সাঁওতাল নারীর বাড়িতে হামলার চিত্র। শুক্রবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায়। ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি, গাইবান্ধা, প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪০
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীর স্বজনদের অভিযোগ, রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
মারধরের শিকার ওই নারীর নাম ফিলোমিনা হাঁসদা (৫৫)। তিনি বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফিলোমোনা হাঁসদার ছেলে ব্রিটিশ সরেন অভিযোগ করেন, রাজাবিরাট গ্রামের পাশে সাঁওতালদের পৈতৃক জমি আছে। জমিটি পতিত অবস্থায় ছিল। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সেই জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মাটি ভরাট করছিলেন। হঠাৎ করে মাটি ভরাট করতে দেখে কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন নেকোলাস মুর্মুর নামের এক যুবককে মারধর করে তাড়িয়ে দেন। খবর পেয়ে ব্রিটিশ সরেন প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁকেও লাঠি নিয়ে মারতে আসেন। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ধরতে গেলে চেয়ারম্যান তাঁর মাকে থাপ্পড় দেন। এতে তিনি মাটিতে পড়ে আহত হন। উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে বিকেলে তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তাঁর মা সেখানেই চিকিৎসাধীন।
ব্রিটিশ সরেন বলেন,
‘এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে আমাদের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন লাগিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন,
‘যে ১৬ শতক জমিতে মাটি কাটা হয়, সেটি আমার কেনা জমি। আমার জমির দলিল আছে। জমি আমার নামে রেকর্ডও হয়েছে। সেই জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ব্রিটিশ সরেনসহ কয়েকজন সাঁওতাল যুবক মদ খেয়ে উল্টো আমাকে মারধর করেন।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদা-ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে বলেন,
আগে রাজাবিরাট গ্রামে অনেক সাঁওতাল পরিবার ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্থানীয় বাঙালিরা নানাভাবে দখলে নিয়েছেন। সেই কারণে সেখান থেকে অনেক সাঁওতাল পরিবার অন্য জায়গায় চলে গেছে। এই সুযোগে চেয়ারম্যান জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন।
এ ঘটনায় আজ শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন,
জমিসংক্রান্ত বিরোধের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে রাতে সাঁওতাল নারীর বাড়িতে কে আগুন দিয়েছে, সেটা কেউ দেখেনি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে রাজাবিরাট এলাকায় সমাবেশ করে সাঁওতালেরা। এর আগে একটি মিছিল রাজাবিরাট এলাকা প্রদক্ষিণ করে। সাহেবগঞ্জ বাগদা–ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির ও সদস্যসচিব মোরশেদ হাসান, সদস্য তারা মনি কিসকু, শ্যামবালা হেমব্রম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সাঁওতালদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র: প্রথমআলো
0 মন্তব্যসমূহ