বাংলাদেশের বহু হিন্দু মনে করে সে খুব “ভালো” আছে, সুখে-শান্তিতে আছে। সারা দেশ জুড়ে হিন্দুদের সাথে যে ধারাবাহিক বৈষম্য, অত্যাচার বা নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে তা আসলে “বিচ্ছিন্ন” ঘটনা, এসব ঘটনার জন্যে আসলে হিন্দুরাই দায়ী। অনেকে এমনও বলেন, শুনি এখানে-ওখানে এটা-সেটা হয়, কিন্তু আমি কোনোদিন দেখি নি। আর আমার সাথে “খুব” খারাপ কিছু না ঘটলে আমি এসবকে বৈষম্য বলতে রাজি না। আমি ভাই খুব সুখে আছি, সম্প্রীতির বাংলাদেশ, নজরুলের বাংলাদেশ, লালনের বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথের বাংলাদেশ (না, এই রবি বুড়ো তো ভুয়া, ব্যাটা কিনা ঢাকা ইউনিভার্সিটি চায়নি। গত সপ্তাহে আমার আমার পিতৃসম প্রফেসর মুক্তমনা মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বললেন)।
ঠিক, একদম ঠিক। আমি এখন আর এমন হিন্দুদের কোনো দোষ খুঁজে পাই না। যে হিন্দু ভোরের আজান শুনে চোখ খুলে “পানি” দিয়ে মুখ ধুয়ে সকালের “নাস্তা” সেরে অফিস বা ইউনিভার্সিটি গিয়ে মুক্তমনা প্রফেসরকে “সালাম” ঠুকে দিন শুরু করছে, সে তো সত্যি সত্যি ভালো আছে। তার মত ভালো হয়তো একজন স্বাধীনচেতা মুসলিম মেয়েও নেই। অফিস বা ইউনিভার্সিটি শেষে ইফতারি খাচ্ছি, হিন্দু হয়েও মুসলিম সহকর্মী বা সহপাঠীদের জন্যে বিশাল করে ইফতারির আয়োজন করছি। চাঁদ রাতে মেহেন্দি পরে ডিপি না দিলে হয়? ও মা ঈদ বলে কথা! ঈদের প্রথম নামাজের আগেই আমায় ফেসবুক পোস্ট করতে হবে, আমি যে মুক্তমনা সেক্যুলার।
১৯৪৬ এর নৃশংস নোয়াখালী গণহত্যা আমি জানি না। ১৯৭১ এ হিন্দু মা-বোনের ধর্ষিতা হওয়া নিয়ে আমি ব্যথিত না। ২০০১ সালে যে হিন্দু মা কেঁদে কেঁদে বলেছিল,
“বাবা, আমার মেয়ে খুব ছোট। তোমরা একে একে আস্তে আস্তে এসে ওকে ধর্ষণ করো।”
তা আমার মন স্পর্শ করে না, আমি তো দিব্যি আছি, কি সুখে আছি। দেশ জুড়ে হিন্দু সম্পত্তি দখল হচ্ছে, বাপ-ভাই খুন হচ্ছে, মা-বোনেরা ধর্ষিতা হচ্ছে, আরে আমার পরিবারে কিছু হয়নি, আমি তো ভালো আছি। ২০২১ এর শারদীয়াতে দেশ জুড়ে তান্ডব হলো। যতন সাহার দুধের বাচ্চা পিতৃহারা হলো, কি দরকার ছিল যতন সাহার মন্দিরে ঠাকুর দেখতে যাবার? আমি তো ভাই ভালো আছি। তিন কোটি হিন্দুর দেশে পাঁচ-সাতটা ভাঙচুর এ আর এমন কি! আমি বাবা এসব দেখবো না, তোমরা সাম্প্রদায়িক হিন্দুরা এসব পোস্ট ফেসবুকে করবে না। আমি খুব ভালো আছি, আমার চারপাশের সবাই কি ভালো! হ্যাঁ, আয়ুব-ইয়াকুবরা হিন্দুদের কাফের মনে করে, কিন্তু আমার সাথে কি ভালো। আমি তো ভালো আছি।
আসলে দোষ উপরে বর্ণিত এই হিন্দুদের না, কারণ তারা নিজের ধর্ম-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, পরম্পরা ভুলে পরগাছার মতো বাঁচতে শিখেছে। “পরগাছা” হবার মধ্যেই সে শান্তি খুঁজে নিয়েছে, সে তো ভালো থাকবেই। সে তো আদতে হিন্দু না, নন-প্র্যাক্টিসড মুসলিম। মাথা নিচু করে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে চোরের মতো বাঁচাকে সে “সুখ” ভাবে। সে কি ভালো থাকবে না?
কৃষ্ণ বা কালী নাম নিয়ে দিন শুরু করে জল মুখ ধুয়ে স্নান সেরে যদি সে দিন শুরু করতো তবে সে পার্থক্য বুঝতো। সালামের বদলে মুক্তমনা প্রফেসর মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরীকে নমস্কার দিলে সে পার্থক্য বুঝতো। পার্থক্য করতে পারতো ইফতারির বদলে নারায়ণ পূজার সিন্নি খেতে ডাকলে। মুসলিম বান্ধবীরা অষ্টমীর অঞ্জলি শেষে স্ট্যাটাস দেয়? মহালয়া নিয়ে আবেগাপ্লুত হয় চাঁদ রাতের মত? এই প্রশ্ন গুলো যে হিন্দুর মনে আসবে সে ভালো থাকতে পারে না, তার মন কাদঁবেই অন্য হিন্দুর দুঃখ-দুর্দশা দেখে।
হিন্দু নামধারী নন-প্রাকটিসড মুসলিমরা ভালো ছিল-আছে- থাকবে। হ্যাঁ, তারা আমাদের আত্মীয়-বন্ধু কেউ না। এতে যদি আমি একা হই, হিন্দু হিসেবে একা মাথা তুলে বাঁচবো।
0 মন্তব্যসমূহ