ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্ব সলিমুল্লাহ খানদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে - নারায়ণ দেবনাথ

মাদ্রাসার ছাত্ররা কেন সাধারণ ছাত্রদের তুলনায় অধিক সংখ্যায়  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তী হতে পারছে তার একটা নমুনা সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের একটি দাখিল মাদ্রাসায় ধরা পড়েছে। সেখানে মাদ্রাসার শিক্ষকরাই ছাত্রছাত্রীদের অবাধে নকল সরবরাহ করতে দেখা যাচ্ছে। এটি একটি পরীক্ষা কেন্দ্র না মাছের বাজার বুঝা যাচ্ছিল না।


ড: সলিমুল্লাহ খান চ্যালেঞ্জ করে বলেছিলেন আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫জন অধ্যাপকও পাবেন না যারা মাদ্রাসার শিক্ষকদের তুলনায় মেধাবী। সলিমুল্লাহ খাঁন ঠিকই বলেছিলেন। কারণ মাদ্রাসার ছাত্ররা যাতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দখল নিতে পারে তারজন্য যে পরিকল্পনা করে এসব করা হচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিনত হয়েছে এটি তার একটি নমুনা। 


সলিমুল্লাহ খাঁনদের মাদ্রাসা শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার পিছনে রয়েছে এক গভীর চক্রান্ত। একটা জাতিকে বশ্যতা স্বীকারের প্রধান উপায় হলো শিক্ষাক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন। সেটাই বাংলাদেশে হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে মাদ্রাসা শিক্ষা মানব সভ্যতার কল্যানে কোন অবদান রাখতে পেরেছে এমন নজির নেই। তারপরও এই শিক্ষাকে সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে জাতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিয়ে মৌলবাদীরা বাংলাদেশকে জান্নাতের(স্বর্গ) সিড়ি বানাতে চায়।


সলিমুল্লাহ খানরা কিছুতেই জাতিবিদ্বেষ থেকে সরে আসতে চান না। ঐতিহ্যগত ভাবেই এই উপমহাদেশে হিন্দুরা শিক্ষা সংস্কৃতি চিকিৎসা সাহিত্য প্রযুক্তি সহ অসংখ্য বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। এই শ্রেষ্ঠত্ব সবসময় তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তাই তারা এমন একটি মাধ্যম বেছে নিয়েছেন যার আদ্যপান্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে ভরপুর। মাদ্রাসা শিক্ষাটাই যে জাতিবিদ্বেষের চারণভূমি সারা পৃথিবী সেটা জানে। যার জন্য মুসলিম দেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও এই শিক্ষার কোন প্রতিষ্ঠান নেই।


ইসলামের স্বর্ণযুগের জ্ঞানচর্চা কোরান থেকে আসেনি। এসেছিল রোমান-গ্রীক ভারতীয় ও চাইনিজদের কাছ থেকে। গায়েবি ঐশী বার্তায় কোন জ্ঞান এই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়নি। জ্ঞান আহরণে সাধনা করতে হয়। মাদ্রাসা থেকে কোন শিল্প তৈরি হয়না উদ্ভাবন আসেনা কারণ উদ্ভাবন আসতে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পরিকাঠামো দরকার তা মাদ্রাসায় নেই। অবারিত প্রশ্ন করার সংস্কৃতি মাদ্রাসায় নেই ফলে মেধা বা জ্ঞানের অনুশীলন সেখানে অসম্ভব।


গত ৫০০বছরে মাদ্রাসা থেকে কতোজন বিশ্বমানের পণ্ডিত বের হয়েছেন? কেউ জানেন? গত ২০বছরে মাদ্রাসার গবেষণাগার থেকে কয়টা আবিষ্কার হয়েছে? কেউ একটি আবিষ্কারের নাম বলতে পারবেন? মাদ্রাসা থেকে পাশ করে কি কেউ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন? মুসলিম বিশ্ব থেকে ভালো মানের বিজ্ঞানী তৈরি হয়না কেন? কারণ আল্লাহর ইচ্ছায় সব হয়, এই দুনিয়া দুদিনের। দুনিয়াদারী অর্থনীতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি এসবই অলীক বিষয় হিসাবে মাদ্রাসায় পড়ানো হয়। তাই মুসলিম বিশ্ব পিছিয়ে।

 

দর্শন গনিত জ্যোতির্বিজ্ঞান চিকিৎসা এসবের চর্চা ইসলাম আসার বহুপূর্ব থেকেই ইউরোপে ছিল। পিথাগোরাস আর্কিমিডিস অ্যারিস্টটলের নাম কোরানের কোথাও পাওয়া যাবেনা। গুপ্তযুগে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞান, ধর্ম এবং দর্শনের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের সাফল্যকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। আর্যভট্ট গণিত শাস্ত্রের পথিকৃৎ। শূন্যের আবিষ্কার, ত্রিকোণমিতি, জ্যোতিষশাস্ত্রে বরাহমিহির, চিকিৎসা শাস্ত্রে চরক সংহিতা, সুশ্রুত সংহিতা, রসায়নবিদ নাগার্জুন বৈদিক যুগে এদের আবিষ্কার আধুনিক বিশ্বে আজও সমান সমাদৃত।


নালন্দার রাজা কুমার গুপ্তের সময় বৌদ্ধ ভিক্ষুকরা মগধে ৪২৭ খ্রিস্টাব্দে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চিন তিব্বত গ্রিস কোরিয়া তুরস্ক পার্সিয়া থেকে শিক্ষার্থীরা আসত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। মোট ৬৮টি বিষয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হত। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিল ইসলামের সেবক ইখতিয়ারউদ্দিন বখতিয়ার খিলজি। সেই মাদ্রাসা শিক্ষায় পড়ানো হয় কিভাবে কাফেরদের অস্তিত্ব বিনাসে শানিত তলোয়ার গর্জে উঠেছিল। যে শিক্ষা হত্যাকে সমর্থন করে একটি সম্ভ্রান্ত জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্তির ইতিহাস ঘটা করে পড়ানো হয় সে ইতিহাস সভ্যদুনিয়ায় অচল।


বিজ্ঞান  বাস্তবতার নিরিখে বৈজ্ঞানিক সাধনা করে আবিষ্কার করতে হয় ঐশীক কোন গায়েবি কথার উপর নির্ভর করে নয়। মাদ্রাসায় কর্মকুশলতা নয় ঈশ্বরের প্রতি ভয় বাড়ানোর কারখানা মাত্র। 


ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাবে তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কি ইসলামের পণ্ডিতরা শুনেছেন? খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে তক্ষশীলা স্থাপিত হয়েছিল। চাণক্য অর্থনীতিবিদ,পাণিনি ব্যাকারণবিদ, চরক চিকিৎসাবিদ, জীবক শৈল্য চিকিৎসক তারা সবাই তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি। তাদের নাম ইসলামের ইতিহাসে পড়ানো হয়না কিন্তু সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের আবিষ্কার নিয়ে পাঠদান হয়। এসব ইতিহাস সলিমুল্লা খাঁনদের শয়নে স্বপনে তাড়া করে বেড়ায়। তাই তাদের কথায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন সাম্প্রদায়িক, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হোক চাননি এসব কথা প্রচার করে সলিমুল্লা খাঁনরা বাঙালিদের মননে আঘাত করতে চান।


সূত্র

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ