![]() |
আটককৃত শাহ আলম |
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫৭, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পূজা মণ্ডপে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন ব্যাগে নিয়ে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পূজা উদযাপন পরিষদ। পরবর্তীতে অভিযুক্তকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও তদন্ত না করেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই মণ্ডপের পূজা উদযাপন পরিষদ।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সোমপাড়া এলাকায় শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মন্দিরের পূজামণ্ডপে এই ঘটনা ঘটে।
সোমপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ কান্তি নাথ বলেন,
মণ্ডপে প্রবেশ করে দীর্ঘক্ষণ সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির সময় তাকে আমাদের সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে আটক করে ব্যাগে কী কী আছে তা দেখি। তখন তার ব্যাগে তিনটি কোরআন শরীফ ও কিছু জিহাদি বই পাই আমরা। সেগুলোসহ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাকে হাটহাজারী থানার উপ-পরিদর্শক জসীমের হাতে তুলে দিয়েছি।
আটকের পর পুলিশের হাতে তুলে দিলেও পরবর্তীতে অভিযুক্তের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর না নিয়ে ‘পাগল’ বলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
গোবিন্দ কান্তি নাথ বলেন,
আটকের পর যখন নাম জিজ্ঞেস করেছি তখন চুপ ছিল। বলতেছে ও পাগল। যখন ধরা খায়, তখন সবাই এমন ‘পাগল’ হয়। আমরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। আর পুলিশ তদন্ত না করে, আমাদের কোনো জনপ্রতিনিধিকে না জানিয়ে তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
সোমবাড়ি পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক জুটন নন্দী জানান,
রাত ৮টার দিকে মণ্ডপে সন্ধ্যারতি চলছিল। এসময় শরীরে সাদা কাপড় জড়ানো অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে একটি ব্যাগ নিয়ে দর্শনার্থীদের সারিতে গিয়ে বসেন। তার আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এবং এলাকার কেউ তাকে চিনতে না পারায় কৌতুহলবশত মণ্ডপের কয়েকজন তার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসেন। তার চেয়ারের পাশে মাটিতে ব্যাগটি রেখেছিল। ওপরের অংশ খোলা ছিল। পূজামণ্ডপের যুবকদের মধ্যে একজন ব্যাগের ভেতরে কোরআন শরিফের মতো কিছু দেখতে পান। তখন তিনি বিষয়টি মণ্ডপের কর্মকর্তাদের জানান।
জুটন নন্দী বলেন,
আমরা লোকটির কাছে ব্যাগ চাইলে সে দিতে না চাওয়ায় আমরা কেড়ে নিই। তখন সে অসংলগ্ন আচরণ করতে থাকে। ব্যাগের ভেতরে আমরা একটি কোরআন শরিফ ও কয়েকটি জ্বীন-হাজিরের বইপত্র পাই। মণ্ডপে পুলিশ ছিল। তারা এসে আমাদের কাছ থেকে লোকটিকে নিয়ে থানার দিকে চলে যান। আমাদের ধারণা, কুমিল্লার মতো মণ্ডপের মধ্যে কোরআন শরিফ রেখে অপ্রীতিকর কোন পরিস্থিতি তৈরির জন্য এসেছিল ওই ব্যক্তি।
হাটহাজারি থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন,
শাহ আলমের কথাবার্তায় অসংলগ্নতা আছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। তার পরিবারের সাথেও কথা বলেছি।
পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে শাহ আলমের চিকিৎসাপত্র দেয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন,
গত বছরের ১৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে চিকিৎসা নিয়েছিল। সেখানে তার মানসিক এবং কথা বলার সমস্যার কথা লেখা আছে।
ওসি মনিরুজ্জামান বলছেন,
ঘোড়াশাল থেকে চট্টগ্রামে এসে ওই যুবক বিভিন্ন মাজার, মসজিদ, মন্দিরে ঘুরে বেড়ান এবং সেখানেই থাকেন বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
প্রথমে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুনরায় আটক দেখানো হয়েছে। সব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সে কী কারণে সেখানে বসেছিল, তার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে ছিল কি না সবকিছুই বিবেচনায় নিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি নিজেকে মাইজভাণ্ডার শরিফের ভক্ত হিসেবে পরিচয় দেন। রাত ১১টার দিকে পুলিশ থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে রাত ২টার দিকে তাকে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার শরিফ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
বিবার্তা/লিমন
সূত্র: বিবার্তা২৪.নেট
0 মন্তব্যসমূহ