চিন্ময়ের জামিন শুনানি পেছাল এক মাস | চিন্ময়ের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না, ক্ষুব্ধ সনাতনী জাগরণ জোট | চিন্ময়ের জামিন শুনানি পেছাল এক মাস

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী
 

 চট্টগ্রাম ব্যুরো,  প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৩৮ | আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৭:০২



রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানি এক মাস পিছিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ২ জানুয়ারি জামিন শুনানির দিন ধার্য করেছেন।


মঙ্গলবার শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ আদেশ দেন। এ সময় চিন্ময় দাসের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। তাঁকেও আদালতে হাজির করা হয়নি। তবে কোনো আইনজীবীকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট।


এদিকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাসহ আদালতে সংঘটিত ঘটনায় করা সব মামলায় চিন্ময় দাসকে আসামি করার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা।


গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ইসকনের সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন বিএনপি নেতা ফিরোজ খান।


চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় দাসের জামিন শুনানি ছিল। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি। রাষ্ট্রপক্ষ জামিন শুনানির জন্য আগামী ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।


গত ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তবে কারাগারে নিতে চাইলে তাঁর অনুসারীরা বাধা দেয়। এতে তাদের সঙ্গে পুলিশ ও আইনজীবীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবীকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৭ নভেম্বর চিন্ময় দাসের জামিন শুনানির দিন ধার্য থাকলেও সাইফুল হত্যাকাণ্ডের জেরে জামিন শুনানি হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় জামিন শুনানি এক মাস পিছিয়েছে।


চিন্ময় দাসের পক্ষে আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 

‘কোনো আইনজীবী আমাদের কিছু জানাননি। কাউকে ভয় কিংবা হুমকি দেওয়ার তথ্যও নেই। কেন তারা অংশ নেননি, জানি না।’


চিন্ময় দাসের আইনজীবী শুভাশিস শর্মার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, আইনজীবীদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি তিনি। তবে বিবৃতিতে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট দাবি করেছে, চিন্ময়  দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবীকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পক্ষে থাকা ৭০ আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। বিবৃতিতে অবিলম্বে চিন্ময়কে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তা না হলে সারাদেশে সনাতনীরা রাজপথে নামতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।


জানা যায়, জামিন শুনানি নিয়ে গতকাল সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আদালতপাড়ায় কড়া নিরাপত্তা ছিল। আদালতের সব প্রবেশমুখে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করা হয়। আইনজীবী ও বিচারকের গাড়ি ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। জেরার মুখে পড়েন বিচারপ্রার্থীরাও। পরিচয় ও কী কাজে এসেছেন, তা নিশ্চিত হয়ে আদালতে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। 


গত ২৭ নভেম্বর আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সাইফুলের বাবার করা হত্যা মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।


জামিন শুনানির আগে আদালত এলাকায় বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া সব মামলায় চিন্ময় দাসকে আসামি করার দাবি জানান তারা। এ সময় ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলা হয়। আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী একই দাবি করেছেন।   


রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। পরে ২৫ অক্টোবর লালদীঘি মোড়ে সমাবেশের দিন ওই পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করা হয়, যা রাষ্ট্রের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল। জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় পতাকা তুলে সংশ্লিষ্টরা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তারা রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে লিপ্ত। 


সূত্র: সমকাল

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ