চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্তীর আহ্বান

ধ্বংসপ্রাপ্ত সরস্বতী প্রতিমা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
ধ্বংসপ্রাপ্ত সরস্বতী প্রতিমা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম

তারিখ: ১৫ জানুয়ারি, ২০২২


রেঞ্জ ডিআইজি সমীপে খোলাপত্র:

চট্টগ্রামের সম্মানিত ডিআইজি মহোদয়, 

আপনি হয়ত অবগত আছেন, চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়নের লালারহাটে আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন সড়কের পাশে প্রতিমা তৈরির কারখানায় সরস্বতী পূজাকে উপলক্ষ করে তৈরি হওয়া ৩৫টি প্রতিমা বর্বর দুষ্কৃতকারীরা বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। বাসুদেব পালের প্রতিমা তৈরির এ কারখানাটি প্রায় ৮৫ বছরের পুরনো। তার পূর্বপুরুষরা মুন্সীগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে এসে প্রতিমা তৈরির কারখানাটি তৈরি করে। গত ১৪.০১.২০২২ শুক্রবার, রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে ভোর সাড়ে ৬ টার মধ্যে প্রতিমাগুলো ভাঙচুর করা হয়েছে বলে সন্দেহ করে কারখানার সত্ত্বাধিকারী মৃৎশিল্পী বাসুদেব পাল। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিক্রির জন্য প্রতিমাগুলো বানানো হচ্ছিল। উন্মুক্ত স্থানে বাঁশের বেড়ার মাধ্যমে ঘেরা দিয়ে সাদা পর্দায় ঢেকে নির্মাণাধীন প্রতিমাগুলো রাখা ছিল। সকালে প্রতিমা ভাঙার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বোয়ালখালী থানার পুলিশ। সারাবাংলা নামক একটি অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে আমি সংবাদটি জানতে পারি। সে অনলাইন পত্রিকায় বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল করিমের এ ঘটনা প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারে মো. আব্দুল করিম বলেন:

"কারখানা বলা হলেও রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে প্রতিমাগুলো রাখা হয়েছিল। কেউ পরিকল্পিতভাবে প্রতিমাগুলো ভেঙেছে বলে মনে হয়নি। ঠেলাগাড়ি অথবা মিনিট্রাকে বাঁশ নেওয়ার সময় অন্ধকারে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখছি।"

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথাগুলো অধিকাংশই অর্ধসত্য বা অসত্য। তিনি বলেছেন, "রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে প্রতিমাগুলো রাখা হয়েছিল"। তবে সম্পূর্ণ সত্য হল উন্মুক্ত স্থানে বাঁশের বেড়ার ঘেরা এবং সাদা পর্দায় নির্মাণাধীন প্রতিমাগুলো ঢাকা ছিল। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও বলেছেন, 


"কেউ পরিকল্পিতভাবে প্রতিমাগুলো ভেঙেছে বলে মনে হয়নি। ঠেলাগাড়ি অথবা মিনিট্রাকে বাঁশ নেওয়ার সময় অন্ধকারে দুর্ঘটনা ঘটেছে"।


এ বাক্যটি শুধু আপত্তিকর নয় হাস্যকরও। ভাঙা প্রতিমাগুলোর দিকে তাকালে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, প্রতিমাগুলো এক বা একাধিক ব্যক্তির পর্যায়ক্রমিকভাবে ভাঙা। ঠেলাগাড়ি বা মিনিট্রাকের দুর্ঘটনা হলে প্রতিমাগুলো দুমড়েমুচড়ে যেত। মহোদয়, আপনি বিধ্বস্ত প্রতিমাগুলোর ছবির দিকে তাকালে নিজেও সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন আশাকরি। থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা দিনের আলোর মত দৃশ্যমান বিষয়কে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে অন্যদিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই তার থেকে এ ঘটনার অতিরিক্ত  তদন্তে কি রিপোর্ট আসবে তা সহজেই অনুমেয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, বাসুদেব পাল এ ঘটনা প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হয়ত তিনি বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিবৃতিটিই মুখস্থ বলবেন অথবা লিখিতভাবে দিবেন। তাই আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনি আশাকরি ঘটনাটি প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান করবেন, যেন চট্টগ্রাম বিভাগে এই প্রকারের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর ঘটতে না পারে। এমনিতেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের হৃদয়ে ২০২১ খ্রিস্টাব্দে শারদীয় দুর্গোৎসবে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের দুর্বিষহ স্মৃতি রয়েছে। সরস্বতী পূজাতেও যদি এমন ঘটনা ঘটা শুরু হয়; তবে তা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনবলকে ভবিষ্যতে  ব্যাপকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর রোধকল্পে প্রশাসনের আন্তরিকতা এবং সক্রিয়তা প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস আপনার এ দুটি বিষয়ই পর্যাপ্ত রয়েছে। ধন্যবাদান্তে,


কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 

সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ


সূত্র: ফেসবুক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ