কোলাজ |
রাজীব আহাম্মদ, প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৭:১০ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৮:৩১
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হামলায় ৪ আগস্ট নিহত হন হবিগঞ্জ সদরের রিপন চন্দ্র শীল। তাঁর ছোট ভাই শিপন চন্দ্র শীল আগের দিন পুলিশের গুলিতে আহত হন। অভ্যুত্থানে শহীদের সরকারি তালিকায়ও আছে রিপন শীলের নাম। তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের তালিকায় রিপন শীলকে সংখ্যালঘু নিপীড়নে নিহত দাবি করা হয়েছে।
গত ১১ অক্টোবর পৌর শহরের অনন্তপুর আবাসিক এলাকার রিপনের বাসায় গিয়েছিলেন সমকালের হবিগঞ্জ প্রতিনিধি। সেদিন তাঁর মা রুবী রানী শীল, বোন চম্পা শীল এবং ভাই শিপন শীল নিশ্চিত করেছিলেন, শেখ হাসিনার পতন ঘটানোর আন্দোলনে অংশ নিয়ে রিপন শীল প্রাণ হারান।
হবিগঞ্জ ছাত্রদল সভাপতি শাহ রাজিব আহমেদ রিংগন সমকালকে বলেন,
রিপন শীল ছিলেন বিএনপিকর্মী। ৪ আগস্ট বিকেলে হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাজার হাজার আন্দোলনকারীর প্রতিরোধে টিকতে না পেরে তৎকালীন এমপি আবু জাহিরের বাসায় অবস্থান নেয়। আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘেরাওয়ের সময় রিপন শীল ছিলেন সামনের সারিতে। আবু জাহিরের বাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি শহীদ হন।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যানে ৪ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ২ হাজার ১০টি। হত্যাকাণ্ড হয়েছে ৯টি। ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। আটটি হত্যায় সাম্প্রদায়িক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জমি ও টাকা নিয়ে বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে নিহত হয়েছেন ছয়জন। থানা ঘেরাওয়ের সময় জনতার পিটুনিতে নিহত হয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। হৃদরোগে মারা গেছেন একজন। আরেকজনের খুনের কারণ এখনও অজানা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে আটটি।
ঐক্য পরিষদের তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিং সেলের সদস্য সচিব মনীন্দ্র কুমার নাথ সমকালকে বলেন,
আগস্টে দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল না। সাংগঠনিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা একসঙ্গে করে তালিকা করা হয়েছে। আমরা তদন্ত সংস্থা না। সত্য কী, সরকার তদন্ত করে দেখুক।
অভ্যুত্থানে শহীদ রিপন শীলকে কেন সংখ্যালঘু নির্যাতনে নিহত দাবি করা হলো– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ৪ থেকে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের যারা নিহত হয়েছেন, তাদের নাম রাখা হয়েছে এই তালিকায়।
ছাত্র-জনতাকে হটাতে গিয়ে নিহতকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন দাবি
রংপুরে ৪ আগস্ট নিহত হন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা। তিনি রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের পরশুরাম থানার সভাপতি ছিলেন। সমকালের রংপুর অফিস প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানিয়েছে, ৪ আগস্ট সরকার পতনের একদফা দাবিতে নগরীর টাউন হলে জমায়েত হওয়া ছাত্র-জনতাকে হটাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল বের করে। আওয়ামী লীগের মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া হারাধন রায় সংঘর্ষের একপর্যায়ে পালিয়ে কালীবাড়ি মন্দিরে ঢুকতে চাইলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে আন্দোলনকারীরা। এরপর সাত ঘণ্টা তাঁর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই সময় তাঁর সঙ্গে নিহত হন ফাত্তা সবুজ নামে এক মুসলমান ব্যক্তি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের নেতা নাহিদ হাসান বলেন,
সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রশ্নই আসে না। হারাধনের নেতৃত্বে সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। প্রতিরোধে হারাধন নিহত হন। ঐক্য পরিষদ এ হত্যাকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বলে দাবি করলেও হারাধনের স্ত্রীর করা মামলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষ বলা হয়েছে।
ঘেরাওয়ের সময় গণপিটুনিতে পুলিশ নিহত
ঐক্য পরিষদের তালিকায় নিপীড়নে নিহত হিসেবে হবিগঞ্জের বনিয়াচং থানার উপপরিদর্শক সন্তোষ চৌধুরীর নাম রয়েছে। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন, সাম্প্রদায়িক হামলা নয়, থানায় জনতার পিটুনিতে নিহত হন সন্তোষ।
অন্তর্বর্তী সরকার এবং পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশের ৪৪ সদস্যের ছয়জন হিন্দু। কেউই সাম্প্রদায়িক ঘটনায় নয়, থানায় হামলায় নির্মমভাবে নিহত হন। পুলিশের হত্যা তালিকায় সন্তোষের নামও আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট বেলা ১১টায় ছাত্র-জনতার মিছিলের ইটপাটকেলের জবাবে পুলিশ গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলে চারজনসহ ৯ জন নিহত হন। দুপুরে শেখ হাসিনার পতনের খবরের পর হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করেন।
বানিয়াচং উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এসএম খোকন বলেন,
পুলিশের গুলিতে ৯ জন নিহতের খবরে ভয়াবহ ক্ষোভ দেখা দেয়। কোন কোন পুলিশ সদস্য গুলি করেছে– এ প্রশ্নে উপপরিদর্শক সন্তোষের নাম আসে।
সন্তোষ রাইফেল দিয়ে গুলি করেছেন– খবর ছড়ালে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ দিনভর থানা ঘেরাও করে সন্তোষকে তুলে দেওয়ার দাবি জানায়। রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী গিয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করলেও উন্মত্ত জনতা সন্তোষকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মারে।
সন্তোষ হত্যায় সাম্প্রদায়িক উপাদান নেই জানিয়ে বানিয়াচং থানার ওসি কবির হোসেন বলেন,
অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সাংবাদিক প্রদীপ নিহত সংঘর্ষে
৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে প্রেস ক্লাবে নিহত হন দৈনিক খবরপত্রের সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক (৫৫)। তিনি ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে সেদিন প্রেস ক্লাবে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতাকে হত্যা করা হয়। তাঁরা সবাই মুসলমান।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ৪ আগস্ট রায়গঞ্জের ধানগড়া এলাকায় আন্দোলনকারীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। কার্যালয়টি গুঁড়িয়ে দেন আন্দোলনকারী। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে পাশের প্রেস ক্লাবে আশ্রয় নেন। আন্দোলনকারীরা তখন প্রেস ক্লাবে হামলা করে। অন্য সাংবাদিকরা বেরিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সঙ্গে আটকা পড়েন প্রদীপ ভৌমিক। তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং প্রেস ক্লাব পাশাপাশি। আওয়ামী লীগ অফিসের পর প্রেস ক্লাবেও হামলা হয়। এতে ১০ থেকে ১২ সাংবাদিক আহত হন।
সিরাজগঞ্জের সিপিবি নেতা মোস্তফা নুরুল আমীন সমকালকে বলেন,
‘আমার দল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছিল।’ তাঁর দাবি, এ কারণেই ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা প্রদীপ কুমারকে হত্যা করেছে।
প্রদীপ কুমারের ছেলে সুজন কুমার ভৌমিক বলেন,
‘বাবা পেশাগত দায়িত্ব পালনে প্রেস ক্লাবে ছিলেন। কারা খুন করেছে, নিশ্চিত নই। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ কী তাদের নিজেদের লোকজনকে হত্যা করবে!’ সুজন জানান, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাই মামলা করেননি।
ঐক্য পরিষদের এ হত্যাকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন দাবি করলেও প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা সমকালকে বলেন, আটকা পড়ে নিহত হন প্রদীপ। আওয়ামী লীগ ও ছাত্র-জনতার সংঘর্ষে নারকীয় পরিস্থিতি ছিল। কেউ কারও ধর্ম দেখে মারেনি।
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন,
ঘটনার পর রায়গঞ্জ পরিদর্শন শেষে কেন্দ্রে জানিয়েছি।
যুদ্ধাপরাধের মামলার বাদী সাক্ষীরা আক্রান্ত, লাশ মেলেনি
শেখ হাসিনার পতনের পর ৫ আগস্ট ময়মনসিংহের ফুলপুরের বালিয়া ইউনিয়নের ডোমকোনা গ্রামে যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী আবদুল জলিল, সাক্ষী অজিত সরকার, রঞ্জিত সরকার, শাহেদ আলী ও তহুরা বেগমের বাড়িতে হামলা করে আসামির ছেলে এবং আত্মীয়রা।
বাদী আবদুল জলিল এখনও এলাকাছাড়া। আছেন গাজীপুরে আত্মগোপনে। সেখান থেকে তিনি সমকালকে বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সী অজিত সরকারকে খুন করা হয়েছে। আমার বাড়ি ভেঙে দিয়েছে, ৩৪ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে হামলাকারীরা।’ ২০১৬ সালে একাত্তরের শান্তি কমিটির সদস্য গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করেন। এ মামলায় আদালতে সাক্ষী দিয়েছিলেন অজিত সরকার পেনু ও তহুরা বেগম।
মামলা চলাকালে ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কারাগারে মারা যান গিয়াসউদ্দিন। আবদুল জলিল সমকালকে বলেন,
বদলা নিতে ৫ আগস্ট দুপুরে গিয়াসউদ্দিনের ছেলে লাভলুর নেতৃত্বে হামলা হয়। অজিত সরকার প্রাণে বাঁচতে প্রতিবেশী মর্তুজা মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। তাঁকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে মামলায় সাক্ষী দেওয়ায় জুতার মালা দিয়ে মহিষাউন্দা বাজারে ঘোরানো হয়। এরপর নদীর পাড়ে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় লাভলুসহ চার পাঁচজন। ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ভাটিতে লাশ ভেসে উঠলে, কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে কয়েক কিলোমিটার দূরে ফেলে দিয়ে আসে লাভলুর ভাতিজা মইজউদ্দিন।
আবদুল জলিল সমকালকে বলেন,
‘হিন্দু-মুসলমান ঘটনা নেই। মামলায় কেন সাক্ষী দিছে, এল্লিগা পিডাই মাইরালছে।’
অজিত সরকারের ছোট স্ত্রী পূর্ণিমা রানী সরকার জানান, তাঁর স্বামী ৫ আগস্ট সকালে আওয়ামী লীগ অফিসে সভায় গিয়েছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে ৩০-৪০ জন বাড়িতে হামলা করে। আসবাব, গরু, ছাগল নিয়ে যায়। ফিরে এসে জানতে পারি অজিতকে ধরে নিয়ে গেছে। আজো জানতে পারিনি তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন।
৫ আগস্টের পর দুই দফা সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ডোমকোনায় যায়। অজিতসহ বাদী ও সাক্ষীদের ওপর হামলা খবর নিলেও মামলা হয়নি। ফুলপুর থানার ওসি আবদুল হাদি বলেন, লাশ না পাওয়ায় বলা যাচ্ছে না খুন হয়েছে কিনা। ঘটনা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। যতদূর জানা গেছে, সংখ্যালঘু নিপীড়ন নয়, মামলার বিরোধ ছিল।
বাগেরহাটে জমির বিরোধে খুন
৫ আগস্ট রাতে বাগেরহাট সদরের রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় ৬৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জিকে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এ হত্যাকে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বলছে।
বাগেরহাট প্রতিনিধি নিহতের স্বজন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ৬ ডিসেম্বর কথা বলেছেন। মৃণালের স্ত্রী ৬০ বছর বসয়ী শেফালী চ্যাটার্জি এবং ৩৫ বছর বয়সী ঝুমা রানী চ্যাটার্জি বিরোধপূর্ণ জমিটি ঘুরিয়ে দেখান। তারা জানান, বছরখানেক আগে আসামিরা এই জমিতে দাঁড়িয়েই হত্যার হুমকি দিয়েছিল।
হিন্দু হওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়েছে কিনা– প্রশ্নে শেফালী চ্যাটার্জি ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন,
‘হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব না, ওই জমির জন্যই হামলা হইছে।’
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় জমি ছাড়তে হুমকি দেয় হুমায়ুন শেখ। রাতে হামলা হয়। হুমায়ুনের ভাই মিরাজ শেখ খুনের নির্দেশ দেন। ছিলেন নুরুল ইসলামও। ৯ জনের নামোল্লেখসহ মামলা হয়েছে। মৃণাল কান্তির বাড়িতে হামলা হলেও সেদিন রাখালগাছি গ্রামের আর কোনো হিন্দু বাড়ি আক্রান্ত হয়নি।
মৃণাল কান্তির সহকর্মী হাওলাদার হেমায়েত উদ্দীন ৬ ডিসেম্বরও খবর নিতে আসেন। তিনি বলেন, মৃণালের বাড়িতে কালীপূজায় হিন্দুদের চেয়ে মুসলমান অতিথিই আসত বেশি। সাম্প্রদায়িক কারণে হামলার প্রশ্নই আসে না।
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি মো. সাইদুর রহমান বলেন, দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলার কথা তারা স্বীকারও করেছে।
জমি বিরোধের জেরে খুনের ঘটনা কীভাবে সংখ্যালঘু নিপীড়নের তালিকায় এলো এ বিষয়ে ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য জানা যায়নি। ফেসবুকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সংখ্যালঘু নেতাদের কাছে শেফালী বলছেন, জমির বিরোধে খুন হয়েছে তাঁর স্বামী।
পাওনার বিরোধে খুন
গত ১৯ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের নদীতে লাশ পাওয়া যায় সুশান্ত সরকারের। আগের দিন ২৩ বছর বয়সী এ তরুণকে হত্যা করা হয়। পরিবার ও পুলিশের ভাষ্য, মোটরসাইকেলে বিক্রির পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে খুন হন সুশান্ত।
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সুশান্তের মায়ের মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন– কবির হোসেন শুক্কু, জুনায়েদ আহাম্মেদ কায়েস ও হক সুজন। তারা জবানবন্দিতে স্বীকার করেছেন, মোটরসাইকেল বিক্রির পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধে সুশান্তকে খুন করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন,
সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই।
সুশান্তের মা রুপালি সরকার বলেন,
‘সুশান্ত পুরোনো মোটরসাইকেল আশিক ও জুয়েলের কাছে বিক্রি করেছিল। আশিক টাকা দেয়নি। এ নিয়ে ঝগড়া হয়। আশিক ডেকে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে মেঘনায় লাশ ফেলে।’
সুশান্তের মা যে জুয়েলের কথা বলেছেন, তিনিও হিন্দু। তাঁর নাম জুয়েল দাস।
শ্যামসগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সামসুজ্জামান খান মাসুম বলেন,
সুশান্ত যাদের সঙ্গে চলত, তাদের মধ্যে বিরোধেই এই খুন হয়েছে। শ্যামগ্রাম গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেনি। লেনদেন নিয়ে এ খুন হয়েছে।
হত্যার কারণ জানতে চায় স্বপনের পরিবার
৮ আগস্ট রাতে খুন হন খুলনার পাইকগাছার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য স্বপন বিশ্বাস। মামলা হলেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি, খুনের কারণও উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ৭ ডিসেম্বর দেলুটি গ্রামে যান। স্বপন বিশ্বাসের স্ত্রী মীরা বিশ্বাস জানান, সরকার পতনের পর সবাই আতঙ্কে ছিলেন। স্বপন গ্রামে পাহারা বসান। ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় রাস্তার পাশের দোকানে বসেছিলেন। ফোন এলে হাটের দিকে যান। রাত সাড়ে ১০টার খবর আসে হাটের পাশে স্বপন বিশ্বাসকে হত্যা করা হয়েছে।
মীরা বিশ্বাস বলেন,
‘কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। কী কারণে প্রাণ দিতে হলো, কারা খুনি, জানতি পারলি মনরে বুঝ দিতি পারতাম।’
স্থানীয়রা জানান, ৭ আগস্ট দেলুটি হাটের কয়েকটি দোকানে তালা দেয় কয়েক দখলদার। স্বপন বিশ্বাস উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকের কাছে অভিযোগ করেন। এনামুল এসে তালা খুলে দেন। এ ঘটনার পরের দিন স্বপন খুন হন। দেলুটি গ্রামের বিশ্বজিৎ সরকার জানান, চিংড়ি ঘের নিয়ে দ্বন্দ্বে গ্রামের অনেকে আতঙ্কে ছিলেন। ঘেরের দ্বন্দ্বও মেটাতে চেয়েছিলেন স্বপন।
পাইকগাছা থানার ওসি মো. উজ্জল হোসেন বলেন,
মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে।
অতিরঞ্জিত বর্ণনা
ঐক্য পরিষদের প্রতিবেদনের ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় ঢাকা বিভাগের ৫৬ নম্বর ঘটনা হিসেবে প্রেস নারায়ণগঞ্জ নামের অনলাইনের বরাতে লেখা হয়েছে, ‘নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকার চাঁদার দাবিতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং মারধরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হোসিয়ারি ব্যবসায়ী টিংকু রঞ্জন সাহা মৃত্যুবরণ করেছে।’
চাঁদা চাওয়ার সত্যতা পাওয়া গেলেও স্থানীয়দের ভাষ্যে ধারালো অস্ত্রের আঘাত এবং মারধরের প্রমাণ মেলেনি। তারা জানান, ৭ আগস্ট টিংকু সাহার মালিকানাধীন বেবি টেক্সটাইলে গিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে শাহ আলম ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত রনির নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন। হিন্দু ও মুসলমান সবার কাছেই চাঁদা চাওয়া হয়।
ছোট ভাই রিংকু রঞ্জন সাহা জানান, এতে ভয়ে টিংকু সাহা হার্ট অ্যাটাক করেন। ১১ আগস্ট ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি মারা যান।
টিংকু সাহার বৌদি পাপড়ি জানান, কারা হুমকি দিয়েছিল, তা বলে যেতে পারেননি টিংকু।
টিংকুর মৃত্যুর পর ১১ আগস্ট প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় কাউন্সিলর অসিত বরুণ বিশ্বাস। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বদু বক্তব্য দিয়েছিলেন। অন্য মুসলিম ব্যবসায়ীরাও বক্তব্য দেন। হিন্দু ও মুসলাম দুই সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরাই তাদের ওপর চাঁদাবাজির অভিযোগ করে বিচার চান।
তবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল বলেন,
ব্যবসায়ীদের কথায় জেনেছি, চাঁদাবাজদের ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে টিংকুর মৃত্যু হয়।
সূত্র: সমকাল
--------
সমকালে প্রকাশিত এই রিপোর্ট নিয়ে RD Gupta বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি লিখেছেন-
This report in the Daily Samakal examines the communal nature of incidents reported between August 5 and August 20, based on data provided by the Bangladesh Hindu Buddhist Christian Unity Council (BHBCUC). It attempts to classify the sampled incidents as either political or communal, claiming that 46% of the 296 randomly sampled cases were communal in nature.
The presentation of this report contains several logical inconsistencies and problematic assumptions that require critical examination. Below are the identified fallacies:
1. Misrepresentation of Numbers: The report found that 46% (135 out of 296 sampled cases) of the incidents were communal in nature. Extrapolating this percentage to the total 2,010 reported incidents yields approximately 924 communal cases between August 5 and August 20. Suggesting this number is small is misleading, as it disregards the severity and implications of such a high number of communal incidents over a short time period. Furthermore, incidents such as arson attacks in North Bengal, vandalism of temples and idols before and after Durga Puja, the attack on Utsab Mandal, the torture and murder of Hridoy Rabidas, and the recent attack in Sunamganj have not been included in this analysis, leading to an underreporting of the actual extent of communal violence.
2. False Dichotomy Between Political and Communal Violence: The report appears to categorize incidents involving individuals affiliated with political parties as purely political violence, disregarding the communal undertones. This oversimplification is problematic because political affiliation does not negate the possibility of communal motivations behind an attack. For instance, targeting individuals belonging to minority communities who are also political activists could reflect both political and communal biases.
3. Minimization Through Framing: Attempts to frame the attacks as politically motivated rather than communal reflect a narrative that downplays the reality of communal violence. This logical fallacy similar to the argument made by some ultra-right-wing groups in the United States regarding George Floyd's murder as merely "police brutality" rather than racially motivated violence undermines the recognition of systemic biases and human rights violations.
4. Failure to Contextualize: The analysis overlooks the broader context of sustained violence and intimidation against minorities, such as the arson spree in North Bengal and attacks on religious sites, painting an incomplete picture. These omissions create a biased representation that minimizes the scale and nature of the attacks.
This report's framing and selective analysis dilute the reality of communal violence by overemphasizing political motivations, disregarding symbolic targets, and excluding key incidents. This flawed narrative needs to be critically addressed to ensure an accurate representation of the events and the broader systemic issues at play. Rd gupta
0 মন্তব্যসমূহ