জন্মভূমি প্রতিবেদক : ৪৭-এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ফর্মুলায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। তারপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অভ্যুদয় বাংলাদেশ। ৭১-এর চেতনা ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। কয়েক বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লাথি মেরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হল এই ভূখন্ড। ৮৮-তে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ধর্মীয় সংখ্যালগুদের কাগজপত্রে সীল মেরে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করে।
সেই থেকে তথাকথিত সম্প্রীতি দৌড়ে পালাচ্ছে। বাস্তবতায় দুই বা অধিক সম্প্রদায়ের সহাবস্থান বাংলাদেশে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠে। পঞ্চাশ বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ধর্মীয় সংখ্যালগুদের উপর বৈষম্য বঞ্চনা, মন্দির ভাংচুর, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিতকরণ সহ দেশ ছাড়ার বেদনা বিধুর অভিজ্ঞতা। ৭২ সালের জনসংখ্যানুপাত ১৯% থেকে আজ ৯% এ নেমে এসেছে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেশে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু টানাপোড়েন। সরবে নীরবে নিরাপত্তাহীনতায় কাঁদছে সংখ্যালঘ সম্প্রদায়।
সম্প্রতি হিন্দু আইন সংশোধনের প্রশ্নে হিন্দু নারীদের আইনগত অধিকার অর্থাৎ পিতার সম্পত্তিতে ভাগ, বিবাহবিচ্ছেদ ও সন্তানের অভিভাবকত্ব প্রশ্নে হাইকোর্টে রিট করে একদল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লোকজন। হাইকোর্টও সরকারের কাছে জানতে চেয়ে রুল জারি করে। হঠাৎ করে এই ইস্যু-র আগমন কেন ?এ দেখছি শ্রীরাম চন্দ্রের অকাল বোধন ! হিন্দু নারীদের জন্য এতো উথলে পড়া দরদ বা জামাই আদরের রহস্য কী?
ঢাকার কয়েকটি তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট করে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পন্থী বুদ্ধি বেছে খাওয়া বুদ্ধিজীবীরা (যারা পরজীবী) চশমায় ঝাঁপসা দেখছেন, প্লিজ গ্লাস পরিষ্কার করে নিন। এসব তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনের আওয়ামীপন্থী চেতনার বুদ্ধিজীবী সুলতানা কামাল গং -হিন্দু আইন সংশোধনের আগে জবাব দিন হিন্দু সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কেন? ১৯% থেকে ৯% হল কিভাবে? মন্দির ভাংচুর, লুটপাট ও ধর্ষণ নিয়ে সমীক্ষা করুন। দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেড়াজালে অনেক হিন্দু যুবক জেলে আছে। অনেক হিন্দু শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছে, দর্জী বিশ্বজিৎকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এইসব লাঞ্ছনা-বঞ্চনার হিসাব দিয়ে পরে হিন্দু আইনের সুপারিশ করুন।
বাংলাদেশের ভূখন্ডে আবহমানকাল থেকেই হিন্দু-মুসলিম পারিবারিক আইন ধর্মীয় প্রথা। মুসলিম আইন পবিত্র কুরআন-হাদিস মেনে চলবে। হিন্দুদের প্রচলিত আইনও ধর্মের সাথে সম্পর্কিত। মুসলিম আইন সংশোধন হয় না। হিন্দু আইন সংশোধন একাধিকবার হয়েছে। যেমন সতীদাহ প্রথা, বিধবা বিয়ে। বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমানদের পারিবারিক আইন যেমন আছে তেমন থাকবে এটাই চিরন্তন। হিন্দু মুসলিম পারিবারিক আইন নিয়ে হাইকোর্টের কিছু করার নেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মাথা ব্যথারও নেপথ্যে শাসকের কাছ থেকে মাল কামানোর ধান্দাবাজি। চেতনপন্থী বুদ্ধিজীবীরা নারী স্বাধীনতা ও অধিকারের নামে সমাজে হিংসা, পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করা, সমাজে নারীকে অরক্ষিত করার পায়তাঁরা করছে।
হিন্দু আইন সংশোধনের পরিণতি বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালগুদের জীবনে নেমে আসবে এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।
প্রথমত: ধর্মান্তরিত বড় সমস্যা। বাংলাদেশ সরকারের আইন হিন্দু-মুসলিম বিয়ে করলে তাকেও মুসলিম হতে হবে, বৌদ্ধ খৃষ্টানও তাই। সম্পত্তির লোভে যুব সমাজ আকৃষ্ট হতে পারে ধর্মান্তরিত করার প্রক্রিয়ার। যা সমাজকে আরও অস্থির করে তুলবে।
যারা ভারত-নেপালের উদাহরণ দেন তাদের জানা উচিত ভারতে আইন করে ধর্মান্তরিত করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশে যদি ভারত-নেপালের মতো অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক দেশ হতো তবে সম্ভব হত। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতেও লাভ-জিহাদের ফাঁদে পড়ে অনেক তরুণ-তরুণী অন্ধকারে ডুবে আছে! এর বড় প্রমাণ কেরালা স্টোরি! বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিম অসাম্প্রদায়িক। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদ্বয় এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ধর্মীয় মূল্যবোধ রঙ্গরসে পরিণত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে সরকার,রাজনৈতিক দল ও সমাজে প্রভাবশালী দুষ্ট দানব যারা, -সাধারণ মানুষ নয় । রতন তালুকদারঃ সম্পাদক, সাপ্তাহিক জন্মভূমি। নিউ ইয়র্ক ।।
প্রথম প্রকাশ:
www.jonmobhumi.com
সাপ্তাহিক জন্মভূমি (প্রবাসে বাংলাদেশের মুখ)
প্রকাশকাল: 19 May 2023 / Weekly Janmobhumi New York, USA
0 মন্তব্যসমূহ