হবে? পরিবার, আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে যথাসাধ্য বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছেলের একটাই কথা-
“তাদের সৃষ্টিকর্তা সত্য, হিন্দুদের সব মিথ্যা। আমি সত্য পথে যেতে চাই।”
তার কাছে জানতে চাইলাম, তুমি পূর্ণ সুস্থ অনুভব করছো তো? ছেলে ‘হ্যাঁ’ জানালো। এরপর বললাম, এবার বলো,
তুমি নিজ ধর্ম ত্যাগ করতে চাও কেন?
প্রশ্নের উত্তরে তার প্রথম প্রশ্নটি ছিল,
ঈশ্বর এক হলে আপনারা এত দেবদেবীর পূজা করেন কেন?
এই প্রশ্নের মীমাংসা দিলাম। পাল্টা প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে বললাম,
আমরা বুঝলাম তোমার সনাতন ধর্ম ভালো লাগে না, কিন্তু ওই ধর্মমত কেন ভালো লাগে? অর্থাৎ কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তোমার মনে হয়েছে সনাতন ধর্ম থেকেও সেটিই সুন্দর ধর্মমত বা সেটিই একমাত্র সত্য, বাকী সব মিথ্যা?
ছেলের উত্তর,
“তার ভালো লাগে।”
এবার প্রশ্ন করলাম,
ভালো লাগার কারণ কী? আমরা গোলাপ ভালোবাসি; কেননা, গোলাপ সুন্দর ফুল, ভালোবাসার প্রতিক ইত্যাদি; ঠিক সেরকম তুমি এমন কিছু বলো যে বিষয়টিতে তুমি মুগ্ধ হয়ে সেই ধর্মমতে যেতে চাচ্ছ?
তখন ছেলে জানায়
তাদের প্রতিদিনের উপাসনা তার ভালো লাগে।
আমরা বললাম,
সনাতন ধর্মে যে নিত্য দ্বিসন্ধ্যা উপাসনা আছে, তা কী তুমি কখনো করেছ?
ছেলে ‘না’ জানালো।
তারপর বললাম,
তুমি কি বেদ, উপনিষদ্, গীতা বা কোনো শাস্ত্রগ্রন্থ কিংবা কোনো ধর্মীয় বই পড়েছ?
ছেলে ‘না’ উত্তর দিল। তারপর বললাম,
তুমি যে ধর্মমতে যেতে চাচ্ছ সেই ধর্মমতের কোনো বই পড়েছ?
ছেলে ‘না’ উত্তর দিল। এরপর তাকে বাস্তবিক কিছু উদাহরণ দিয়ে যৌক্তিক কিছু প্রশ্ন করলাম। যখন বাস্তবিক কোনো ঘটনা বলে জানতে চাওয়া হয় যে, তুমি এই বিষয়টাকে ঠিক মনে করো না কি বেঠিক? ছেলে উত্তর দিল বেঠিক। এবার সেই ঘটনা সেই ভিন্ন ধর্মমতের পুস্তক থেকে দেখিয়ে বলা হলো, এবার বলো এটা কী ঠিক না কি বেঠিক? ছেলে উত্তর দিল এটা সেই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ, তাই এটা বেঠিক মনে হলেও ঠিক। এভাবে অনেক উদাহরণও সেই ধর্মমতের গ্রন্থ দেখিয়ে প্রশ্ন করা হলো। ছেলের একটাই উত্তর-
“সেই ধর্মমতের ক্ষেত্রে সব ঠিক।”
এবার সেই ধর্মমতের প্রধান ধর্মগ্রন্থ নিয়ে বসা হলো এবং তাকে পড়ানো হলো। পড়ানোর পর কিছু প্রশ্ন করা হলো। এবার বলো এটা কীভাবে যৌক্তিক হয়? ছেলের উত্তর,
“আমার এত জ্ঞান নেই। এটা অনেক উচ্চতর জ্ঞান বিজ্ঞানের বিষয়, আমি বলতে পারব না।”
এবার ছেলেকে সেই ধর্মমতের গুরুদের অসঙ্গতির বিষয়গুলো প্রমাণসহ দেখানো হলো। ছেলেকে বলা হলো, মানলাম তোমার জ্ঞান নেই, কিন্তু তাদের তো আছে। তাহলে এই অসঙ্গতি কেন? ছেলের উত্তর
“এটা তাদের ব্যাপার।”
ছেলেকে বললাম
“ধরো, সনাতন ধর্মশাস্ত্রে ধর্মত্যাগীদের হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়টাকে তুমি কীভাবে দেখবে?”
ছেলের উত্তর,
“খুবই জঘন্য কাজ।”
তারপর একই বিষয় সেই ধর্মমতের বই থেকে দেখানো হলো এবং প্রশ্ন করা হলো, এবার এই নির্দেশনাকে তুমি কী বলবে? ছেলের উত্তর,
“সেই সৃষ্টিকর্তা সত্য, তার সব সত্য, তাই এটা ঠিক আছে।”
আমরা বললাম,
তুমি সত্য ধর্মমতে যেতে চাচ্ছ খুব ভালো কথা, কিন্তু তুমি সেই ধর্মমত সম্পর্কে কোনো কিছুই না জেনে কোনোপ্রকার সিদ্ধান্তে না পৌঁছে যখন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যাবে তখন তোমাকে আইনগত প্রমাণ বা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার্য শপথপূর্বক লিখিত বিবৃতিমূলক একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে। সেখানে উল্লেখ থাকবে, “আমি সেই ধর্মমতের সকল বিষয় অবগত হয়ে সজ্ঞানে তা গ্রহণ করলাম।”
ছেলেকে বললাম,
দেখো! তুমি সত্য ধর্মমতে পদার্পণ করছো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে। এটা কি ঠিক? ছেলে উত্তর দেয় না।
ছেলেকে বললাম,
তুমি নিজের ধর্ম সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখো না, যে ধর্মমত গ্রহণ করতে চাচ্ছ সেই ধর্মমত সম্পর্কেও তোমার জ্ঞান শূন্য, অথচ তুমি তোমার জীবনের সুন্দর সত্য সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করছো চরম মিথ্যার আশ্রয়ে। তোমার নিজের প্রতি ঘৃণা আসবে না?
ছেলে চুপ করে বসে আছে।
আরো কিছু প্রশ্ন করার পর যখন দেখলাম তার সমস্যা মীমাংসাগত নয় তখন প্রশ্ন করা বাদ দিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাস করলাম,
তুমি যাকে ভালোবাসো তার জন্য ধর্মান্তরিত হতে চাচ্ছ, নাকি আগে থেকেই সেই ধর্মমতকে তোমার ভালো লাগে?
ছেলের উত্তর,
“আগে থেকেই তার সেই ধর্মমতকে ভালো লাগে।”
প্রশ্ন করলাম, সেই মেয়ে কোথায়? ছেলের উত্তর,
“বাংলাদেশেই আছে কোনো এক স্থানে।”
এই উত্তর শোনার পর আমাদের বুঝতে আর বাকী রইলো না যে, এটি ধর্মের সৌন্দর্য দেখে ধর্মান্তর নয়, বরং মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই ধর্মান্তরিত হতে চাচ্ছে। আমরা পরিবারকে বললাম, এবার এটা আপনারা পারিবারিকভাবে বন্ধুসুলভ আচরণের মাধ্যমে তাকে বুঝাতে পারেন। অথবা তাকে সব-রকমের সাপোর্ট দিয়ে ধর্মান্তরিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন।
এই পর্যন্ত এসেও আমরা এর মূল ভয়াবহতা বুঝতে পারিনি। পরক্ষণে দেখলাম ছেলের মা-বাবা কান্না করছে। কেন? কারণ, এই ছেলেকে নিয়ে নিজের এলাকায় ফেরত যাওয়া যাবে না। ছেলে এলাকায় গিয়েই পালাবে। এই অবস্থা দেখে আমরা ছেলের অতীত জানতে চাইলাম। কীভাবে সে মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হলো? ছেলে এখন কিছুই স্বীকার করে না। মা-বাবা কান্না করছে। আত্মীয়-স্বজনের কপালে চিন্তার ভাঁজ। বলে রাখি, ছেলের বয়স ১৯+। ছেলের এক আত্মীয় জানালো, ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণি থেকেই এক আত্মীয়ের বাড়ি ছিল। মা-বাবার আদর পায়নি বললেই চলে। পরিবারের সাথে ছেলের কখনোই বন্ধুসুলভ আচরণ ছিল না। ছেলেটি সেই আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতো এবং একটি পানের দোকানে কাজ করতো। বলা যায় যে, যে সময়টাতে তার মেধা-বিকাশ হওয়া উপযুক্ত সময়, সেই সময়টা পানের দোকানে এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছে। ক্রমে ক্রমে তার চিন্তা-চেতনা সেদিকে কনভার্ট হয়েছে। যখন বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করেছে, তখন সেই ধর্মমতের মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। জীবনের প্রথম উচ্চতর মেধা-বিকাশের সময়ে পরিবার ও নিজের সমাজের মানুষের অবহেলা, পান দোকানের মানুষদের জ্ঞান এবং প্রথম ভালো লাগায় ভিন্ন ধর্মমতের মেয়েকে ভালোবাসা-এই সবকিছু মিলিয়ে সে আজকের পর্যায়ে এসেছে। সুতরাং ২-৩ ঘন্টা প্রশ্ন-উত্তর বা বুঝানোতে তার দীর্ঘদিনের আবেগ নষ্ট করতে পারছে না। তাছাড়া এই বয়সটাই এমন; নিজের মধ্যে সবজান্তা ভাব চলে আসা, সর্বোৎকৃষ্ট প্রেমিক ভাবা ইত্যাদি বিষয় তার পিছু ছাড়ছে না।
পরিবারের ভালোবাসা, ধর্মের শুদ্ধ জ্ঞান চর্চা এবং অন্য ধর্মমতের বিষয়ে ভালোভাবে জানা বর্তমানে কতটা প্রয়োজন সেটা যদি এখনো না বুঝেন তাহলে যেদিন আপনার সন্তানের এরূপ অবস্থা হবে সেদিন নিশ্চয়ই বুঝবেন। চোখের জলে ভেসে যাওয়া ছাড়া তখন কিছুই করার থাকবে না। তাই সময় থাকতে সন্তানের প্রতি যত্নশীল হোন।
0 মন্তব্যসমূহ