গণবাণী ডট কম, প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার (রঙ্গারটেক) এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের জমির মালিকানা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে একটি মন্দিরে ভাঙ্গচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার পর সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের ভক্তরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে স্বানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সাথে আলোচনা করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিরাপত্তা ও মন্দির সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলে তারা শান্ত হয়।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে লেবু মিয়া কন্ডাক্টর নামের এক ব্যাক্তি তার লোকজন নিয়ে উপজেলার সফিপুর পশ্চিম পাড়া শ্মশান কালী মন্দিরে সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা মন্দিরের ভেতরের বিভিন্ন অংশ ভাঙচুর করে। এসময় নাগ মন্দিরটির খুঁটি ভেঙে গেলে মন্দিরের চাল পড়ে যায়। ঘটনার পরপরই স্থানীয় সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পরে স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে লেবু কন্ট্রাক্টর এবং তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় স্থানীয়রা মুরাদ হোসেন নামের একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে তাকে পুলিশের নিসকট সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে, মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে সনাতন ধর্বামলম্বী সম্প্রদায়ের লোকজন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা মন্দির রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রী ও পথচারীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। পরে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং থানা পুলিশ এসে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনা করেন। তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও মন্দির সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলে তারা শান্ত হয়। পরে যান চলাচল পুনরায় স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন আগে জনৈক রঙ্গলাল বাবু তার পৈতৃক সম্পত্তি সফিপুর পশ্চিম পাড়া শ্মশান কালী মন্দিরের নামে দান করে দেন। পরে সেখানে দূর্গা মন্দির, নাগ মন্দির, কামরুকামাক্ষা মন্দির এবং শ্মশান মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার শফিপুরের ইনতাজ মিয়ার ছেলে লেবু মিয়া (৪৭) অবৈধ জাল দলিল সৃজন করে চার শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে আসছিলেন। আদালতের রায় তার বিপক্ষে গেলেও তিনি জমির দখল নিতে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মন্দির থাকায় জমিতে দখলে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে লেবু মিয়া শুক্রবার সকালে ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী ভাড়া করে ওই জমি দখলে যায়। এসময়ে হামলা চালিয়ে নাটমন্দির ভাংচুর করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বেরিয়ে এসে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপরও হামলা চালায়। এতে ১০-১২ জন আহত হয়েছে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। এসময়ে মুরাদ হোসেন নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়।
সফিপুর সার্বজনিন শ্মসানঘাট ও রাধাগবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দিরের যুগ্ম আহ্বায়ক হরিপদ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে এখানে মন্দির রয়েছে। মন্দিরের জায়গার একটি ভুয়া দলিল তৈরি করে মন্দিরের জমি দখল করার পায়তারা করে আসছে। বিগত সময়ে তারা দখল করতে গিয়ে ফিরে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় লেবু মিয়া লোকজন নিয়ে এসে মন্দিরটি ভাংচুর করে।
সফিপুর সার্বজনিন শ্মসানঘাট ও রাধাগবিন্দ লোকনাথ নাট মন্দিরের আহ্বায়ক প্রকৌশলী কৌশিক অধিকারী সাংবাদিকদের বলেন, লেবু মিয়া নামের এক ব্যাক্তি ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের নাট মন্দির ভাংচুর করে। এসময়ে বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে আহত করে।
এব্যাপারে কথা বলতে লেবু মিয়ার মোবাইল নম্বরে একাধীকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, ঘটনা জানার সাথে সাথে আমি পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জানিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব, সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই বোনদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও মন্দির সংস্কারের সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) নাজমুস সাকিব খান বলেন, অনাকাংখিত ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে জেলার নতুন পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ স্যারসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্ত পুজারীগণের সাথে আমরা কথা বলেছি। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরো জানান, মন্দিরে হামলার ঘটনায় মন্দির কমিটির আহ্বায়ক কৌশিক অধিকারী বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূল হোতা ও পলাতক মূল আসামী লেবু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা মো: মুরাদ হোসেন নামের একজনকে আগেই আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছিল। মুরাদ হোসেন নাটোর জেলার লালপুর থানার আব্দুলপুরের ফরিদ হোসেন মোল্লার ছেলে। তিনি স্থানীয় সোহেলের বাড়ীতে ভাড়া থাকেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সূত্র: গণবাণী
========
দেখুন
1 মন্তব্যসমূহ
মন্দির ভাঙচুর করা পাপিষ্ট দুজন ধরা পড়া পরবর্তী ভিডিও দেখুন এখানে
উত্তরমুছুন