সম্প্রীতির উদারতা বরাবরই হিন্দুরা দেখিয়ে আসছে। দেখিয়ে আসছে বলেই আজ সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। যদি হার না মানা তেজ থাকতো তবে এই হিংসাত্মক পৃথিবীতে সংখ্যাগুরু হিসাবেই টিকে থাকতো। আযানের সময় বা নামাজের সময় এই দেশের প্রায় কোনো পূজা মণ্ডপে বাদ্যযন্ত্র এবং মাইকের ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু তবুও ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমাদের নির্দেশ করছে এগুলো নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য। এই নির্দেশনাই আমাদের জন্য অপমানজনক। নির্দেশ তখনই করতে হয় যখন কেউ অবাধ্য হয়। বাংলাদেশের হিন্দুরা নিশ্চয়ই এতটা অবাধ্য হয়নি। আমি এখনো হিন্দুদের বাসাবাড়িতে, রাস্তাঘাটের দোকানে দেখি যখন আযান হয় তখন শব্দ কমিয়ে দেওয়া হয় কিংবা বন্ধ রাখা হয়। এটা কিন্তু কেউ নির্দেশ করে করায়নি। ধর্মনিরপেক্ষ, স্বাধীন কোনো দেশে এটা জোর করে কেউ চাপিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তবুও হিন্দুরা মুসলিমদের প্রতি, তাদের উপাসনার প্রতি সম্মান রেখে শব্দ কমিয়ে বা বন্ধ করে রাখে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘন্টা এই নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। আমি জানি, হিন্দুরা অবশ্যই তা মানবে এবং কেউই এর বিরোধিতা করবে না। কিন্তু এমনটা তো আমরা বলতেই পারি যে, দুর্গাপূজার ৪ দিন (সপ্তমী-দশমী) মসজিদের মাইক নিয়ন্ত্রণ করা হোক, ওয়াজ-মাওফিল বন্ধ করা হোক। সারা বছর হিন্দুরা সেক্রিফাইস করতে পারলে তারা কেন ৪ দিন পারবে না? এমন তো নয় যে, ইসলাম ধর্মে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে আযান দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বলে রাখি, পূজায় বাধ্যযন্ত্রের ব্যবহার অপরিহার্য, পূজার সময় বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। সুতরাং মুসলিমদের প্রতি এই নির্দেশনাও তো আসতে পারে! যদি আমার যুক্তিতে ত্রুটি থাকে তাহলে অবশ্যই বলতে পারেন।
আরো একটা বিষয়, রোজার একমাস ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে সবাইকে ডাকাডাকি করতে হবে বা গজল, হামদ, নাথ ইত্যাদি গাইতে হবে, এই নির্দেশনাও ইসলাম ধর্মে নেই। কিন্তু তবুও হিন্দুরা রোজার মাসে এসব সহ্য করে। আজ পর্যন্ত কেউ বিরোধীতা করেনি। হিন্দুরা সহিষ্ণু বলেই এসব সহ্য করে। আমরা কখনোই এসব ধর্মীয় ইস্যুকে হেয় করিনি। কিন্তু এবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন যেটা করেছে সেটা স্রেফ হিন্দুদের জন্য অপমান। প্রথমত, তারা পূজা-বিষয়ক কোনো ব্যপারে নির্দেশ করার কেউ না। দ্বিতীয়ত, এটা নির্দেশ করার বিষয় না, খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট মন্দির কমিটিকে অনুরোধ করতে পারে মাত্র।
-তুষার কান্তি সরকার
0 মন্তব্যসমূহ