সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে হিন্দুদের বসতবাড়ি, দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। একমাত্র বিডিনিউজ২৪ ছাড়া বড় কোন মিডিয়া এই নিউজ প্রচার করেনি। ঘটনার পর পুলিশ বলছে এক হিন্দু তরুণ ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননা করলে তৌহিদি জনতা মিছিল নিয়ে সেই ছেলের বাড়িতে এসে তাদের ক্ষোভ জানায়, ঘটনা সামান্যই, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।
যে ছেলে কথিত তৌহিদি জনতার ধর্ম অবমাননা করেছে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু যারা এই অভিযোগে লুটপাট করেছে, ভাংচুর করেছে তাদের কিছু করা হয়নি। আবহমানকাল ধরে একই স্কিপ্ট চলছে। কোন পরিবর্তন নেই। দোয়ারাবাজারে হিন্দুদের উপর হামলা আরো অগুণতি সংখ্যালঘু নির্যাতনের মত এটিও হারিয়ে যাবে। কোন নিউজ ছাপা হয়নি। যতটুকু প্রকাশ হয়েছে তা পূর্ণ ছবি নয়। ভারতে এরকম কোন ঘটনা ঘটলে সেক্যুলার মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী, কবি সকলে এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে প্রতিটি ঘটনার রেকর্ড থাকে। ফলে আগামীতে কেউ পিএইচডি করতে গেলেও বিস্তর তথ্য দলিল পেয়ে যায়। বাংলাদেশে কোন রেকর্ড নেই হিন্দু নির্যাতনের।
একটা উদাহরণ দেই। কাপ্তাই বাঁধ বানিয়ে হাজার হাজার আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে শরণার্থী করেছিল সরকার, তাদের কী নিদারুণ করুণ জীবন সংগ্রাম তার উপর অনেক বই লিখেছে আদিবাসী লেখকরা। বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে যার শিক্ষিত ও লিখতে পারে- এদের স্বভাব চরিত্র যোগেন মন্ডলের মত। এর মধ্যে যেসব হিন্দু বামপন্থী তারা মানসিকভাবে থাকে মুসলিম লীগ। আওয়ামী হিন্দুগুলো নিজের দলের সময়ের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কথা বলতে চায় না। ফলে বাংলাদেশে আদিবাসীদের উপর রাষ্ট্রের বিমাতা সূলভ আচরণের রেকর্ড থাকলেও হিন্দুদের উপর বিমাতা সূলভ আচরণের কোন প্রমাণ নেই!
বুদ্ধিজীবী আর লেখকরা এই একটা বিষয়ে সকলেই ঐক্যমতে পৌঁছায়। সেলিনা হোসেন বা মুনতাসির মামুন, তাদের সঙ্গে বদরুদ্দি উমার বা সলিমুল্লাহ খানের দ্বিমত খুব কম। জামাতি হেফাজতী বিএনপি বুদ্ধিজীবীদের এখানে টানছি না। এরা তো সাম্প্রদায়িক রাজনীতিই করেন। সলিমুল্লাহ খান দুদিন আগে বললেন ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে কাল্পনিক গল্প ছড়িয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে সেলিনা হোসেন কোলকাতা গিয়ে বাংলাদেশের অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক পরিবেশের গল্প শুনিয়ে এসেছিলেন। রানা দাশগুপ্ত কয়েক বছর আগে ভারত সফরে বিজেপির সঙ্গে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে আলোচনার যে নিউজ বেরিয়েছিল তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুনতাসির মানুষ হিন্দুদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কারণ উনার পার্টি তখন ক্ষমতায়। ফলে সলিমুল্লাহ-বদরুদ্দিনকে কোন শ্রেণীতে ফেলে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নেই। এই জাতির নিউক্লিয়াস হচ্ছে মুসলিম লীগ। দ্বিজাতিতত্ত্ব তাদের বেসমেন্ট।
ভারতীয় মিডিয়া নাকি বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। কিছু হিন্দু এলাকায় নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে দাবী করছে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত আছে এখন হিন্দুরা। এগুলোই রেকর্ড থেকে যাবে। এগুলোই ভাবিকালের গবেষকরা খুঁজে পাবে। পৃথিবী জুড়ে মুসলিম লীগের আগ্রাসনের ইতিহাস লুপ্ত হয়েছে। তাদের সাম্রাজ্যবাদের নাম হয়েছে “ইসলামে ইতিহাস” যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ডিগ্রী নিতে পারবেন! কবে একটা পরিত্যাক্ত বাবরি মসজিদ হিন্দুরা ভেঙেছিল তার হাইপ আজো বিশ্বজুড়ে। আর গোটা বিশ্বে মুসলিম সাম্রাজ্যবাদের যুগে হাজার হাজার গির্জা, পেগোডা, মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ হলো তার জন্য ইতিহাসে কোন অনুতাপের জায়গা নেই। তার নাম হয়েছে “ইসলামী ইতিহাস”! ইহুদীদের মক্কা খ্যাত জেরুজালেমের ভেতর একদম সোলাইমান ডোমের মধ্যে একটা মসজিদ মুসলিম শাসনের সময় বানানো হলো, কাশির মত হিন্দু প্রধান তীর্থস্থানে আওরাঙ্গজেব মসজিদ বানালো এমন দ্বিতীয় নজির পৃথিবীতে নেই!
বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ঝামেলা হলে নাকি ভারতের বিজেপির লাভ। প্রকান্তরে এটাকে বিজেপির কাজ বলে দাবী করা হয়। তাহলে ভারতে মুসলিমদের উপর ঝামেলা হলে তো সেটা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মুসলিম লীগের সুবিধা হয়। ওগুলো কি তাহলে মুসলিম লীগই করায়? এতবড় গবেষণাপত্র তো ভারতের সেক্যুলাররা কোনদিন প্রকাশ করলো না? তাদের দেখেছি সাম্প্রদায়িকতার জন্য বিজেপি আরএসএসকে দায়ী করতে। একমাত্র বাংলাদেশীদের দাবী বিচ্ছিন্ন কিছু যা ঘটছে তার জন্য মুসলমানরা দায়ী নয়, ওগুলো ভারতের বিজেপি করছে!
সূত্র: সুষুপ্ত পাঠক
0 মন্তব্যসমূহ