![]() |
চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে কি ঘটেছে? - সুষুপ্ত পাঠক |
ওসমান নামের এক দোকানদার ফেইসবুকে ইসকনকে সন্ত্রাসী জঙ্গি হিসেবে পোস্ট করে। এতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে দোকানদারের কাছে কৈফিয়ত চায়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে এলাকা। সেনাবাহিনী পুলিশ এসে ওসমানকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ঘটনার এইটুকু ইসলাম অবমাননার ঘটনার সঙ্গে মিল ছিল। কিন্তু এরপরই কাহিনী ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে যায়। ইসলাম অবমানরা ঘটনায় দেখা যায় কোন হিন্দু যুবককে তৌহদী জনতা উত্তম-মাধ্যম দেয় তখন পুলিশ-সেনাবাহিনী এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাজতে রাখে আর ধর্মঅবমানরার একটা মামলা দেয় তার নামে। সেই খুশিতে তৌহদী জনতা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়। চট্টগ্রামে ভিন্ন হলো কাহিনীর।
মো. ওসমানকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় পুলিশ-সেনাবাহিনী। ওসমানের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি পুলিশ তরফ থেকে। তারপরই পুলিশ-সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয় হাজারী গলির হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। কাহিনী এই রকম উল্টো যাবার কারণ দেশটা মুসলমানদের সেই জন্য? আজকে ইসকনকে কেউ সন্ত্রাসী সংগঠন বললে হিন্দুদের গায়ে লাগতেই পারে। কেউ যদি বলে হাটহাজারী মাদ্রাসা সন্ত্রাসী জঙ্গি- এরকম লিখে পোস্ট করার পর কি ঘটতো? হিন্দুরা প্রতিবাদ করতে শিখছে বলেই কি এই অভিযান?
ইসকন কি রমনা বটমূলে বোমা হামলা করেছে? মতিঝিল দখল করে ১৩ দফা দিয়েছে? হিন্দু রাষ্ট্র কায়েম করার কথা বলে জিহাদ করেছে? অন্য ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেছে কখনো? ধর্ম সমালোচনাকারীদের উপর কখনো হামলা করেছে? তাহলে ইসকন কিভাবে জঙ্গি দল হয়?
উপমাহদেশের যতগুলো ইসলামিক মৌলবাদী ও জঙ্গি দল আছে তাদের সবগুলো দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারী। আপনি ইসকন থেকে কি এমন কোন নজির দেখাতে পারবেন? দেওবন্দকে জঙ্গির ফ্যাক্টরি বলতে পারেন। আফগানিস্থানে বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে তারাও দেওবন্দ অনুসারী। হাটহাজারী মাদ্রাসা হচ্ছে হেফাজত ইসলাম নামের উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের জন্মদাতা। ইসকন কি সেরকম কোন উগ্র সংগঠনের জন্ম দিয়েছে? ধর্মীয় সংগঠন হিসেবে ইসকন অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের মতই ধর্মান্ধতা প্রচার করে। কিন্তু জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় রাজনীতি তো তারা প্রচার করে না। ইসকন তাহলে মোল্লাদের বিষনজরে পড়েছে কেন?
কারণ হচ্ছে, ইসকন যেহেতু হিন্দু মিশনারী মানে হিন্দু ধর্মান্তর কার্যক্রম চালায় ফলে তাদের কাছে মোল্লাদের মজগধোলাই করা ধর্মীয় কুযুক্তির কাউন্টার আছে। ইসলাম একশোভাগ মিশনারী ধর্ম। সে এরকম একটা প্রতিদ্বন্দ্বী আরেকটা মিশনারীকে সহ্য করতে পারে না। ইসকন ভারতীয় আধ্যাত্মিকবাদ দিয়ে ইউরোপের হতাশ নারী-পুরুষদের আকৃষ্ট করে হিন্দু বানানোর মিশনে বেশ সফল। সেদিক থেকে ইসলামী মিশন এক সময় সফল হলেও ৯/১১ পর ইসলামের মুখোশ খুলে পড়ে। জাকির নায়েকের লেকচার ছড়িয়ে পড়ে যেখানে সে বলতে থাকে একজন প্রকৃত মুসলমানের সন্ত্রাসী না হয়ে থাকা সম্ভব নয়। ইসকনের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কও ইসলামী মিশনারীদের রোষের একটা কারণ।
এই ধর্মান্ধ মিশানারীদের কাউকে ভালো কাউকে মন্দ বলার উদ্দেশ্য আমার নেই। আমি কেবল বলতে চাইছি বাংলাদেশে অতিতে ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাতের’ ঘটনায় যা ঘটেছে তার উল্টোটা কেন ঘটল? দ্বিতীয়ত মুড়ি মুড়কির এক দর আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না। ইসকনকে আপনি ধর্মান্ধ বলুন আমি পাশে আছি, কিন্তু তাকে হেফাজত ইসলাম কিংবা জেএমবির পাশে বসিয়ে জাস্টিফাই করবেন সেরকম তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমি কথা বলবোই।
©সুষুপ্ত পাঠক
সূত্র: ফেসবুক
0 মন্তব্যসমূহ