সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হলে আপত্তি, কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র হলে সম্মতি - নারায়ণ দেবনাথ

সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হলে আপত্তি, কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র হলে সম্মতি - নারায়ণ দেবনাথ



৩০ আগস্ট ২০২২


✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️

সংখ্যাধিক্যের জোরে যদি বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হতে পারে তাহলে একই কারনে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হতে পারবে না কেন? ভারত এখনো হিন্দু রাষ্ট্র হয়নি শুধু হিন্দুত্ববাদী একটি সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাতেই সারা পৃথিবীর মুসলিমদের মধ্যে হৃদকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে। অপর দিকে বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলাম স্বীকৃত যা সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন শুধু ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হবে অন্য ধর্ম নয় কেন এই মৌলিক প্রশ্নটি কেউ করতে পারবে না।


বাংলাদেশ কখনো অসাম্প্রদায়িক ছিল বলে প্রমাণ নেই। কারন সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পূজা-অর্চনা বড় বড় মন্দির পুলিশ পাহাড়া ছাড়া নিরাপদ নয়। এখন এটি যদি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হয় তাহলে ভাবের ঘরে চুরি করা হয়। আসলে বাংলাদেশ যে তার অতীত ভুলতে পারেনি এরচেয়ে বড় সত্য আর কিছু হতে পারেনা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যে এরচেয়ে বেশী অধিকার দেয়ার নিয়ম নেই সে কথাটি শেখ মুজিবুর রহমান ভুলে গিয়েছিলেন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে সত্যটি নতুনভাবে উদ্ভব  হয়েছে তা সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশটি যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ তা প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম উল্লেখ করে। দ্বিতীয় বার ঘুম ভাঙে ১৯৮৮ সনে জেনারেল এরশাদ সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করে।


নুতন ভাবে বাংলাদেশের খৎনা(মুসলমানি) হওয়ার পর বিরোধী রাজনৈতিক নেতা হিসাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন ধর্মের নামে জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে।বিল পাশের প্রতিবাদে মিছিল মিটিং এবং  যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আরেক বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সংবিধানের সংশোধনী জনগন মেনে নেবে না। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি প্রগতিশীল ও গনতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহবান জানিয়েছিলেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই সংশোধনী বাতিল করা হবে।


কথা রাখেননি জননেত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২এর সংবিধানে ফিরে এসেছিলেন কিন্তু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করেননি।


রক্তের সম্পর্কের চেয়ে ধর্মের বন্ধন অনেক বেশি শক্তিশালী একজন মুসলিমের কাছে। অমুসলমান পিতাকে হত্যা করা যেমন একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান পুত্রের ধর্মীয় কর্তব্য তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনাও তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের ভুল সিদ্ধান্তকে হত্যা করে সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দিতে পারেনি।

ইসলামে ধর্ম ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্য। ইসলাম ধর্মের অফুরন্ত প্রান শক্তির আধার হল সর্বাত্মক ঐক্য। সেই ঐক্যের জন্যই জননেত্রী রাষ্ট্রধর্ম থেকে ইসলামকে বাদ দিতে পারেননি। ইসলামের আবেগ-অনুভূতি চিন্তা আদর্শ এবং একাত্মতার মধ্যেই নিহিত ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের দীক্ষা। একজন মুসলিম হয়ে জননেত্রী কিছুতেই ধর্মের এই শিক্ষাকে অস্বীকার করতে পারেননি। ধর্মের এই নির্দেশ রাজা আমীর ফকির নির্বিশেষে সকল মুসলমানের প্রতি প্রযোজ্য। সুতরাং ইসলামের ধর্মতত্ত্ব অনুযায়ী শেখ হাসিনা ঠিক কাজই করেছেন।


অপর দিকে ভারত যদি হিন্দু রাষ্ট্র হতে চায় তাতে শুধু বাংলাদেশী মুসলিম নয় সারা পৃথিবীর মুসলমানদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অথচ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়েছিল দেশ।হিন্দু তার ধর্ম সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের স্বীকৃতি নিয়ে কিছুতেই একটি আলাদা জাতি হিসাবে পরিচিত হতে পারবে না। অথচ পৃথিবীতে হিন্দু ছাড়া সব ধর্মেরই আলাদা পরিচিতি স্বীকৃতি এবং নিজস্ব ভূখণ্ড রয়েছে।এমনকি পৃথিবীতে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দেশ ইহুদিদেরও নিজস্ব পরিচিতি এবং ভূখণ্ড রয়েছে নেই শুধু হিন্দুদের। 


ভারত থেকে যখন চাল ডাল গম নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ঔষধ কোভিডের ভ্যাক্সিন বাংলাদেশে যায় তখন তাদের কোন আপত্তি নেই বিজাতীয় দেশের কোন জিনিস আমরা ব্যবহার করব না এমন কথা বলে না। কিন্তু যদি বলা হয় ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হতে চায় তাতেই তাদের আপত্তি শুরু হয়। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেদেশে গেলেও তাদের আপত্তি।কারণ ভারতের বর্তমান সরকার সেদেশে হিন্দু পরম্পরাকে পুনরুদ্ধার করতে চায় তাতেই মুসলমানদের গাত্রদাহের শেষ নেই। হিন্দু তার ঐতিহ্য পরম্পরা নিয়ে কিছুতেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেনা। কারণ সারা পৃথিবীর মুসলিমরা মনে করে তাদের ধর্মীয় বিধান অনুসারে গাজোয়াতুল হিন্দের নামে ভারত পুনরায় একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে। তাদের এই দিবাস্বপ্ন যে কতটা ভয়াবহ তা তাদের প্রাত্যহিক কার্যকলাপেই প্রতিফলিত হয়। কিন্তু এইভাবে একটি জাতির স্বপ্নকে আটকে রাখা যায়না। ভারতের বর্তমান সরকার যে একটি হিন্দুত্ববাদী সরকার এতেই সব মুসলমানদের মধ্যে হৃদকম্পের সৃষ্টি হয়েছে। তাই ভারত খারাপ ভারত অসহনশীল দেশ ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করা হয় তাই কিছুতেই ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হতে পারবেনা। এই মনোভাব যে শুধু দেশের বাইরে এমন নয় আভ্যন্তরীণ ভাবেও ভারত একই সমস্যার সম্মুখীন। কিন্তু বালির বাঁধ দিয়ে তীব্র খরস্রোতা নদীকে আটকে রাখা যায় না। ভারত একটি হিন্দু রাষ্ট্র ছিল আছে থাকবে স্বীকৃতি না থাকলেও। মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভারত যে একটি হিন্দুরাষ্ট্র তা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা শুধু দরকার প্রশাসনিক স্বীকৃতির। মুঘল বৃটিশ শাসন এবং দেশভাগের পর যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বকলমে ভারতকে একটি পরনির্ভরশীল তোষামোদি রাষ্ট্রে পরিনত করতে। ফলে দীর্ঘদিনের এই অচলায়তন ভেঙে রাতারাতি হিন্দুরাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। বিবর্তিত একটি সমাজকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে দরকার সময় এবং জাগরনের। ইতিমধ্যে ভারতে সে জাগরনের উন্মেষ ঘটেছে। এখন শুধু দরকার এই জাগরনের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে দেয়া। ভারত একদিন তার অভীষ্ট লক্ষে নিশ্চিত পৌঁছবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে তবেই সনাতনীদেরই জয় নিশ্চিত হবেই হবে।


https://www.facebook.com/debnath.narayan.127/posts/pfbid02coxsnqFwuPJcfwd44iArhQZumE9Y2vs9K2WtCS5uYwPpXZcjfFgBsSKUuqTh1WZyl

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ